ETV Bharat / bharat

Political Changes of BJP: সরকার গঠনে বাজপেয়ীর মতাদর্শে ‘অটল’ মোদি-শাহ, কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

বিজেপি নেতা বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাইরে গিয়েও অটলবিহারী বাজপেয়ী ভারতীয় রাজনীতির এক মহীরুহ । তবে তাঁর দল আজও তাঁর দেখানো পথে চলছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে রাজনীতির কারবারীদের । এমতাবস্থায় আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদি-শাহর বিজেপি কি ‘অটল-সরণি’তে হাঁটবে কি না, তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ৷ লিখেছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সুরজিৎ ঘোষ ৷

Etv Bharat
Political Changes of BJP
author img

By

Published : Aug 16, 2023, 10:45 PM IST

Updated : Aug 16, 2023, 11:02 PM IST

কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

কলকাতা, 16 অগস্ট: প্রথম ইউপিএ সরকারের সময় লোকসভার স্পিকার ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় । কংগ্রেসকে বাইরে থেকে সমর্থন করা বামেরা স্পিকার পদ নিয়েছিল । সরকার তৈরি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই স্পিকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ উঠল । এখনও যেমন ওঠে আরকি ! বিজেপি সাংসদরা লোকসভায় কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না, এই দাবিতেই চিঠি দিলেন । সেই তালিকার একটি নাম দেখে অবাক হয়ে যান সোমনাথ ।

তিনি ভাবতে পারেননি, তাঁর এত যুগের বন্ধু তথা দেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাম ওই তালিকায় থাকবে । শোনা যায়, সন্ধ্যায় ফোন করে বাজপেয়ীকে নিজের অসন্তোষের কথাও জানান সোমনাথ । সদাহাস্য বাজপেয়ী স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বলেছিলেন, “দাদা, এটাকেই পার্টি লাইন বলে। ” পালটা সোমনাথ জানতে চান, পার্টি লাইন আবার কী জিনিস ? বিষয়টি বোঝাতে অটল একটি প্রস্তাব দেন ৷ সোমনাথকে বলেন, আগামী রবিরার তাঁর বাড়িতে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে । সেখানে সিপিএম নেতারা থাকবেন । যাবেন বাজপেয়ীও । কিন্তু তিনি যে যাচ্ছেন একথা আগে থেকে কাউকে বলা হবে না । অনুষ্ঠানে দলীয় সতীর্থদের যে মনোভাবের সামনে সোমনাথকে পড়তে হবে, সেটাই পার্টি লাইন !

রাজনৈতিক জীবনে বরাবর এমনই বাস্তববাদী ছিলেন বাজপেয়ী । আরএসএস-এর প্রবল চাপ উপেক্ষা করেও বিজেপিকে ‘মৃদু হিন্দুত্ব’র দিকেই নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । রাজনীতির সর্বোচ্চ মঞ্চে থাকার সময়ও চেয়েছিলেন, তাঁদের সময়কালকে উন্নয়নের জন্যই মনে রাখুক দেশ । স্বর্ণ চতুর্ভুজের মতো প্রকল্প এই ভাবনারই ফসল । পাশাপাশি, সকলকে নিয়ে চলার একটা মরিয়া চেষ্টাও দেখা গিয়েছে তাঁর মধ্যে । ঘটনাচক্রে প্রথম এনডিএ সরকারকে সমর্থন করত ছোট-বড় মিলিয়ে 24টি দল । এরকমই নানা কারণে বোধহয় বাজপেয়ী সম্পর্কে বিরোধীরা বলতেন, ‘রাইট ম্যান ইন রং পার্টি ।’

বাজপেয়ী জমানা পেরিয়ে এসেছে দেশ । বিজেপিতেও ‘মোদি-শাহ যুগ’ শুরু হয়েছে প্রায় এক দশক আগে । এককালে যে বিজেপি ছিল পার্টি উইথ ডিফারেন্স, সেখানে নাকি আজকাল আদর্শের সঙ্গে আপোস হয় । রাজনৈতিক বিরোধীদের বক্তব্য এমনটাই । ব্যাপারটা কী তা বোঝাতে অনেকেই বাজপেয়ীর এক ঐতিহাসিক ভাষণের একটি বিশেষ অংশ তুলে ধরছেন ।

আরও পড়ুন: চিনা দূতাবাসে 800 ভেড়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বাজপেয়ী !

1996 সালে 13 দিন সরকার চালানোর পর প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। লোকসভায় দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করার সময় তিনি জানান, অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ তাঁর ছিল । কিন্তু এভাবে সরকার গঠন করার কোনও অভিপ্রায় তাঁর নেই । এখানে আজকের বিজেপি আলাদা । অরুণাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রে বিরোধীদের সরকার ফেলেছে বিজেপি । গোয়া এবং মণিপুরে কংগ্রেস বড় দল হলেও সরকার গড়েছে বিজেপি । এই বিষয়টাকে আদর্শচ্যুতি হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র মনে করেন, বিজেপির মতো নির্দিষ্ট মতাদর্শ নিয়ে চলা রাজনৈতিক দলের পক্ষে এই ধরনের কার্যকলাপ আবশ্যিকভাবেই চ্যুতি । তাঁর কথায়, “বামেদের মতোই বিজেপির একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ আছে । সেটা কারও পছন্দ হতে পারে আবার নাও পারে । কিন্তু বিজেপির মতো রেজিমেন্টেড দলের পরিচালিত হওয়ার একটা নিজস্ব উপায় আছে । ক্ষমতা দখলের জন্য অন্য দল থেকে বিধায়কদের নিয়ে আসা আদর্শ থেকে চ্যুত হওয়ার লক্ষণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই । তৃণমূলের মতো দলে এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয় । কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে এরকম কিছু হলে তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায় ।”

আরও পড়ুন: কীভাবে বাংলায় পদ্ম ফোটাল BJP

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন । তার আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে জিতে কংগ্রেসের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে । তার উপর মোদি-পদবি বিতর্কে সাংসদ পদ খোয়ানোর পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা আবারও ফিরে পেয়েছেন রাহুল গান্ধি । এটাও কংগ্রেসের মনোবলের পালে হাওয়া দিচ্ছে ।

এমতাবস্থায় আগামিদিনে কোন বিজেপিকে দেখা যাবে ? শুভময় মনে করেন, নির্বাচনের আগে সরকার গঠনকেই পাখির চোখ করবে বিজেপি । সেটাই স্বাভাবিক । সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদারনৈতিক মনোভাবের সঙ্গেই জায়গা করে নিতে পারে উগ্র জাতীয়তাবাদ । শুধু তাই নয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও চোখে পড়তে পারে । নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তিন তালাকের প্রসঙ্গটি তুলে আনলেন শুভময় । তিনি বলেন, “তিন তালাকের মতো বিষয়ে বিজেপি নেতারা যা বলছেন তা অবশ্যই উদারনৈতিক ভাবনার ফসল ।” তবে যেখানে গিয়ে সরকারে ফিরে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার প্রসঙ্গ আসবে সেখানে উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে বিজেপি ঝুঁকতে পারে বলে তাঁর অনুমান ।

কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

কলকাতা, 16 অগস্ট: প্রথম ইউপিএ সরকারের সময় লোকসভার স্পিকার ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় । কংগ্রেসকে বাইরে থেকে সমর্থন করা বামেরা স্পিকার পদ নিয়েছিল । সরকার তৈরি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই স্পিকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ উঠল । এখনও যেমন ওঠে আরকি ! বিজেপি সাংসদরা লোকসভায় কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না, এই দাবিতেই চিঠি দিলেন । সেই তালিকার একটি নাম দেখে অবাক হয়ে যান সোমনাথ ।

তিনি ভাবতে পারেননি, তাঁর এত যুগের বন্ধু তথা দেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাম ওই তালিকায় থাকবে । শোনা যায়, সন্ধ্যায় ফোন করে বাজপেয়ীকে নিজের অসন্তোষের কথাও জানান সোমনাথ । সদাহাস্য বাজপেয়ী স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বলেছিলেন, “দাদা, এটাকেই পার্টি লাইন বলে। ” পালটা সোমনাথ জানতে চান, পার্টি লাইন আবার কী জিনিস ? বিষয়টি বোঝাতে অটল একটি প্রস্তাব দেন ৷ সোমনাথকে বলেন, আগামী রবিরার তাঁর বাড়িতে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে । সেখানে সিপিএম নেতারা থাকবেন । যাবেন বাজপেয়ীও । কিন্তু তিনি যে যাচ্ছেন একথা আগে থেকে কাউকে বলা হবে না । অনুষ্ঠানে দলীয় সতীর্থদের যে মনোভাবের সামনে সোমনাথকে পড়তে হবে, সেটাই পার্টি লাইন !

রাজনৈতিক জীবনে বরাবর এমনই বাস্তববাদী ছিলেন বাজপেয়ী । আরএসএস-এর প্রবল চাপ উপেক্ষা করেও বিজেপিকে ‘মৃদু হিন্দুত্ব’র দিকেই নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । রাজনীতির সর্বোচ্চ মঞ্চে থাকার সময়ও চেয়েছিলেন, তাঁদের সময়কালকে উন্নয়নের জন্যই মনে রাখুক দেশ । স্বর্ণ চতুর্ভুজের মতো প্রকল্প এই ভাবনারই ফসল । পাশাপাশি, সকলকে নিয়ে চলার একটা মরিয়া চেষ্টাও দেখা গিয়েছে তাঁর মধ্যে । ঘটনাচক্রে প্রথম এনডিএ সরকারকে সমর্থন করত ছোট-বড় মিলিয়ে 24টি দল । এরকমই নানা কারণে বোধহয় বাজপেয়ী সম্পর্কে বিরোধীরা বলতেন, ‘রাইট ম্যান ইন রং পার্টি ।’

বাজপেয়ী জমানা পেরিয়ে এসেছে দেশ । বিজেপিতেও ‘মোদি-শাহ যুগ’ শুরু হয়েছে প্রায় এক দশক আগে । এককালে যে বিজেপি ছিল পার্টি উইথ ডিফারেন্স, সেখানে নাকি আজকাল আদর্শের সঙ্গে আপোস হয় । রাজনৈতিক বিরোধীদের বক্তব্য এমনটাই । ব্যাপারটা কী তা বোঝাতে অনেকেই বাজপেয়ীর এক ঐতিহাসিক ভাষণের একটি বিশেষ অংশ তুলে ধরছেন ।

আরও পড়ুন: চিনা দূতাবাসে 800 ভেড়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বাজপেয়ী !

1996 সালে 13 দিন সরকার চালানোর পর প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। লোকসভায় দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করার সময় তিনি জানান, অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ তাঁর ছিল । কিন্তু এভাবে সরকার গঠন করার কোনও অভিপ্রায় তাঁর নেই । এখানে আজকের বিজেপি আলাদা । অরুণাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রে বিরোধীদের সরকার ফেলেছে বিজেপি । গোয়া এবং মণিপুরে কংগ্রেস বড় দল হলেও সরকার গড়েছে বিজেপি । এই বিষয়টাকে আদর্শচ্যুতি হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র মনে করেন, বিজেপির মতো নির্দিষ্ট মতাদর্শ নিয়ে চলা রাজনৈতিক দলের পক্ষে এই ধরনের কার্যকলাপ আবশ্যিকভাবেই চ্যুতি । তাঁর কথায়, “বামেদের মতোই বিজেপির একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ আছে । সেটা কারও পছন্দ হতে পারে আবার নাও পারে । কিন্তু বিজেপির মতো রেজিমেন্টেড দলের পরিচালিত হওয়ার একটা নিজস্ব উপায় আছে । ক্ষমতা দখলের জন্য অন্য দল থেকে বিধায়কদের নিয়ে আসা আদর্শ থেকে চ্যুত হওয়ার লক্ষণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই । তৃণমূলের মতো দলে এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয় । কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে এরকম কিছু হলে তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায় ।”

আরও পড়ুন: কীভাবে বাংলায় পদ্ম ফোটাল BJP

বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন । তার আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে জিতে কংগ্রেসের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে । তার উপর মোদি-পদবি বিতর্কে সাংসদ পদ খোয়ানোর পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তা আবারও ফিরে পেয়েছেন রাহুল গান্ধি । এটাও কংগ্রেসের মনোবলের পালে হাওয়া দিচ্ছে ।

এমতাবস্থায় আগামিদিনে কোন বিজেপিকে দেখা যাবে ? শুভময় মনে করেন, নির্বাচনের আগে সরকার গঠনকেই পাখির চোখ করবে বিজেপি । সেটাই স্বাভাবিক । সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদারনৈতিক মনোভাবের সঙ্গেই জায়গা করে নিতে পারে উগ্র জাতীয়তাবাদ । শুধু তাই নয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও চোখে পড়তে পারে । নিজের বক্তব্যের সমর্থনে তিন তালাকের প্রসঙ্গটি তুলে আনলেন শুভময় । তিনি বলেন, “তিন তালাকের মতো বিষয়ে বিজেপি নেতারা যা বলছেন তা অবশ্যই উদারনৈতিক ভাবনার ফসল ।” তবে যেখানে গিয়ে সরকারে ফিরে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার প্রসঙ্গ আসবে সেখানে উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে বিজেপি ঝুঁকতে পারে বলে তাঁর অনুমান ।

Last Updated : Aug 16, 2023, 11:02 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.