নয়াদিল্লি, 18 নভেম্বর : কোনও নাবালক বা নাবালিকার যৌন নিগ্রহ করার জন্য তার ত্বক স্পর্শ করা আবশ্যিক নয় ৷ বৃহস্পতিবার স্পষ্ট ভাষায় একথা জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ৷ একইসঙ্গে, এই প্রসঙ্গে বম্বে হাইকোর্টের (Bombay High Court) একটি বিতর্কিত রায়কেও খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত ৷ সংশ্লিষ্ট মামলায় এক নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করা হয় ৷ কিন্তু, বম্বে হাইকোর্ট সেই অভিযোগ খারিজ করে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয় ৷ সেই সময় আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল ‘‘ত্বক না ছুঁয়ে যদি কোনও নাবালিকার বক্ষ অনুভব করা হয়’’, তাহলে তা যৌন নিগ্রহের মধ্যে পড়ে না ! আর সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য হল, বম্বে হাইকোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ আদতে ‘‘আইনের খুব সংকীর্ণ ব্যাখ্যা’’ ৷ এদিন আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানায়, পকসো (POCSO) আইনের আওতায় কোনও শিশু বা নাবালকের যৌন নিগ্রহের জন্য ‘‘ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংস্পর্শ’’ (skin to skin) হওয়াটা আবশ্যিক নয় ৷ শীর্ষ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন ৷
আরও পড়ুন : 'ধস্তাধস্তি ছাড়া একা ব্যক্তির পক্ষে জামাকাপড় খুলে ধর্ষণ করা অসম্ভব'
প্রসঙ্গত, বম্বে হাইকোর্টের ওই বিতর্কিত রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল (Attorney General KK Venugopal ) ৷ তাঁর যুক্তি ছিল, বম্বে হাইকোর্টের ওই রায়ের অর্থ হল, ‘‘যে কেউ একটি সার্জিক্যাল গ্লাভস পরে কোনও নাবালক বা নাবালিকাকে যৌন হেনস্থা করবে এবং তারপর অবাধে সমস্ত অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে ৷’’ বেণুগোপাল আদালতে জানান, বম্বে আদালতের ওই রায় শিখণ্ডী করে বহু মানুষ এমন কুকীর্তি করবে ৷ এবং তার ফল হবে ‘বিধ্বংসী’ ৷
অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন অভিযুক্তের আইনজীবী ৷ তাঁর পাল্টা যুক্তি ছিল, ‘‘যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক হওয়াটা আবশ্যিক ৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে নাবালিকার পরনের পোশাক স্পর্শ করা হয়েছিল, তার ত্বক নয় !’’ এই যুক্তি শোনার পরই আদালত ‘স্পর্শ’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলে ৷ শুনানি চলাকালীন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা বলেন, ‘‘স্পর্শের অর্থ কি শুধুমাত্রই স্পর্শ করা ? এমনকী, আপনি যদি এক টুকরো কাপড়ও পরে থাকেন, তাহলেও আপনার পোশাক স্পর্শ করা ওদের উদ্দেশ্য নয় ৷ আমাদের অবশ্যই স্পর্শের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে হবে ৷’’
আরও পড়ুন : নাবালিকার যৌন হেনস্থা নিয়ে হাইকোর্টের 'ডিসটার্বিং' রায় স্থগিত শীর্ষ আদালতে
এদিন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি এস আর ভাট এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে ৷ অ্য়াটর্নি জেনারেল ছাড়াও বম্বে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় জাতীয় মহিলা কমিশন, মহারাষ্ট্র সরকার এবং ভারতের যুব বার সংগঠন ৷ প্রসঙ্গত, আগেই বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের সংশ্লিষ্ট রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেই স্থগিতাদেশ জারি করা হয় চলতি বছরেরই 27 জানুয়ারি ৷ একইসঙ্গে, বম্বে হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে মামলা রুজুর অনুমতি দেওয়া হয় ৷