প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিনটিতে বিরল রোগ দিবস পালন করা হয়, যার উদ্দেশ্য প্রধানত এইসব রোগ ও মানুষের ওপর তাদের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতার প্রসার করা । 2008 সালের 29 ফেব্রুয়ারি , একটা ‘বিরল’ দিনে এটা শুরু করেছিল ইউরোআরডিআইএস (রেয়ার ডিজিজেস ইউরোপ) এবং তার কাউন্সিল অফ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সেস। এই ইভেন্টের সঙ্গে যুক্ত 103 টি দেশ, প্রভাবিত 300 মিলিয়ন মানুষ আর বিশ্বজুড়ে রিপোর্ট হয়েছে 7000-এরও বেশি বিরল রোগ। ভারতে প্রতি কুড়ি জনের মধ্যে একজন এর দ্বারা প্রভাবিত । আসুন, আরেকটু জানা যাক ।
- বিরল রোগ কী?
ইউরোআরডিআইএস বলছে, বিরল রোগ বিভিন্ন ধরণের চিহ্ন ও উপসর্গযুক্ত এবং শুধু রোগ অনুযায়ী নয়, একই রোগে আক্রান্ত আলাদা আলাদা রোগীর একেকরকম উপসর্গ হতে পারে । এধরণের রোগ কম হওয়ার দরুণ মেডিকেল দক্ষতা দুর্লভ, জ্ঞান সীমিত, যত্ন অপর্যাপ্ত এবং গবেষণা সীমাবদ্ধ । সার্বিক সংখ্যায় প্রচুর হওয়া সত্ত্বেও, বিরল রোগে আক্রান্তরা মেডিকেল ব্যবস্থায় ব্রাত্য, প্রায়ই তাঁদের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা হয় না, গবেষণার সুবিধাও তাঁরা পান না। এছাড়াও সাধারণ উপসর্গের আড়ালে বিরল রোগ লুকিয়ে থাকায়, তা নির্ণয়ে ভুল হয় এবং চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায় । এইসব রোগের বাড়তে থাকা, প্রায়শই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ানোর জেরে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
- কিছু বিরল রোগ :
যদিও হাজার হাজার বিরল রোগের কথা সামনে এসেছে, তার মধ্যে কয়েকটির তালিকা নিচে দেওয়া হল-
1.লুপাস
2.পালমোনারি ফাইব্রোসিস
3.মাসকুলার ডিসট্রফি
4.উইলসন’স ডিজিজ
5.মাল্টিপল স্কেলেরোসিস
6.সিস্টিক ফাইব্রোসিস
7.হেমোফিলিয়া
8.কুশিংস সিনড্রোম
9.অ্যাঞ্জেলম্যান সিনড্রোম
10.মিউকোরমাইকোসিস
11.ডাউন সিনড্রোম
12.সেলিয়াক সিনড্রোম
13.ইভান্স সিনড্রোম
14.বেটা-থ্যালাসেমিয়া
15.স্টোনম্যান সিনড্রোম
16.অসগড স্ল্যাটার সিনড্রোম
17.অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম
18.কুরু ডিজিজ
19.অটোইউমিউন হেপাটাইটিস
আরও পড়ুন : মস্তিষ্কে আঘাত কীভাবে বোঝা সম্ভব?
- কীভাবে হয়?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) এবং জেনেটিক অ্যান্ড রেয়ার ডিজিজ (জিএআরডি) ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, বিরল রোগের বহু কারণ থাকতে পারে। বেশিরভাগটাই জিনগত বলে আগে মনে করা হত, যা সরাসরি জিন বা ক্রোমোজোমে পরিবর্তনের ফলে তৈরি হয়। কিছুক্ষেত্রে রোগের সৃষ্টিকারী জিনগত পরিবর্তন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। আবার সেটা পরিবারের যে কারও মধ্যে দেখা দিতে পারে। আবার, বহু বিরল রোগ, যার মধ্যে কিছু সংক্রমণ, কয়েক ধরণের বিরল ক্যান্সার এবং কিছু অটো-ইমিউন ডিজিজ রয়েছে, যা বংশাণুক্রমিক নয়। গবেষকরা প্রতি বছরই নতুন তথ্য জানছেন, কিন্তু বহু বিরল রোগের কারণ আজও অজানা ।
বেশিরভাগ রোগই বংশাণুক্রমিক হওয়ায়, এর কোনও চিকিৎসা নেই। তাই আরও গবেষণা চলছে । এছাড়াও মনে রাখতে হবে যে এধরণের রোগে আক্রান্তদের একটু আলাদা দেখাতে পারে, কিন্তু তা বলে তাঁদের অন্য চোখে দেখা উচিত নয় এবং সমাজে সমানভাবে তাঁদের অধিকার থাকা উচিত ।