নয়াদিল্লি, 3 সেপ্টেম্বর: 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শনিবারই 8 সদস্যের কমিটি গঠনের গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রক ৷ কমিটির প্রধান করা হয়েছে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে ৷ যদিও ইতিমধ্যেই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে এই কমিটির সদস্য করা হলেও তিনি এই কমিটিতে যোগ দেবেন না ৷
এই কমিটি গঠনের পর থেকেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ তবে কী শীঘ্রই দেশে একসঙ্গে হতে চলছে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন? গ্রাম পঞ্চায়েত ও পৌর নির্বাচনগুলিও কী হবে একই সঙ্গে ? কবে হতে পারে এই নির্বাচন? এরফলে 2024 এর লোকসভা নির্বাচন কি এগিয়ে আসতে পারে, ইত্যাদি একাধিক প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করছে রাজনৈতিক মহলে ৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আম জনতার মধ্যেই ৷
-
Govt of India constitutes 8-member committee to examine ‘One nation, One election’.
— ANI (@ANI) September 2, 2023 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
Former President Ram Nath Kovind appointed as Chairman of the committee. Union Home Minister Amit Shah, Congress MP Adhir Ranjan Chowdhury, Former Rajya Sabha LoP Ghulam Nabi Azad, and others… pic.twitter.com/Sk9sptonp0
">Govt of India constitutes 8-member committee to examine ‘One nation, One election’.
— ANI (@ANI) September 2, 2023
Former President Ram Nath Kovind appointed as Chairman of the committee. Union Home Minister Amit Shah, Congress MP Adhir Ranjan Chowdhury, Former Rajya Sabha LoP Ghulam Nabi Azad, and others… pic.twitter.com/Sk9sptonp0Govt of India constitutes 8-member committee to examine ‘One nation, One election’.
— ANI (@ANI) September 2, 2023
Former President Ram Nath Kovind appointed as Chairman of the committee. Union Home Minister Amit Shah, Congress MP Adhir Ranjan Chowdhury, Former Rajya Sabha LoP Ghulam Nabi Azad, and others… pic.twitter.com/Sk9sptonp0
এদিন কেন্দ্রের তরফে 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে নির্দিষ্টভাবে বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে ৷ আট সদস্যের এই কমিটি কী কী বিষয় খতিয়ে দেখবে তার উল্লেখ রয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে ৷ ফলে কমিটির কাজ মূলত কী হতে চলেছে তা এই বিজ্ঞপ্তি পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যায় ৷ সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সরকারের তরফে কমিটিকে বলা হয়েছে যতদ্রুত সম্ভব এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোনও দিন বা মাস বেঁধে দিয়ে সময়সীমার উল্লেখ এই বিজ্ঞপ্তিতে নেই ৷
কী কী বিষয় খতিয়ে দেখবে এই কমিটি ?
'এক দেশ এক নির্বাচন' যদি করতে হয় সেক্ষেত্রে সংবিধানে কী কী সংশোধন প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে এই কমিটি ৷ এছাড়াও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও নিয়মে কী কী সংশোধন প্রয়োজন তাও খতিয়ে দেখে সরকারকে জানাবে এই কমিটি ৷ একই সময়ে লোকসভা, বিধানসভা, কর্পোরেশন ও পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হলে বর্তমান পরিকাঠামো ও ব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন আনতে হবে সেই বিষয়টিও এই কমিটি খতিয়ে দেখে তাদের মত জানাবে ৷ যদি একই সঙ্গে এই নির্বাচনগুলি করা না যায়, সেক্ষেত্রে পাশাপাশি কোন সময়ে এই নির্বাচনগুলি করা যেতে পারে, ক'দফায় হবে সেই নির্বাচন তাও জানাবে কমিটি ৷
রাজ্যগুলিকেও এই সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল আলাদা ভাবে পাশ করাতে হবে কি না এই বিষয়টিও দেখবে কমিটি ৷ সংবিধান সংশোধনী বিলের ক্ষেত্রে দেশের অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভার যে সমর্থন প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কি না তা দেখবে এই কমিটি ৷ যদি কোনও ক্ষেত্রে নির্বাচনী ফলাফল ত্রিশঙ্কু হয় সে ক্ষেত্রে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এই 'এক দেশ এক নির্বাচন' এ কী প্রভাব পড়বে তাও খতিয়ে দেখবে এই কমিটি ৷
একই সময়ে সব নির্বাচন করাতে হলে যে অতিরিক্ত লজিস্টিক সাপোর্ট, ইভিএম, ভোট কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজন পড়বে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেও পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে এই বাই লেভেল কমিটিকে ৷ লোকসভা, বিধানসভা, পৌর নির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে একই ইলেক্টোরাল রোল ব্যবহার করা যাবে রি না, তাও খতিয়ে দেখে সরকারকে পরামর্শ দেবে এই কমিটি ৷
আরও পড়ুন: 8 সদস্যের কমিটি গঠন, 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় কেন্দ্র !
এক্ষেত্রে মাথায় রাখা প্রয়োজন লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনগুলি জাতীয় নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করলেও পৌর নির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটের মতো স্থানীয় নির্বাচনগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশনেক তত্ত্বাবধানেই হয় ৷ এই সাংবিধানিক সংস্থারই কাজের এক্তিয়ার ও দায়িত্বের কথা আলাদাভাবে সংবিধানে বলা হয়েছে, ভোট একসঙ্গে হলে এই দুই নির্বাচন কমিশনের কর্মপন্থা কী হবে সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করবে রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ৷ বর্তমানে দেশের যেকোনও নির্বাচন হয় 5 বছর মেয়াদের লক্ষ্যে ৷ সেক্ষেত্রে যদি সব ভোট একসঙ্গে করাতে হয় তাহলে কোনও বিধানসভার মেয়াদ কমাতে হবে অথবা ভোট স্থগিত রাখতে হবে ৷ স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য ৷ কমিটিকে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে ৷
এই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, 1951-52 সাল থেকে 1967 সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনগুলি মোটামুটি একই সময়ে হত ৷ কিন্তু পরে নানা কারণে এই পরিস্থিতি পালটে যায় এবম বর্তমানে প্রায় প্রতিবছরই কোনও না কোনও রাজ্যে এক বা একাধিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ ফলে বিপুল সরাকারি অর্থ খরচ হয় ৷ উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগে একাধিকবার 'এক দেশ এক নির্বাচন'য়ের পক্ষে সওয়াল করেছেন ৷ সরকারি খরচের অপচয় বন্ধের যুক্তিও তিনি দিয়েছেন ৷ মনে করা হচ্ছে মূলত এই বিপুল আর্থিক বোঝা কমানোর বিষয়টিকে সামনে রেখেই 'এক দেশ এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করতে চাইছে কেন্দ্র ৷ যদিও এর পিছনে বিরোধীরা অন্য গন্ধ পাচ্ছে ৷ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার একসঙ্গে সব ভোট করিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ভেঙে ফেলতে চাইছে বলে বিরোধীদের আশঙ্কা ৷
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের 'এক দেশ এক ভোট' কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন অধীর চৌধুরী
আগামী 18 থেকে 22 সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে ৷ মনে করা হচ্ছে এই অধিবেশনে 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে তাদের অবস্থান সংসদে জানাতে পারে কেন্দ্র ৷ হতে পারে তার আগেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়ে দিল ৷ যদিও রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা কেন্দ্রের তরফে বেঁধে দেওয়া হয়নি ৷ যদি রিপোর্ট এর মধ্যে জমা দেওয়াও হয়, সেক্ষেত্রে এত সমস্ত দিক বিবেচনা করে, পরামর্শ-সহ তা কী করে দেওয়া সম্ভব সেই প্রশ্নও তুলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷