উত্তরকাশী, 14 নভেম্বর: টানেলের ভিতরে এখনও আটকে প্রায় 40 জন শ্রমিক ৷ মঙ্গলবার ভোরে উত্তরকাশীর ওই টানেলে পৌঁছল একাধিক যন্ত্রপাতি ৷ সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তার মধ্যে দিয়ে 900 মিমি ব্যাসের বিশাল স্টিল পাইপ প্রবেশ করানো হবে ৷ ওই পাইপের মধ্যে দিয়ে দু'দিন ধরে আটকে থাকা শ্রমিকদের দ্রুত বের করার চেষ্টা করা হবে ৷
রবিবার ভোর 4টে নাগাদ এই সাড়ে 4 কিমি দীর্ঘ উত্তরকাশীর টানেলটির একাংশ ভেঙে পড়ে ৷ সোমবার থেকে সেখানে আটকে থাকা শ্রমিকদের অক্সিজেন, জল এবং হালকা খাবারদাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ৷ বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের আধিকারিক রঞ্জিত কুমার সিনহা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত বা বুধবারের মধ্যে ওই শ্রমিকদের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হবে ৷ আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ৷ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওই অন্ধকার টানেলের মধ্যে সুস্থ থাকাটা প্রায় অসম্ভব ৷ তাই শ্রমিকদের অনবরত জল, অক্সিজেন, খাবারদাবার দিয়ে যাওয়াটা এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ ৷
উত্তরকাশীর স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা জানিয়েছেন, টানেলের কাছে ইতিমধ্যে 6 শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে ৷ উদ্ধার হওয়ার পরপরই ওই শ্রমিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে 10টি অ্যাম্বুলেন্স । রয়েছে চিকিসকদের বিশেষ দল ৷ ডিস্ট্রিক্ট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই শ্রমিকদের মধ্যে 15 জন ঝাড়খণ্ডের, 8 জন উত্তরপ্রদেশের, 5 জন ওড়িশার, 4 জন বিহার, 3 জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। উত্তরাখণ্ড ও অসমেরও 2 জন করে বাসিন্দা আটকে রয়েছেন । হিমাচলপ্রদেশের 1 জন বাসিন্দাও আটকে রয়েছেন ৷ এই টানেলটি তৈরির দায়িত্বে রয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড বা এনএইচআইডিসিএল ৷
কীভাবে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত ?
ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ভূতত্ত্ববিদ সুশীল কুমার জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের মতো একটি পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণকার্য চালানোর সময় নির্মাতা সংস্থাটির আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল ৷ তিনি বলেন, "যমুনোত্রী ন্যাশনাল হাইওয়েতে সিল্কইয়ারা এবং পোলগাঁওয়ের মধ্যে 4 হাজার 531 মিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি হচ্ছে ৷ এর ফলে যমুনোত্রী এবং গঙ্গোত্রী ধামের মধ্যে দূরত্ব 25 কিলোমিটার কমবে ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত সিল্কইয়ারার দিকে 2 হাজার 340 মিটার টানেল তৈরি হয়েছে ৷ আর বারকোটের দিকে 1 হাজার 750 মিটার ৷ সিল্কইয়ারার দিকে টানেলের 270 মিটার বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ সেখানে 30 মিটার এলাকাজুড়ে ইট-বালি-সিমেন্টের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে ৷ আর এর ফলে টানেলে কর্মরত শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন ৷"
টানেলের একাংশ ভেঙে পড়ল কেন ?
এর কারণ হিসেবে ভূতত্ত্ববিদ জানান, ভারতে এটাই প্রথম টানেল নয় ৷ মনে রাখতে হবে, উত্তরাখণ্ড নরম পাথর বা সফ্ট রক দিয়ে তৈরি ৷ এই পাহাড়ি এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত ৷ এক্ষেত্রে একটি পাথর আরেকটি পাথরের উপর ভর করে থাকে ৷ তাই কোনও একটি পাথর আচমকা সরে গেলে আরেকটি পাথর পড়ে যাবে ৷ আর উত্তরকাশীর টানেলে সেটাই হয়েছে ৷
টানেল নির্মাণের সময় একটি পাস ব্লক থাকে ৷ এই ব্লক দিয়ে জরুরিভিত্তিতে শ্রমিকদের উদ্ধার করা যায় ৷ অনেক সময়ই নির্মাতা সংস্থাগুলি এই পাস ব্লকের জায়গা রাখে না ৷ উত্তরকাশীর এই টানেলে পাস ব্লক ছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে ৷
আরও পড়ুন:
1. উত্তরকাশীর টানেল বিপর্যয় ফেরাল সেই নভেম্বরেরই মহাবীর খনি দুর্ঘটনার স্মৃতি
2. টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকরা 'নিরাপদ', উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী
3. উত্তরকাশীতে টানেল দুর্ঘটনায় আটকে অন্তত 40 শ্রমিক! উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী