আগরতলা, 8 অগস্ট : ত্রিপুরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনল তৃণমূল (Trinamool) ৷ তাদের অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের এসকর্ট দেওয়ার নাম করে ভুল পথে নিয়ে যায় পুলিশ, যেখানে বিজেপির সমর্থকরা জটলা করে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ সেখানে তৃণমূল নেতাদের উপর হামলার পর পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে তাঁদের থানায় নিয়ে গিয়ে, পরে নাইট কার্ফু ভাঙার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করে ৷ ত্রিপুরায় আইনের শাসন নয়, শাসনের আইন চলছে বলে তোপ দাগেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরই মধ্যে থানায় ব়্যাফ ডেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় ধৃত নেতাকর্মীদের ৷ তাঁদের জামিন না-পাওয়া পর্যন্ত থানাতেই বসে থাকবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ এ দিকে, আদালতে যাওয়ার পথে ফের তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়িতে বিজেপি হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
ধৃত তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবিলম্বে জামিনে মুক্তির দাবিতে আজ খোয়াই থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু ও দোলা সেন ৷ থানাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ত্রিপুরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনে তৃণমূল ৷ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগ, "পুলিশ ফাঁদে ফেলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে ৷ ভিত্তিহীন ধারায় মামলা করেছে ৷ আমরা সেগুলি প্রত্যাহার করতে বলেছিলাম ৷ এটা প্রমাণিত যে, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা সাজিয়ে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে এসেছে ৷ ওরা এই পথে আসতে চায়নি ৷ পুলিশ পাহাড়ি ফাঁকা রাস্তায় ওঁদের নিয়ে গিয়েছে, যেখানে বিজেপি সমর্থকরা জটলা বেঁধেছিল ৷ বিজেপি হামলা চালানোর পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে থানায় বসিয়ে রাখা হয় ৷ পরে সেই পুলিশই আবার নাইট কার্ফু ভাঙার অভিযোগ এনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ৷"
আরও পড়ুন: থানায় পুলিশের সঙ্গে বচসা অভিষেক-ব্রাত্যদের, বাইরে বিক্ষোভে বিজেপি
যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের গ্রেফতার না-করে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদেরই কেন গ্রেফতার করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল ঘোষ ৷ গোটা দেশের থেকে এই ঘটনা লুকিয়ে রাখার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে বিজেপির সরকার ত্রিপুরায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সব খবর নিচ্ছেন ও গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন বলে তিনি জানিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূল কি ত্রিপুরায় পরিবর্তন আনতে পারবে ?
এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "ত্রিপুরায় আইনের শাসন নয়, শাসনের আইন চলছে ৷ যারা ভিড় করছে, বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মহামারি আইন আনা হচ্ছে না ৷ বেছে বেছে তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে ৷ কারণ আমরা এসেছি ত্রিপুরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে ৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ৷ একটা বাঙালি এলে তার উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে ৷ ত্রিপুরার মানুষের প্রতি অত্যাচার হচ্ছে ৷ আমরা এর শেষ আমরা দেখে ছাড়ব ৷" পরবর্তী নির্বাচনে বিপ্লব দেবের সরকার নিশ্চিতভাবে বিদায় নেবে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷
আরও পড়ুন: লক্ষ্য 2024, তৃণমূলের নতুন স্লোগান "আবকি বার দিদি সরকার"
এ দিন ত্রিপুরা পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূল নেত্রী দোলা সেনও (Dola Sen) ৷ তাঁর অভিযোগ, "বিজেপির কথায় পুলিশ উঠছে বসছে ৷ ত্রিপুরাতে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে ৷ এখানে 2000 বিজেপি কর্মী জমায়েত করলেও মহামারি আইন ভঙ্গ হয় না ৷ অভিষেকের গাড়িতে যে লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছিল, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি ৷ অথচ আমাদের গ্রেফতার করছে ৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই ৷ পুলিশই কর্মীদের পাহাড়ে ঘেরা খোয়াইয়ে নিয়ে এসেছে ৷ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে থানায় রেখেছে ৷"
আরও পড়ুন: তেইশে ত্রিপুরা জয়ই লক্ষ্য তৃণমূলের, নজরে মহিলা-যুব ভোট
তৃণমূল নেতারা যখন খোয়াই থানায় অবস্থান বিক্ষোভ করছেন, তখনই থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী সমর্থকরা ৷ এরপর ধৃত তৃণমূল নেতাকর্মীদের আদালতে পেশ করে পুলিশ ৷ যদিও আদালতে যাওয়ার পথে ফের তৃণমূল কর্মীর গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ গোটা ঘটনার প্রতিবাদে আগামিকাল সংসদ ভবনে গান্ধিমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় অংশ নেবে তৃণমূল ৷