কলকাতা, 27 জুলাই : দিল্লি সফরে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । 21 জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, এবার তাঁর দিল্লি যাওয়ার উদ্দেশ্য । বিজেপি বিরোধী শক্তিকে এক জায়গায় করে 24’র লোকসভায় মোদি সরকারকে হঠানোই এখন পাখির চোখ করছে তৃণমূল । মনে করা হচ্ছিল, বিরোধী জোটের ভিত গঠনের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি এনসিপি'র প্রধান শরদ পাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে ।
কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লিতে ৷ তখন শরদ পাওয়ার কোথায় ? তাঁর সঙ্গে দিল্লির 6 নম্বর জনপথের বাড়িতে বৈঠকের কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । সেখানে বৈঠকের কথা থাকলেও জানা যাচ্ছে দিল্লিতেই নেই এই প্রবীণ এনসিপি নেতা । শুধু তাই নয়, আগামী দু’দিন তাঁর দিল্লিতে থাকার সম্ভাবনা কম । আর এর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পর কি বিরোধী জোটের প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন শরদ পাওয়ার । আর যদি তা না হবে, তাহলে বিরোধী জোট গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে কেন তিনি দিল্লিতে নেই ?
এনসিপি সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে দিল্লি ছেড়ে মুম্বই গিয়েছেন শরদ পাওয়ার । আজ দুপুর একটায় মহারাষ্ট্রের বন্যা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তিনি ৷ এনসিপি’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মহারাষ্ট্রের ভয়াবহ বন্যায় যখন মানুষ সংকটে রয়েছেন, তখন তাঁর কাছে মুম্বই ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না । তবে, তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলে এবং প্রফুল্ল প্যাটেল দু‘জনেই এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন । শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক না হলেও, তাঁর বার্তা নিয়ে সুপ্রিয়া সুলে এবং প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে কোনও বৈঠকের সম্ভাবনা আছে বলে জানা যাচ্ছে না । ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরদ পাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷
যদিও, আজ মুম্বই এর সাংবাদিক বৈঠকে শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন, আগামিকাল অর্থাৎ, 28 জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হলেও হতে পারে ৷ এদিন পাওয়ার জানিয়েছেন, গতকাল তৃণমূল সুপ্রিমো দিল্লি পৌঁছে তাঁকে ফোন করেছিলেন ৷ তখনই মমতা তাঁর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন বলে জানান শরদ পাওয়ার ৷ সেই প্রসঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, হয়তো তিনি আগামিকাল দিল্লি যেতে পারেন মমতার সঙ্গে বৈঠকের জন্য ৷ তবে, এ নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেননি এনসিপি প্রধান ৷
আর সেখানেই বিজেপি বিরোধী জোটে পাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে জল্পনা আরও জোরালো হচ্ছে ৷ যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মনে করছে, এখনই শরদ পাওয়ারের না থাকা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা বোধহয় ঠিক হবে না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি যাওয়ার আগে, শরদ পাওয়ার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে এবং অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ৷ তখন মনে করা হচ্ছিল শরদ পাওয়ার এই জোটের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেন । তবে, দিল্লিতে এই সময়ে শরদ পাওয়ারের না থাকাটা একটা বড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে বিরোধী জোটে তাঁর ভূমিকা নিয়ে ।
আরও পড়ুন :Mamata Banerjee : দু’বার মহাজোট গড়তে ব্যর্থ হওয়া মমতা কি এবার সফল হবেন ?
যে সূচি এদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে এসেছে, তাতে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক রয়েছে ৷ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক রয়েছে তাঁর ৷ অথচ শরদ পাওয়ার দিল্লিতে না থাকায়, তাঁর সঙ্গে বৈঠক করা যাচ্ছে না ৷ এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা । অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন শরদ পাওয়ার কি সচেতনভাবেই বিজেপি বিরোধী জোট থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছেন ? আর সেই কারণেই কি তিনি তৃণমূল নেত্রীর মুখোমুখি হতে চাইছেন না ? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক এবং যে কথা শোনা যাচ্ছে শরদ পাওয়ার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ৷ আর সেই কারণেই কি তিনি বিজেপিকে চটাতে চাইছেন না ? এরকম অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে । তবে, দিনের শেষে খবর এটাই যে, মমতার সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ আজ এবং কাল এই দু’দিনের মধ্যে হচ্ছে না শরদ পাওয়ারের । এই ঘটনা বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা কি না তা সময়ই বলবে ৷