শ্রীনগর (জম্মু ও কাশ্মীর), 30 জানুয়ারি: 31 অক্টোবর 1984 ও 21 মে 1991 ৷ এই দুই তারিখের মধ্য়ে ব্যবধান প্রায় সাড়ে ছ’বছরের ৷ প্রথমটিতে হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধিকে (Indira Gandhi) ৷ আর দ্বিতীয় রাজীব গান্ধির (Rajiv Gandhi) হত্যার তারিখ ৷ দু’জনেই হত্যার সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ৷ ফলে সেই ঘটনা সারা ভারতে আলোড়ন তৈরি করেছিল ৷ কিন্তু রাহুল গান্ধির (Rahul Gandhi) মনের অবস্থা এই দু’টি কেমন ছিল ? কীভাবে তিনি খবর পেয়েছিলেন ? সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে দাঁড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ৷
ভারত জোড়ো যাত্রা: 2022 সালের 7 সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেন রাহুল গান্ধি ৷ ডিসেম্বরের শেষদিকে যাত্রার প্রথম পর্যায় শেষ হয় ৷ নতুন বছরের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় এই কর্মসূচি আবার শুরু করেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ৷ সোমবার শ্রীনগরে সেই যাত্রা শেষ হল ৷ দেশের সব রাজ্য না ঘুরলেও একাধিক রাজ্য ঘুরেছেন রাহুল গান্ধি ৷ হেঁটেছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ৷
রাহুলের মুখে হিংসামুক্তির কথা: যাত্রা শেষে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে ভাষণ দেন রাহুল গান্ধি ৷ সেখানে দেশ থেকে হিংসামুক্তির কথা বলেন তিনি ৷ হিংসার জেরে মানুষের মনে কী হয়, তা যাঁরা ভুক্তভোগী শুধু তাঁরাই বোঝেন বলে জানিয়েছেন রাহুল ৷ এই নিয়ে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও (Ajit Doval) ৷
তাঁর কথায়, ‘‘আমি হিংসাকে বুঝি৷ হিংসা সহ্য করেছি ৷ দেখেছি ৷ যাঁরা সহ্য করেননি, দেখেননি, তাঁদের এই বিষয় বুঝতে পারবেন না ৷ মোদি, শাহ, আরএসএসের লোকেরা হিংসা দেখেনি ৷’’ আর এই কথা বলতে বলতেই তিনি ইন্দিরা গান্ধি ও রাজীব গান্ধির হত্যার প্রসঙ্গ তুলে আনেন ৷
ইন্দিরার হত্যা নিয়ে রাহুল গান্ধি: 1984 সালের 31 অক্টোবর হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধিকে ৷ তিনি তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ৷ সরকারি বাসভবনেই দেহরক্ষীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর ৷ রাহুল সেই সময় স্কুলে ৷ এদিন কাশ্মীরের তুষারপাত উপেক্ষা করে ভাষণ দিতে গিয়ে সেই স্মৃতি শোনান রাহুল ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি তখন 14 বছরের ৷ সকালে স্কুলে ছিলাম ৷ ভূগোলের ক্লাস চলছিল ৷ শিক্ষক এসে বলেন রাহুল তোমাকে প্রিন্সিপাল ডাকছেন ৷ আমি বদমাশ ছিলাম ৷ ভেবেছিলাম মার খেতে হবে ৷ কিন্তু সেখানে যাওয়ার সময় শিক্ষককে দেখে অন্যরকম লেগেছিল ৷’’
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বারবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ মাঝে মাঝে চুপ হয়ে যাচ্ছিলেন ৷ কয়েক সেকেন্ড সময় আবার বলতে শুরু করছিলেন ৷ সেভাবেই তিনি এই নিয়ে আরও বললেন, ‘‘প্রিন্সিপাল বললেন, ‘তোমার বাড়ি থেকে ফোন এসেছে ৷’ ওই কথা শুনেই বুঝেছিলাম কিছু খারাপ হয়েছে ৷ মায়ের সঙ্গে একজন মহিলা কাজ করেন, তিনি চিৎকার করে বলছিলেন যে ঠাকুমাকে গুলি করে দেওয়া হয়েছে ৷’’
এর পর রাহুলের সংযোজন, তিনি সেখান থেকে সোজা ঘটনাস্থলে যান ৷ যাওয়ার সময় প্রিয়াঙ্কাকেও স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তাঁর বাবা রাজীব গান্ধি ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন ৷ মা সোনিয়া গান্ধি পুরো ঘটনায় একেবারে শোকস্তব্ধ হয়ে যান ৷
রাজীব গান্ধির মৃত্যু প্রসঙ্গ রাহুল: ইন্দিরা গান্ধির প্রয়াণের পর প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গান্ধি ৷ 1991 সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁকে হত্যা করা হয় ৷ একানব্বইয়ের 21 মে-র সেই ঘটনা নিয়েও এদিন জানিয়েছেন রাহুল ৷ তিনি বলেন, ‘‘এর 6-7 বছর পর আমি আমেরিকায় ছিলাম ৷ আবার টেলিফোন এল ৷ বাবার এক বন্ধু ফোন করেছিলেন ৷ তিনি বললেন, ‘খারাপ খবর আছে ৷’ আমি বললাম, বাবা মারা গিয়েছে !’’
কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতির বক্তব্য, কাছের মানুষকে হত্যা করা হলে, সেই নিয়ে ফোন এলে মনের মধ্যে কী চলে, তা তিনি বোঝেন ৷ এই কষ্ট কাশ্মীরের মানুষ, সিআরপিএফ ও সেনা বাহিনীর যে জওয়ানরা শহিদদের পরিবারও বোঝে ৷ কিন্তু মোদি-শাহ-ডোভালদের পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয় ৷
আরও পড়ুন: দেশকে হিংসামুক্ত করাই ভারত জোড়ো যাত্রার লক্ষ্য, শ্রীনগরে বললেন রাহুল