নাগপুর, 24 অক্টোবর: জি20 শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে ভারতের সাফল্যের কথা শোনা গেল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সরসংঘচালক মোহন ভাগবতের মুখে ৷ মঙ্গলবার বিজয়া দশমী উৎসবে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এই কথা বলেন ৷ তাঁর দাবি, ভারতের এই নেতৃত্ব দেশকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ জায়গা দিয়েছে ৷
মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘প্রতি বছর বিশ্বে ভারতের গৌরব বাড়ছে । এখানে (ভারতে) অনুষ্ঠিত জি20 শীর্ষ সম্মেলন বিশেষ ছিল । ভারতীয়দের আতিথেয়তা প্রশংসিত হয়েছে । বিভিন্ন দেশের মানুষ আমাদের বৈচিত্র্য অনুভব করেছেন । তাঁরা আমাদের কূটনৈতিক দক্ষতার পাশাপাশি আমাদের সৎ সদিচ্ছা দেখেছেন । আমাদের নেতৃত্ব ভারতকে বিশ্বে স্থান দিয়েছে ৷’’
উল্লেখ্য, 2022 সালে জি20 সম্মেলন হয় ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৷ সেখানেই ভারত এই গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব গ্রহণ করে ৷ আর সেই কারণে চলতি বছর সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে আয়োজিত হয় জি20 শীর্ষ সম্মেলন ৷ যদিও তার আগে এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির একাধিক প্রতিনিধিকে নিয়ে বহু বৈঠক হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে ৷
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা এবং কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা এই নিয়ে উচ্ছ্বসিত ৷ সেই উচ্ছ্বাসই কার্যত ধরা পড়েছে আরএসএস প্রধানের কথায় ৷ পাশাপাশি তিনি এই নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাও করেছেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘...বিশ্বে এবং ভারতেও কিছু মানুষ আছে যারা চায় না যে ভারত এগিয়ে যাক... তারা সমাজে দলাদলি ও সংঘর্ষ সৃষ্টির চেষ্টা করে ।’’
এখানেই না থেমে মোহন ভাগবত আরও বলেন, ‘‘আমাদের অসচেতনতা এবং বিশ্বাসের অভাবের কারণে, আমরাও মাঝে মাঝে এতে জড়িয়ে পড়ি, এবং অপ্রয়োজনীয় উপদ্রব তৈরি করা হয়... ৷ ভারত যদি এগিয়ে যায়, তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না ৷ তাই তারা ক্রমাগত বিরোধিতা করে । তারা শুধু বিরোধিতা করার জন্য বিশেষ মতাদর্শ গ্রহণ করেছে ৷’’
মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও উঠে আসে আরএসএস প্রধানের ভাষণে ৷ এই নিয়েও তিনি বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "মণিপুরে, যখন উভয় পক্ষের লোকেরা শান্তি চাইছে, ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখন এই শক্তিগুলি কোনও ঘটনা ঘটিয়ে ঘৃণা ও হিংসা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে ? এই গুরুতর সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বহুমাত্রিক প্রচেষ্টার ।’’
মোহন ভাগবত আরও বলেন, ‘‘এই জঘন্য সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন হবে দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সমন্বিত কর্ম এবং দক্ষতার ৷ একই সঙ্গে সমাজের নেতৃত্বকেও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত হওয়া পারস্পরিক অবিশ্বাসের দূরত্ব দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে ।’’
তাঁর ভাষণে এ দিন উঠে এসেছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গও৷ আরএসএস প্রধান বলেন, ‘‘...অযোধ্যায় ভগবান রামের একটি মন্দির তৈরি হচ্ছে...মন্দিরে 22 জানুয়ারি ভগবান রামকে (মূর্তি) স্থাপন করা হবে...সেদিন আমরা সারা দেশে আমাদের নিজস্ব মন্দিরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি ।’’
প্রতি বছর বিজয়া দশমীতেই আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয় নাগপুরে সংঘের সদর দফতরে ৷ এবার সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী শংকর মহাদেবন ৷ তিনি আরএসএস-কে ধন্যবাদ জানান দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য ৷
শংকর মহাদেবন বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে গানের মাধ্যমে প্রেরণ করা আমার কর্তব্য । আমি এটা করার চেষ্টা করি তরুণ ও শিশুদের সঙ্গে আমার আলাপচারিতায় এবং আমার শো, রিয়েলিটি শো এমনকি চলচ্চিত্রের গানেও ৷’’
এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার আজ দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে ৷ আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় আপনাদের সকলের অবদান অতুলনীয় ।’’ এ দিন বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছাও জানান এই সঙ্গীতশিল্পী ৷ পাশাপাশি তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান সরসংঘচালক মোহন ভাগবতকে ৷
আরএসএস-এর এই বার্ষিক উৎসব এ দিন প্রথা মেনে শুরু হয় পথ সঞ্চালন দিয়ে ৷ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কেবি হেডগেওয়ারের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান মোহন ভাগবত ও শংকর মহাদেবন ৷ বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে শস্ত্রপুজনেও অংশ নেন সংঘ প্রধান ৷ এ দিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকরি, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ-সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন ৷
1925 সালের বিজয়া দশমীতে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ৷ সেই কারণে বিজয়া দশমীতে প্রতিবছর বিশেষভাবে উৎসব পালন করা হয় সংঘের সদর দফতরে ৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যাতনামীদের ডাকা হয় প্রধান অতিথি হিসেবে ৷ এবার যেমন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল শংকর মহাদেবনকে ৷
সংবাদসংস্থা - এএনআই
আরও পড়ুন: আরএসএস-এর বিজয়দশমী উৎসবে ভাগবতের নির্বাচনী বার্তা, প্রধান অতিথি শংকর মহাদেবন