কোটা, 27 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ব়্যাগিং-এর জেরে প্রথম বর্ষের ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে খুন করা হয়েছে এই নিয়ে যখন জোর তদন্ত চলছে, তখনই রাজস্থানের কোচিং হাব হিসেবে পরিচিত কোটার হস্টেলগুলিকে করে তোলা হচ্ছে 'সুইসাইড প্রুফ'৷ পড়ুয়ারা যাতে কোনও কারণে চরম পদক্ষেপ নিতে না পারেন, সে জন্য ইতিমধ্যেই হস্টেলের ঘরে ঘরে স্প্রিং দেওয়া সিলিং ফ্যান রাখা হয়েছে ৷ আর এ বার আত্মহত্যা রুখতে ব্যালকনি ও লবি ঘিরে ফেলা হল জাল দিয়ে ৷ হস্টেল মালিকরা বলছেন যে, তাঁদের প্রাঙ্গণকে 'সুইসাইড-প্রুফ' করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সাম (জেইই) এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে নিট-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কোটায় চলে যান । কর্তৃপক্ষের মতে, কোটায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া 20 জন শিক্ষার্থী 2023 সালে এ পর্যন্ত তাঁদের জীবন শেষ করেছেন ৷ বছরে এতজন পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা এটাই সর্বোচ্চ । গত বছর এই সংখ্যা ছিল 15 ।
বিশালাক্ষী রেসিডেন্সির মালিক বিনোদ গৌতম বলেন, "আমরা সমস্ত লবি এবং বারান্দায় বিশাল জাল বসিয়েছি যাতে ছাত্ররা উঁচু থেকে লাফ দিতে না পারেন । এই জালগুলি 150 কেজি পর্যন্ত ওজন ধরে রাখতে পারে ৷ বিশালাক্ষী রেসিডেন্সি একটি মেয়েদের হস্টেল যার আট তলা জুড়ে 200 টিরও বেশি ঘর রয়েছে ৷
পাখায় স্প্রিং-এর কয়েল এবং এই জাল যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে সাহায্য করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন । তাঁর কথায়,"এখনও পর্যন্ত, আমার হস্টেলে কোনও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি ৷ তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে । বাবা-মা প্রায়ই আতঙ্কিত হন এবং এই ধরনের ব্যবস্থা তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে কারণ তাঁরা তাঁদের সন্তানদের থেকে অনেক দূরে থাকেন ৷"
শিক্ষার্থীরা যাতে আত্মহত্যার কোনও পথ খুঁজে না পান সে জন্যই বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি ৷ তিনি বলেন, "আমরা ইস্পাতের তারের তৈরি জাল বসিয়ে দিচ্ছি, যেগুলো অনেকাংশে দৃশ্যমান নয় কিন্তু খুব শক্তিশালী এবং পেশাদার যন্ত্রপাতি ছাড়া এগুলি কাটা বা অপসারণ করা সম্ভব নয় । বর্তমানে এই নেটগুলো বসানোর কাজ চলছে । এ ধরনের ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয় মুম্বইতে বিভিন্ন বহুতল ভবনে । এটি একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার কিন্তু জীবন বাঁচানো আরও গুরুত্বপূর্ণ ৷"
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হস্টেল মালিক বলেন, সব লবি, জানালা ও বারান্দায় লোহার জাল বসানো হয়েছে । তিনি বলেন, "অধিকাংশ ছাত্র আত্মহত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে বা উঁচু বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে । আমরা যে কোনও বিপর্যয় এড়াতে উভয়ের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি । এটি ব্যবসার জন্যও খারাপ কারণ একবার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে, সেই ছাত্রাবাসের ছাত্রছাত্রীরা আর থাকতে চান না ৷ অন্যান্য হস্টেল বা পিজিতে চলে যান ৷" চলতি মাসে কোটার চার জন ছাত্র আত্মহত্যা করার পরে কোচিং হাব আবারও খবরের শিরোনামে এসেছে ৷
আরও পড়ুন: র্যাগিংয়ের শিকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত প্রথম বর্ষের ছাত্র, জানাল আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি
হস্টেল এবং পিজি আবাসনে এই ধরনের পদক্ষেপগুলি বৃহত্তর সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি কমিশনার ওপি বাঙ্কার সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন,
"বাচ্চাদের নিয়মিত মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে পিতামাতার সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের জন্য আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি । তবে, স্প্রিং-লোডেড ফ্যানের মতো ব্যবস্থাগুলি একজন শিক্ষার্থীর দ্বারা মুহূর্তের উত্তেজনায় করা যে কোনও প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে সহায়ক হতে পারে । একবার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে এবং অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে ৷"
আত্মহত্যা রুখতে সিলিং ফ্যানে স্প্রিং কয়েল লাগানোর বিষয়ে 12 অগস্ট কোটার আধিকারিক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে আলোচনা হয় ৷ পরে বাঙ্কার কঠোরভাবে এই পদক্ষেপ মেনে চলার নির্দেশ জারি করেন । এইভাবে ডিভাইসটি কাজ করে: যদি 20 কেজির বেশি ওজনের একটি বস্তু ফ্যান থেকে ঝোলানো হয়, তবে এটির সঙ্গে সংযুক্ত স্প্রিংটি প্রসারিত হয়, যার ফলে এই পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করা কারও পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে । সেই সঙ্গে একটা সাইরেন বেজে ওঠে ।
2017 সালে কোটা হস্টেল অ্যাসোসিয়েশন এই ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিল । কিন্তু শহরের আনুমানিক 25,000 পেইং গেস্ট ফেসিলিটির কাছে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি ৷ সারা দেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোটার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন ৷