পুনে (মহারাষ্ট্র), 18 ফেব্রুয়ারি: বালাসাহেব ঠাকরের (Bal Thackeray) তৈরি দল শিবসেনা ও তার প্রতীক তির-ধনুক হাতছাড়া হয়েছে ছেলে উদ্ধব ঠাকরের (Uddhav Thackeray) ৷ শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের (ECI) তরফে দেওয়া এই সিদ্ধান্ত উদ্ধবকে মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) ৷ ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (NCP) প্রধান বলেছেন, "এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত । একবার সিদ্ধান্ত দিলে আর কোনও আলোচনা করা উচিত নয় । এটা মেনে নিয়ে নতুন প্রতীক নিন ।’’
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উদ্ধবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় শিবসেনার অন্দরে ৷ যার ফলে প্রকাশ্যেই ওই দল বিভক্ত হয়ে যায় ৷ অধিকাংশ বিধায়ক ও সাংসদ একনাথ শিন্ডের সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন সরকার তৈরি করেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী হন একনাথ শিন্ডে (Maharashtra CM Eknath Shinde) ৷ তার পরই দলের কতৃত্ব দাবি করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন একনাথ ৷ শুক্রবার কমিশনের রায় তাঁর পক্ষেই গিয়েছে ৷
এই পরিস্থিতিতে উদ্ধবের কী করা উচিত ? আপাতত সেই আলোচনাই চলছে জাতীয় রাজনৈতিক মহলে ৷ শনিবার মাতোশ্রীতে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকও করতে চলেছেন উদ্ধব ৷ তার আগে মহারাষ্ট্রের পুনেতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উদ্ধবকে কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার ৷ উদ্ধব যে মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই সরকারে শরিক ছিল কংগ্রেস (Congress) ও এনসিপি ৷
আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে উদ্ধব
তাই ‘জোটসঙ্গী’ শরদ পাওয়ারের পরামর্শ বাল ঠাকরের পুত্র মেনে নেন কি না, সেটাই এখন দেখার ৷ তবে মারাঠি রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা পাওয়ার অবশ্য তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যাও করেছেন ৷ জানিয়েছেন, পুরনো প্রতীক হারানো কোনও বড় প্রভাব ফেলবে না ৷ কারণ মানুষ নতুন প্রতীক মেনে নেবে । আর পুরো বিষয়টি নিয়ে বড়জোর মাসখানেক আলোচনা হবে ৷
এই বিষয়ে তিনি কংগ্রেসের উদাহরণ টেনেছেন ৷ হাল-সহ জোড়া বলদ থেকে হাত, কংগ্রেসের প্রতীক পরিবর্তনের কাহিনি শুনিয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতা ৷ বলেছেন, "আমার মনে আছে ইন্দিরা গান্ধিও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন । কংগ্রেসের কাছে 'হাল-সহ জোড়া বলদ' প্রতীক ছিল । পরে তারা এটি হারিয়ে 'হাত'কে একটি নতুন প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করেছিল । মানুষ এটি গ্রহণ করেছিল ।’’ সেই ভাবে উদ্ধবের নতুন দলের প্রতীকও মানুষ মেনে নেবে ৷
উদ্ধব কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা হয়তো দিনের শেষে স্পষ্ট হয়ে যাবে ৷ কিন্তু তার আগে তিনি তোপ দেগেছেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ৷ এই সিদ্ধান্তের জন্য তিনি কমিশনকে বিজেপির (BJP) এজেন্ট বলে কটাক্ষ করেছেন ৷ শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "তাদের প্রথমে বালাসাহেবকে বোঝা উচিত । তারা জানতে পেরেছে যে মোদির মুখ মহারাষ্ট্রের মানুষকে আর আকর্ষণ করে না, তাই তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য তাদের মুখে বালাসাহেবের মুখোশ লাগাতে চাইছে ।"
তিনি আরও বলেন, "আমি বলেছিলাম যে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ের আগে নির্বাচন কমিশনের কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয় । যদি বিধায়ক ও সাংসদের সংখ্যার ভিত্তিতে দলের অস্তিত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে কোনও পুঁজিপতি বিধায়ক ও সাংসদ কিনে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন ।" তাঁর সঙ্গে মানুষের সমর্থন আছে বলেও তিনি দাবি করেন৷ আর কমিশনের সিদ্ধান্ত সাময়িক বলেও তাঁর দাবি ৷ তিনি জানিয়েছেন যে তিনি এই নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবেন ৷ তাঁর আশা, কমিশনের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেবে আদালত ৷
আরও পড়ুন: বালাসাহেবের শিবসেনার কর্তৃত্ব একনাথ শিন্ডের হাতেই দিল নির্বাচন কমিশন