নয়াদিল্লি, 19 অক্টোবর : মহিলা অস্ত্রে এ বার বিজেপি-কে ঘায়েল করার ঘোষণা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরার । ভরসা করে তাঁর কাঁধে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব সঁপেছে দল । সেই গুরুদায়িত্ব সার্থক ভাবে পালন করতে এ বার তূণ থেকে তির বার করলেন রাজীব তনয়া ৷ জানিয়ে দিলেন, উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীদের জন্য 40 শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখবে কংগ্রেস ৷
সোমবার মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে নয়া সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেন প্রিয়াঙ্কা ৷ তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মেয়েদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ৷ যে মেয়েরা পরিবর্তন চান, তাঁদের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ৷’’ একই সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার সতর্কবার্তা, ‘‘টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতাই শেষ কথা ৷’’
এই মুহূর্তে যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভায় নারীকল্যাণের মতো হাতে গোনা কয়েকটি দফতরেই মহিলাদের উপস্থিতি রয়েছে । মহিলাদের পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়ার পরিবর্তনে, তাঁদের উপর পুরুষের নিয়ন্ত্রণ থাকার পক্ষেও একাধিক বার মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে । এমনকি গ্রামসভা এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলের তরফে নির্বাচনে মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ এলেও, তা খারিজ করে দেন যোগী ।
তই দ্বিতীয় বার উত্তরপ্রদেশের মসনদে যোগীর অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়ে তাঁর এই অবস্থানকেই চ্যালেঞ্জ করছেন প্রিয়াঙ্কা । এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও খোঁচা দেন তিনি ৷ বলেন, ‘‘কিছু দল ভাবে, 2 হাজার টাকার এলপিজি সিলিন্ডার দিয়েই মহিলাদের তুষ্ট করা সম্ভব ৷ কিন্তু এ বার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় সম্পূর্ণ ভাবেই যোগদান করবেন মহিলারা ৷’’
গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ধর্ষণ এবং মহিলা নির্যাতনের কথাও উঠে আসে প্রিয়াঙ্কার বক্তব্যে ৷ তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার উন্নাওয়ের যে মেয়েকে আগুনে পুড়ে মরতে হয়েছে, হাথরসের যে মেয়েটি এখনও বিচার পায়নি, লখিমপুর খেরিতে যে মেয়েটি আমাকে বলেছিল সে প্রধানমন্ত্রী হতে চায়, তাদের সকলের জন্য এই সিদ্ধান্ত ৷ একমাত্র মহিলারাই পারবেন এই ঘৃণার রাজনীতিতে ইতি টানতে ৷ ধর্মের রাজনীতি থেকে দেশকে বার করে আনতেই হবে ৷ আর সেই দায়িত্ব নিতে হবে মহিলাদের নিজেদের ৷ ’’
প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের তরফে ইতিমধ্যেই আবেদনপত্র সংগ্রহ করার উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ আগামী 15 নভেম্বর থেকে আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন ৷ প্রিয়াঙ্কা আরও জানিয়েছেন, তাঁর হাতে সব থাকলে, রাজনীতিতে তিনি মহিলাদের 50 শতাংশ সংরক্ষণ দিতেন ৷
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মূলত জাতপাতের সমীকরণই গুরুত্ব পায় ৷ সংখ্যালঘু এবং দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের কারণে বিজেপি ইতিমধ্যেই ব্রাহ্মণভোট একত্রীকরণে নেমে পড়েছে ৷ তবে রাজপুত যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করা নিয়ে উচ্চবর্ণের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে ৷ তাই ব্রাহ্মণদের সার্বিক ভোট পেতেও বেশ কসরত করতে হবে বিজেপি-কে । সেই পরিস্থিতিতেই মহিলাদের তরুপের তাস করে ভোটের ময়দানে নেমে পড়ল কংগ্রেস ।
তবে এই ঘোষণার সঙ্গে কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কার অবস্থান নিয়েও নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত মিলছে । 2017 সালেই প্রিয়ঙ্কাকে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ করতে চেয়েছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর । কিন্তু তাঁর এই ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়নি । সে নিয়ে রাহুল গান্ধি এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন প্রশান্ত । তবে উত্তরপ্রদেশ, যা কি না গান্ধি পরিবারের নির্বাচনী ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত, সাম্প্রতিক কালে সেখানে প্রিয়াঙ্কার সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো । হাথরস থেকে লখিমপুর খেরি, বার বার রাজ্যে ছুটে গিয়েছেন তিনি । যোগীর পুলিশের হাতে বন্দিও হয়েছেন । তাহলে কি পারিবারিক প্রথা মেনে আগামী দিনে উত্তরপ্রদেশ থেকেই নির্বাচনী যাত্রা শুরু করবেন প্রিয়াঙ্কা? এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলেও ।