নয়াদিল্লি, 27 অক্টোবর: গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ভারতের 8 জন প্রাক্তন নৌসেনা অফিসারকে সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে কাতারের এক আদালত ৷ বিষয়টিকে দিল্লির কাছে নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে ৷ গত মাসে দিল্লির জি-20 শীর্ষ সম্মেলনের পর পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে ভারতের এই কূটনৈতিক দ্বৈরথ নয়া মাত্রা যোগ করেছে ৷
উল্লেখ্য, জি-20 সম্মেলনের ঠিক পরেপরেই প্রবল কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয় ভারত ও কানাডার মধ্যে ৷ কানাডার মাটিতে খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় ভারত সরকারের এজেন্টদের হাত থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ৷ এরপরেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নজিরবিহীন অবনমন দেখা যায় ৷
এরপরের ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম এশিয়াতে ৷ যেখানে আজারবাইজানের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের সাহায্যপ্রাপ্ত আর্মেনিয়ার হাতছাড়া হয় নাগোর্ন-কারাবাখ অঞ্চলটি ৷ জি-20 এর পর কৃটনৈতিক দিক দিয়ে ভারত তৃতীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে মালদ্বীপে ৷ যেখানে রাষ্ট্রপতি ভোটে জয়লাভ করেছে চিনপন্থী একটি দল ৷ পরাজিত হয়েছে ভারতপন্থী ক্ষমতাসীন দলটি ৷ গত প্রায় দেড় মাসের এই ঘটনাক্রমের মধ্যেই এবার সামনে এসেছে কাতারের খবরটি ৷ বৃহস্পতিবার ভারতের 8 প্রাক্তন নৌ-সেনা আধিকারিককে কাতারের কোর্ট অফ ফার্স ইনস্ট্যান্স দ্বারা মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানোর বিষয়টি কার্যত স্তম্ভিত করে দিয়েছে এদেশের বিদেশমন্ত্রককে ৷ প্রাথমিকভাবে বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ওই পুরো রায়ের নথি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ৷ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টিকে বিচার করা হচ্ছে, এবং বিষয়টি উপর নজর রাখা হচ্ছে ৷ ওই ভারতীয়দের যাবতীয় আইনি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে বলেও ভারতচের তরফে জানান হয়েছে ৷ বিষয়টি নিয়ে কাতার সরকারের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: কাতারে মৃত্যুদণ্ড আট ভারতীয় নৌসেনার! আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে বিদেশমন্ত্রক
এই প্রাক্তন 8 ভারতীয় নৌ-বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কাতারের মূল অভিযোগ, তারা ইতালিয় প্রযুক্তিতে তৈরি সাবমেরিনের গোপন তথ্য চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই ভারতীয়দের দোষী সাব্যস্ত করে তাদের সাজা ঘোষণা হলে, যে সংস্থার হয়ে কাজ করতে তারা কাতারে গিয়েছিলেন সেই সংস্থার ওমানি মালিককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে ইটিভি ভারতকে ইরাক ও জর্ডনে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত আর দয়াকর, যিনি অতীতে কাতারে ভারতীয় দূতাবাসেও কর্মরত ছিলেন তিনি জানিয়েছেন, আদালতের রায় অবাক করার মতো ৷ তাঁর মতে, ভারতীয়দের শাস্তি ঘোষণা করা হল অথচ সংস্থার ওমানি কর্তাকে ছেড়ে দেওয়া হল এটা খুবই আবাক করার মতো ৷ কাতারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদি দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে ৷ 2008 সালে মনমোহন সিংয়ের কাতার সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নয়া জায়গায় পৌঁছে দিযেছিল ৷ তারপর কাতারের আমির ভারতে এসেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিও সে দেশে গিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত প্রাক্তন নৌসেনাদের মুক্তির দাবিতে সরব কংগ্রেস
ভারতকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় কাতারের উপরে ৷ প্রচুর ভারতীয় কর্মী কাতারে কর্মরত ৷ এক্ষেত্রে ভারত-কাতার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও উল্লেখযোগ্য ৷ প্রায় 8 লক্ষ ভারতীয় সেখানে কর্মরত অথবা বসবাস করেন ৷ দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় 15 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ৷ ইউপ্রো, টিসিএস, মহিন্দ্রা টেক, লার্সেন অ্যান্ড টুবরোর মতো সংস্থার দফতর আছে কাতারে ৷ তবে অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের মতভেদও ঘটেছে ৷ যেগুলির মধ্যে জাকির নায়েকের কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া, মহম্মদকে নিয়ে এক বিজেপি নেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য ইত্যাদি রয়েছে ৷ বিশেষজ্ঞদের আশা, যেহেতু এই সাজার বিষয়টি বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে আছে ও এখনও অনেকটা আইনি লড়াই বাকি, তাই রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক টেবিলে এই সমস্যার সমাধান মিললেও মিলতে পারে ৷