নয়াদিল্লি, 26 ডিসেম্বর: জম্মু ও কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সঙ্গে জোটের বিষয়টি মঙ্গলবার দলের নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা করবেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ পাশাপাশি পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে জোট নিয়েও আলোচনা হবে ৷ একই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ধারা 370 বাতিল নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থানও নির্ধারণ করা হবে সেখানে ৷
2023 সালের শুরুতে যখন ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে কাশ্মীরে পৌঁছেছিলেন রাহুল গান্ধি, সেই সময় তাঁর পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা ও পিডিপি-র মেহবুবা মুফতি ৷ তার পর থেকেই এই দুই দলের সঙ্গে আঞ্চলিকস্তরের জোটের সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে ৷ ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি জাতীয়স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের বৈঠকেও উপস্থিত থেকেছেন ৷
এই নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে এআইসিসি-র তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভরতসিং সোলাঙ্কি বলেন, “ইন্ডিয়া জোট শক্তিশালী হচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের দেখতে হবে কিভাবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন লড়তে হবে এবং দলের কৌশল কী হওয়া উচিত । রাহুল গান্ধি এবং মল্লিকার্জুন খড়গে 26 ডিসেম্বর একটি পর্যালোচনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন । তাঁরা রাজ্য নেতাদের বক্তব্য শুনতে চান ৷”
এর আগে জম্মু ও কাশ্মীরে লোকসভার ছ’টি আসন ছিল ৷ তখন অবশ্য লাদাখ জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ ছিল ৷ 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও বিজেপি তিনটি করে আসন জিতেছিল ৷ ওই ভোটের পর ক্ষমতায় এসে 2019 সালের 5 অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে দেয় মোদি সরকার ৷ বাতিল করা হয় সংবিধানের ধারা 370৷ জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা সরিয়ে নেওয়া হয় ৷ লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয় ৷ আর জম্মু ও কাশ্মীর হয় আরও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৷
ধারা 370 বাতিল ও তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্বন্ধে কাশ্মীরের মানুষ কী মনে করছেন, এই নিয়ে গত 16 ডিসেম্বর কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব একটি আলোচনা সভা করে ৷ ভরতসিং সোলাঙ্কির দাবি, কাশ্মীরের মানুষ ধারা 370 সরে যাওয়ার ফলে সমস্যায় পড়েছেন ৷ এই বিষয়টি পর্যালোচনা বৈঠকে উঠে আসবে ৷
জম্মু ও কাশ্মীরে কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি তথা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য গুলাম আহমেদ মির জানান, এই মুহূর্তে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে গত 16 ডিসেম্বরের সম্মেলনে রেজোলিউশন পাশ করা হয়েছে ৷ তিনি বলেন, “চার বছর আগে, রাজ্যকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে দেওয়া হয়েছিল । আমরা জম্মু ও কাশ্মীরে রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধার এবং বিধানসভা নির্বাচন চাই । মানুষ হারিয়েছে তাঁদের পরিচয়, জমি ও চাকরির অধিকার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার ।”
অন্যদিকে আম আদমি পার্টির সঙ্গে পঞ্জাবে জোট নিয়ে এ দিন যে পর্যালোচনা হতে পারে কংগ্রেসের বৈঠকে, তা নিয়ে ওই রাজ্যে এআইসিসি-র ভারপ্রাপ্ত নেতা চেতন চৌহান বলেন, “দেখুন, জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন হাইকমান্ড । হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তাই মেনে চলব । যাই হোক, রাজ্য ইউনিট বেশ কয়েকবার নেতৃত্বের কাছে আপের সঙ্গে নির্বাচনী জোটের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা রাজ্যের 13টি লোকসভা আসনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি । আমরা সমস্ত সংসদীয় আসনে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করছি এবং আপ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনমূলক কর্মসূচি তৈরি করছি ।”
কংগ্রেসের একই সমস্যা রয়েছে দিল্লিতেও ৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল জাতীয়স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকে কংগ্রেসের আছে৷ রাজ্যস্তরে তারা পঞ্জাবের মতো দিল্লিতেও কংগ্রেসের বিরোধী ৷ তাই দিল্লির কংগ্রেস নেতারাও পঞ্জাবের নেতাদের মতো আপে জোটে অনাগ্রহী ৷ কিন্তু শেষ সিদ্ধান্তের ভার হাইকমান্ডের হাতে৷ তাই শেষপর্যন্ত কী হয়, সেটাই দেখার !
আরও পড়ুন: