শিবমোগা (কর্ণাটক), 13 জানুয়ারি: 16 বছর পর প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল থেকে বদলি হচ্ছেন শিক্ষক ৷ চাঁদা তুলে বাইক উপহার দিয়ে আদরের শিক্ষককে হাসিমুখে পরবর্তী জীবনের অভিনন্দন জানাল পড়ুয়া থেকে গ্রামাবাসীরা ৷ ঘটনাটি কর্ণাটকের শিবগোমা জেলার ভালুর গ্রামের ৷
সাগর তালুকের কেন্দ্র থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম ভালুর । এখানে 2007 সালে শিক্ষকতা করতে আসেন সন্তোষ কাঞ্চন ৷ এই গ্রাম থেকেই শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন তিনি । তাঁর কাজের মাধ্যমে সকল শিক্ষকদের মধ্যে সন্তোষ ছাত্র এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন । কারণ তিনি এখানকার শিশুদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিলেন । শুধু স্কুল চলাকালীন নয়, দিনরাত শিশুদের পড়াতেন তিনি । তাই এখানে লেখাপড়া করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছেন । এতেই ক্ষান্ত হননি সন্তোষ, তিনি জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । নিজের বাইকে বানিয়েছিলেন গ্রামের অ্যাম্বুলেন্স ৷ সেই বাইকে করে দূর দূরান্তের হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন রোগীদেরকে ৷
সেই শিক্ষকই বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে ৷ তাই হৃদয় ভারাক্রান্ত পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসীদের । স্কুল প্রাঙ্গণে প্রিয় শিক্ষকের জন্য বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সকলে । সেখানেই সন্তোষকে একটি বাইক উপহার দেওয়া হয় ।
গ্রামবাসী শ্রীধর বলেন, "সন্তোষ 16 বছর ধরে আমাদের গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন । আমাদের গ্রামে যখন কোনও যানবাহন ছিল না, তখন তাঁর বাইক আমাদের সব প্রয়োজনে সাহায্য করেছে । সন্তোষ তাঁর বাইকে করে শিশুদের প্রতিভা করঞ্জিতে নিয়ে যেতেন । তাঁর বাইকটি গ্রামের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল । তিনি দিনরাত গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । আমাদের যে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশুনা করেছে তারা এখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । এ সবই শিক্ষক সন্তোষের কারণে । আমরা তাঁকে কখনও ভুলব না । আমরা সবাই তাঁকে মনে রাখব । আমরা একসঙ্গে টাকা সংগ্রহ করে তাঁকে এই বাইকটি কিনে দিয়েছি ।"
শিক্ষক সন্তোষ কাঞ্চন ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই বিদায়ী অনুষ্ঠানটি আমার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে । আমার কর্মজীবন 2007 সালে এই ভালুর গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল । আমি ভাবিনি যে সমস্ত গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে আমাকে এই উপহার দেবে । ভালুর যাওয়ার জন্য এখনও কোনও সঠিক রাস্তা নেই । মাত্র 20টি বাড়ি রয়েছে ৷ এই গ্রামে এখনও অভয়ারণ্য রয়েছে । মূল রাস্তা থেকে প্রায় 6 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম ৷ আমি যে বাইকটি নিয়েছিলাম সেটি একটি অ্যাম্বুলেন্সের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল ।"
তাঁর কথায়, "গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছিল 2012 সালে । এখনও অবকাঠামোর অভাব । গ্রামের মানুষ দরিদ্র শ্রেণির । তাই বলেছিলাম বিদায়ী অনুষ্ঠান না করতে । দু'বার প্রত্যাখ্যান করেছি তাদের আবদার । কিন্তু পরে গ্রামবাসী এবং বাচ্চাদের জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছি । ভালুরের এই স্কুলে 15 জন ছাত্র এবং মাত্র দু'জন শিক্ষক আছে । আমি সকলের ভালোবাসার উপহার হিসাবে এই বাইকটি পেয়েছি । আমি তাদের ভালোবাসার মূল্য দিতে পারব না । আমি পারিবারিক কারণে বদলি নিয়েছি । গ্রামবাসীরা চাইলে আমি রবিবার এসে বাচ্চাদের পড়াব ।"
আরও পড়ুন: