15 তম অর্থ কমিশন তাদের রিপোর্টে নিজেদের কোভিডের সময়ের অর্থ কমিশন হিসেবে বর্ণনা করেছে । তারা যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা পুরোপুরি মোদি সরকারের দ্বারা নির্ধারিত রেফারেন্স পয়েন্ট এবং সীমানার সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে । কমিশন তাদের রিপোর্টের ভিত্তি হিসেবে 2011 সালের জনগণনাকে নির্ধারণ করায় তামিলনাড়ুকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির 16 হাজার 680 কোটি টাকা লোকসান হয়েছে । এই বিষয়টি এভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে যে ভুল মান নির্ধারণের জন্য রাজ্যগুলির আয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতি হচ্ছে । যা 2021 এবং 2026 এর মধ্যে 94 হাজার কোটি টাকা হওয়ার কথা ছিল ।
14 তম অর্থ কমিশন রাজ্যগুলির জন্য 42 শতাংশ সম্পদ ভাগ করে দিয়েছিল । বরাদ্দ নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য কেন্দ্রের সুপারিশ গ্রহণ করে কমিশন । তার পর তারা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের জন্য 1 শতাংশ রেখে রাজ্যগুলিতে 41 শতাংশ সম্পদ স্থানান্তর করেছিল । রাজ্যগুলি দাবি করছে যে 42 শতাংশ বরাদ্দ করা হলেও বাস্তবে তারা মাত্র 35 শতাংশ পেয়েছে । রাজ্যগুলি সম্পদের এই স্থানান্তরকে 50 শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছে । কিন্তু তা কারও কানেই যাচ্ছে না ।
অর্থ কমিশন বলছে যে আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যগুলি ভারতের একীভূত তহবিল থেকে 52.41 লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আয় করবে । উল্টোদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে তারা 1.8 লক্ষ কোটি টাকার অনুদান নিয়ে পর্যালোচনা করবে এবং সাবধানতার সঙ্গে চিন্তা করার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে । এই দৃষ্টিভঙ্গি ফেডারালিজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক আঘাতের সমান ।
এটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে 2015 সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, "আমরা বিশ্বাস করি যে বৃহত্তর আর্থিক শক্তি এবং স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে রাজ্যগুলিকে তাদের নিজস্ব কর্মসূচি ও যোজনার পরিকল্পনা করতে দেওয়া উচিত । আর্থিক বিচক্ষণতা এবং শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের সঙ্গেই এটা করতে দেওয়া উচিত । আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত যে এটা ছাড়া স্থানীয় উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করা যাবে না এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলিকে মূলস্রোতে আনা যাবে না ।”
তহবিল ও শুল্কের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে একটি গুরুতর ভারসাম্যহীনতা বজায় রেখে, অর্থ কমিশন নিজেই বলেছে যে সংবিধান কেন্দ্রকে সম্পদ ব্যবহারের ক্ষমতা দিয়েছে এবং উচ্চ হারে ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত দায়িত্ব রাজ্যগুলির উপর অর্পণ করা হয়েছে । এই কমিশন আরও জানিয়েছে যে 62.7 শতাংশ আর্থিক সম্পদের উপর অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের । অথচ তাদের খরচের দায়িত্ব 37.6 শতাংশ । অন্যদিকে রাজ্য সরকারগুলির রাজস্বের উপর মাত্র 337.6 শতাংশ অধিকার রয়েছে। কিন্তু তাদের খরচ করতে হয় 62.4 শতাংশ ।
এই তথ্যগুলি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ ভাবে অবগত । তার পরও কেন্দ্র এখনও ভারতের একীভূত তহবিল থেকে প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলছে । যার অর্থ হল রাজ্যগুলিকেও এর অধীনে ব্যয়ের বোঝা ভাগ করে নিতে হবে । অর্থ কমিশন জানিয়েছে যে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার পরই কেন্দ্রের সুপারিশ গৃহীত হয়েছিল । তবে এই প্রথমবার রাজ্যের বরাদ্দ থেকে কেন্দ্র 1 শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এবং কমিয়ে দেওয়া ওই পরিমাণ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য নির্ধারণ করেছে । আইন-শৃঙ্খলা যদিও রাজ্যের আওতাধীন একটি বিষয়, তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করার ব্যবস্থা করে থাকে । কয়েক বছর আগে এই খাতে বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । কেন্দ্র এই ধরনের ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে কেন অস্বীকার করে চলেছে, তা এখনও রহস্যের বিষয় হিসেবে থেকে গিয়েছে ।
কেন্দ্র আরও বেশি বেশি করে সেস চাপিয়ে দিচ্ছে, যেখান থেকে হওয়া আয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার দরকার নেই । আরও তহবিল বরাদ্দের জন্য রাজ্যগুলির অনুরোধও কেন্দ্রীয় সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে । একই সঙ্গে যে প্রকল্পগুলি কেন্দ্র স্পনসর করে, সেই প্রকল্পগুলির সংখ্যা 30 থেকে বাড়িয়ে 35 করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সংখ্যা 685 থেকে বাড়িয়ে 704 করা হয়েছে । জিএসটি চালু হওয়ার পর কর থেকে হওয়া আয়ের উপর রাজ্য সরকারগুলির অধিকার অনেকটাই কমে গিয়েছে । ফলে কেন্দ্রের সামনে তহবিলের জন্য নতজানু হওয়া ছাড়া রাজ্য সরকারগুলির কাছে আর কোনও বিকল্প নেই । আর 15 তম অর্থ কমিশনও এই বিষয়ে কোনও পরিবর্তন আনতে পারবে না ।