ETV Bharat / bharat

16 বছর ধরে প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষকতা, বদলিতে বাইক উপহার দিল পড়ুয়া-গ্রামবাসীদের

Bike Gifted to Teacher: 16 বছর ধরে প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষকতার পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স হিসাবে নিজের বাইককে ব্যবহার করেছেন শিক্ষক ৷ তাই বদলির সময় চাঁদা তুলে তাঁকে নতুন বাইক উপহার দিল পড়ুয়া ও গ্রামবাসীরা ৷

Bike Gifted to Teacher
শিক্ষককে বাইক উপহার
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 13, 2024, 9:20 PM IST

শিবমোগা (কর্ণাটক), 13 জানুয়ারি: 16 বছর পর প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল থেকে বদলি হচ্ছেন শিক্ষক ৷ চাঁদা তুলে বাইক উপহার দিয়ে আদরের শিক্ষককে হাসিমুখে পরবর্তী জীবনের অভিনন্দন জানাল পড়ুয়া থেকে গ্রামাবাসীরা ৷ ঘটনাটি কর্ণাটকের শিবগোমা জেলার ভালুর গ্রামের ৷

সাগর তালুকের কেন্দ্র থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম ভালুর । এখানে 2007 সালে শিক্ষকতা করতে আসেন সন্তোষ কাঞ্চন ৷ এই গ্রাম থেকেই শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন তিনি । তাঁর কাজের মাধ্যমে সকল শিক্ষকদের মধ্যে সন্তোষ ছাত্র এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন । কারণ তিনি এখানকার শিশুদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিলেন । শুধু স্কুল চলাকালীন নয়, দিনরাত শিশুদের পড়াতেন তিনি । তাই এখানে লেখাপড়া করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছেন । এতেই ক্ষান্ত হননি সন্তোষ, তিনি জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । নিজের বাইকে বানিয়েছিলেন গ্রামের অ্যাম্বুলেন্স ৷ সেই বাইকে করে দূর দূরান্তের হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন রোগীদেরকে ৷

সেই শিক্ষকই বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে ৷ তাই হৃদয় ভারাক্রান্ত পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসীদের । স্কুল প্রাঙ্গণে প্রিয় শিক্ষকের জন্য বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সকলে । সেখানেই সন্তোষকে একটি বাইক উপহার দেওয়া হয় ।

গ্রামবাসী শ্রীধর বলেন, "সন্তোষ 16 বছর ধরে আমাদের গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন । আমাদের গ্রামে যখন কোনও যানবাহন ছিল না, তখন তাঁর বাইক আমাদের সব প্রয়োজনে সাহায্য করেছে । সন্তোষ তাঁর বাইকে করে শিশুদের প্রতিভা করঞ্জিতে নিয়ে যেতেন । তাঁর বাইকটি গ্রামের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল । তিনি দিনরাত গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । আমাদের যে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশুনা করেছে তারা এখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । এ সবই শিক্ষক সন্তোষের কারণে । আমরা তাঁকে কখনও ভুলব না । আমরা সবাই তাঁকে মনে রাখব । আমরা একসঙ্গে টাকা সংগ্রহ করে তাঁকে এই বাইকটি কিনে দিয়েছি ।"

শিক্ষক সন্তোষ কাঞ্চন ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই বিদায়ী অনুষ্ঠানটি আমার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে । আমার কর্মজীবন 2007 সালে এই ভালুর গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল । আমি ভাবিনি যে সমস্ত গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে আমাকে এই উপহার দেবে । ভালুর যাওয়ার জন্য এখনও কোনও সঠিক রাস্তা নেই । মাত্র 20টি বাড়ি রয়েছে ৷ এই গ্রামে এখনও অভয়ারণ্য রয়েছে । মূল রাস্তা থেকে প্রায় 6 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম ৷ আমি যে বাইকটি নিয়েছিলাম সেটি একটি অ্যাম্বুলেন্সের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল ।"

তাঁর কথায়, "গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছিল 2012 সালে । এখনও অবকাঠামোর অভাব । গ্রামের মানুষ দরিদ্র শ্রেণির । তাই বলেছিলাম বিদায়ী অনুষ্ঠান না করতে । দু'বার প্রত্যাখ্যান করেছি তাদের আবদার । কিন্তু পরে গ্রামবাসী এবং বাচ্চাদের জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছি । ভালুরের এই স্কুলে 15 জন ছাত্র এবং মাত্র দু'জন শিক্ষক আছে । আমি সকলের ভালোবাসার উপহার হিসাবে এই বাইকটি পেয়েছি । আমি তাদের ভালোবাসার মূল্য দিতে পারব না । আমি পারিবারিক কারণে বদলি নিয়েছি । গ্রামবাসীরা চাইলে আমি রবিবার এসে বাচ্চাদের পড়াব ।"

আরও পড়ুন:

  1. রক্ষকই শিক্ষক; বিনামূল্যে কোচিং ক্লাস পুলিশ সুপারের, চাকরি পাচ্ছেন ডুয়ার্সের দুঃস্থ পড়ুয়ারা
  2. আরবি ভাষায় বুঝতেন না অর্থ, বাংলায় কোরান অনুবাদ করলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক
  3. 'প' বর্ণ দিয়ে প্রবন্ধ লিখে নজির ফরাক্কা স্কুল শিক্ষকের

শিবমোগা (কর্ণাটক), 13 জানুয়ারি: 16 বছর পর প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল থেকে বদলি হচ্ছেন শিক্ষক ৷ চাঁদা তুলে বাইক উপহার দিয়ে আদরের শিক্ষককে হাসিমুখে পরবর্তী জীবনের অভিনন্দন জানাল পড়ুয়া থেকে গ্রামাবাসীরা ৷ ঘটনাটি কর্ণাটকের শিবগোমা জেলার ভালুর গ্রামের ৷

সাগর তালুকের কেন্দ্র থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি এলাকায় ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম ভালুর । এখানে 2007 সালে শিক্ষকতা করতে আসেন সন্তোষ কাঞ্চন ৷ এই গ্রাম থেকেই শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন তিনি । তাঁর কাজের মাধ্যমে সকল শিক্ষকদের মধ্যে সন্তোষ ছাত্র এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন । কারণ তিনি এখানকার শিশুদের শিক্ষাগত অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিলেন । শুধু স্কুল চলাকালীন নয়, দিনরাত শিশুদের পড়াতেন তিনি । তাই এখানে লেখাপড়া করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছেন । এতেই ক্ষান্ত হননি সন্তোষ, তিনি জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । নিজের বাইকে বানিয়েছিলেন গ্রামের অ্যাম্বুলেন্স ৷ সেই বাইকে করে দূর দূরান্তের হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন রোগীদেরকে ৷

সেই শিক্ষকই বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে ৷ তাই হৃদয় ভারাক্রান্ত পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসীদের । স্কুল প্রাঙ্গণে প্রিয় শিক্ষকের জন্য বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সকলে । সেখানেই সন্তোষকে একটি বাইক উপহার দেওয়া হয় ।

গ্রামবাসী শ্রীধর বলেন, "সন্তোষ 16 বছর ধরে আমাদের গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন । আমাদের গ্রামে যখন কোনও যানবাহন ছিল না, তখন তাঁর বাইক আমাদের সব প্রয়োজনে সাহায্য করেছে । সন্তোষ তাঁর বাইকে করে শিশুদের প্রতিভা করঞ্জিতে নিয়ে যেতেন । তাঁর বাইকটি গ্রামের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল । তিনি দিনরাত গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছেন । আমাদের যে ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশুনা করেছে তারা এখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । এ সবই শিক্ষক সন্তোষের কারণে । আমরা তাঁকে কখনও ভুলব না । আমরা সবাই তাঁকে মনে রাখব । আমরা একসঙ্গে টাকা সংগ্রহ করে তাঁকে এই বাইকটি কিনে দিয়েছি ।"

শিক্ষক সন্তোষ কাঞ্চন ইটিভি ভারতকে বলেন, "এই বিদায়ী অনুষ্ঠানটি আমার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে । আমার কর্মজীবন 2007 সালে এই ভালুর গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল । আমি ভাবিনি যে সমস্ত গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে আমাকে এই উপহার দেবে । ভালুর যাওয়ার জন্য এখনও কোনও সঠিক রাস্তা নেই । মাত্র 20টি বাড়ি রয়েছে ৷ এই গ্রামে এখনও অভয়ারণ্য রয়েছে । মূল রাস্তা থেকে প্রায় 6 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম ৷ আমি যে বাইকটি নিয়েছিলাম সেটি একটি অ্যাম্বুলেন্সের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল ।"

তাঁর কথায়, "গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছিল 2012 সালে । এখনও অবকাঠামোর অভাব । গ্রামের মানুষ দরিদ্র শ্রেণির । তাই বলেছিলাম বিদায়ী অনুষ্ঠান না করতে । দু'বার প্রত্যাখ্যান করেছি তাদের আবদার । কিন্তু পরে গ্রামবাসী এবং বাচ্চাদের জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছি । ভালুরের এই স্কুলে 15 জন ছাত্র এবং মাত্র দু'জন শিক্ষক আছে । আমি সকলের ভালোবাসার উপহার হিসাবে এই বাইকটি পেয়েছি । আমি তাদের ভালোবাসার মূল্য দিতে পারব না । আমি পারিবারিক কারণে বদলি নিয়েছি । গ্রামবাসীরা চাইলে আমি রবিবার এসে বাচ্চাদের পড়াব ।"

আরও পড়ুন:

  1. রক্ষকই শিক্ষক; বিনামূল্যে কোচিং ক্লাস পুলিশ সুপারের, চাকরি পাচ্ছেন ডুয়ার্সের দুঃস্থ পড়ুয়ারা
  2. আরবি ভাষায় বুঝতেন না অর্থ, বাংলায় কোরান অনুবাদ করলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক
  3. 'প' বর্ণ দিয়ে প্রবন্ধ লিখে নজির ফরাক্কা স্কুল শিক্ষকের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.