বালাসোর, 3 জুন: একসঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তিনটি ট্রেন ৷ 300 ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা ৷ তারপরেই প্রাথমিক তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ ওই রিপোর্ট বলছে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সম্ভবত মেন লাইনের বদলে ট্র্যাক বদলে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে ৷ বাহানগা বাজার স্টেশনের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রেনে গিয়ে ধাক্কা মারে সেটি । ফলে সিগনালিংয়ের ত্রুটি হয়েছিল না করমণ্ডলের ড্রাইভারের ভুলেই এহেন ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে ৷
জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বগিগুলিতে গিয়ে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় । প্রাথমিক রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য় অনুযায়ী, করমণ্ডল এক্সপ্রেস 128 কিলোমিটার গতিতে চলছিল ৷ অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস চলছিল 116 কিলোমিটার গতিবেগে । সূত্রের খবর, তদন্তের প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে রেলওয়ে বোর্ডেই জমা পড়েছে ৷
লুপ লাইন কী ?
ভারতীয় রেলওয়ের লুপ লাইনগুলি বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ৷ লুপ লাইনগুলি সাধারণত 750 মিটার দৈর্ঘ্যের হয় ৷ এতে যাতে একাধিক ইঞ্জিন-সহ পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের পণ্যবাহী ট্রেনকে দাঁড় করানো যায় । রেল সূত্রে খবর, ট্রেন দুটিতে প্রায় দু'হাজার যাত্রী ছিল । অসমর্থিত সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে 300 জন যাত্রী ৷ আহতের সংখ্যা 1000 ছাড়িয়েছে ।
ট্রেন দুর্ঘটনার পরেই একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনার, দক্ষিণ পূর্ব সার্কেল । প্রাথমিক রিপোর্ট বা রেলওয়ের অন্যান্য সূত্রে এখনও পর্যন্ত নাশকতার কোনও সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি ।
রেলওয়ে সুরক্ষা কবচ:
রেলওয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ওই রুটে রেলওয়ে সুরক্ষা কবচ উপলব্ধ ছিল না ৷ ভারতীয় রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, "রেলওয়ে নেটওয়ার্ক জুড়ে কবচ, অ্যান্টি-ট্রেন কলিশন সিস্টেম ইনস্টল করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে । যদিও ওই রুটে কবচ উপলব্ধ ছিল না ।
প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ট্রেন নম্বর 12841-এর (করমণ্ডল এক্সপ্রেস) জন্য আপ মেইন লাইনের জন্য সংকেত দেওয়া হয়েছিল ৷ যদিও ট্রেনটি লুপ লাইনে প্রবেশ করে ৷ তারপরেই পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে লাইনচ্যুত হয় । এরই মধ্যে, ট্রেন নম্বর 12864 ডাউন (বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর) মেইন লাইনের মধ্য চলে আসে ৷ দু'টি বগি লাইনচ্যুত হয় ।
কবচ কী ?
23 শে মার্চ 2022-এ, রেল মন্ত্রক কবচ নামক দেশীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা (ATP) সিস্টেমের ঘোষণা করেন । রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় তৈরি কবচ ভারতীয় রেলওয়ের জাতীয় সুরক্ষা সিস্টেম হিসাবে গৃহীত হয়েছে ।
কবচকে ডিজাইন করা হয়েছে লোকোমোটিভ পাইলটদের সিগন্যাল পাসিং অ্যাট ডেঞ্জার (SPAD) এড়াতে ৷ এর সাহায্যে অতিরিক্ত গতি এড়াতে এবং ঘন কুয়াশার মতো প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় ট্রেন পরিচালনার সময় সহায়তা প্রদান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে । প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেক প্রয়োগ করে সিস্টেমটি ট্রেনের গতির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে । কবচ আদতে প্রাথমিকভাবে একটি সংকেত দেয় ৷ একই লাইনে নির্ধারিত দূরত্বে অন্য কোনও ট্রেন থাকলে সংকেত দেয় কবচ ৷
আরও পড়ুন: বালাসোর বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যাত্রী সুরক্ষার নির্দেশ, ওড়িশায় এসে গলা বুজল মোদির
