নয়াদিল্লি, 7 সেপ্টেম্বর: চলতি বছরের শুরুর দিকেই তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সৌদি আরব ও রাশিয়া ৷ ইতিমধ্যেই দু’দেশ ঘোষণা করেছে, বছরের শেষ পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্তই অব্যাহত থাকবে ৷ ফলে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশে পেট্রল ও ডিজেলের দাম আদৌ কমবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে ৷ গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকার রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম 200 টাকা কমানোর পর পেট্রল ও ডিজেলের দামও কমবে, এমনটাই আশা করছিলেন প্রত্যেকে । ফলে সেই আশা কতটা মেটাতে সক্ষম হবে সরকার, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷
মঙ্গলবার রাশিয়া ও সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা এই বছরের শেষ পর্যন্ত তেল উৎপাদন হ্রাস অব্যাহত রাখবে । চলতি বছরের এপ্রিলে ওপেক (পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলির সংগঠন) ও সহযোগী দেশগুলি তেল উৎপাদন হ্রাসের কথা ঘোষণা করেছিল ৷ তার উপর আরও তেল উৎপাদন হ্রাসের কথা ঘোষণা করেছিল সৌদি আরব ও রাশিয়া ৷
সৌদি প্রেস এজেন্সির বিবৃতি অনুযায়ী, পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলির (ওপেক) ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল (বিপিডি) কম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত অব্যহত রাখবে । রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন জ্বালানি মন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মস্কো চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন 3 লক্ষ ব্যারেল হ্রাস অব্যাহত রাখবে । ফলে বছরের শেষ পর্যন্ত তেল উৎপাদন কম হলে ভারতে তার কী প্রভাব পড়বে তা নিয়েই চিন্তায় বিভিন্ন মহল ৷
কী বলছেন বিশেষজ্ঞ ?
লোকসভা নির্বাচনের আগে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমবে কি না, এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে বিভিন্ন মহলে ৷ ‘‘এটি একটি রাজনৈতিক ঘুঁটি’’, ইটিভি ভারতে সমীকরণটা স্পষ্ট বোঝালেন প্রণব সেন, পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ৷ তাঁর কথায়, “সবই নির্ভর করছে সরকারের ওপর । যেহেতু বেশিরভাগ তেল কোম্পানি সরকারের মালিকানাধীন, ফলে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত সরকার নেবে কি না, সেটাই তাদের উপরেই নির্ভর করছে ।”
সেন বলেন, ‘‘তেল উৎপাদন কমানো নতুন কিছু নয় ৷ আগেও হয়েছে । এটি তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়ে থাকে । সাধারণত দেখা যায়, রাশিয়া তেল উৎপাদন কমালে বিশ্বে তার প্রভাব খুব দ্রুত পড়ে ৷ কিন্তু এবার, রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে (ইউক্রেন যুদ্ধের ফল) এটি এত দ্রুত ঘটবে না । দাম অবশ্যই বাড়বে, তবে তার জন্য অপেক্ষাও বাড়বে ।”
প্রণব সেনের কথায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত এবং অন্যান্য দেশগুলিকে তাদের তেল আমদানির উৎস বদলাতে হচ্ছে । ভারতের তেল আমদানিতে এই বছরের অগস্টে রাশিয়ার থেকে আমদানি 34 শতাংশে নেমে এসেছে, যা জুলাইয়ে 42 শতাংশ ছিল । অগস্টে, রাশিয়ার সামগ্রিক তেল সরবরাহ জুলাইয়ের তুলনায় 23 শতাংশ কমেছে । এনার্জি কার্গো ট্র্যাকার ভর্টেক্সার জানাচ্ছে, একই সময়ে ভারতের সামগ্রিক অপরিশোধিত আমদানিও 5 শতাংশ কমে প্রতিদিন 4.35 মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছেছে । ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার তেল রফতানি হ্রাসের আরেকটি কারণ এর অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ।
আরও পড়ুন: আরও দামি পেট্রল-ডিজেল, ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার নিদান বিজেপি মন্ত্রীর
বিশ্বে কী প্রভাব পড়ছে ?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল 100 ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৷ 2022 সালে তা 133 ডলার ছুঁয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় তেলের দাম ফের ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে । বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল পরিশোধনাগার রক্ষণাবেক্ষণ করে । ফলে এই সময় যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা কমে যায় । ফলে সৌদি আরব তেলের দাম ফের বাড়াতে উৎপাদন কমাতে শুরু করেছে । দু’দেশের একযোগে তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এখন প্রতি ব্যারেল 90 ডলারের উপর, যা গত বছরের অক্টোবর থেকে দেখা যায়নি ।
রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর ব্রেন্ট ক্রুড (কাঁচা তেল) এই সময়ে প্রতি ব্যারেল 75 থেকে 85 ডলারের মধ্যে থাকে ৷ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেঞ্চমার্ক ধরা হয়) প্রতি ব্যারেল প্রায় 87 ডলারের ব্যবসা করেছে । ফলত তেলের দাম বাড়ানোর উদ্দেশে রিয়াদ জুলাই মাসে প্রতিদিন 1 মিলিয়ন ব্যারেল হ্রাসের ঘোষণা করেছিল ৷ তারপর থেকে এটিকে মাসিক ভিত্তিতে বাড়িয়েছে মরুদেশ । রাশিয়া দেশের জ্বালানি মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সিদ্ধান্তটি ‘তেল বাজারের স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ওপেক দেশগুলির দ্বারা নেওয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ।’ প্রসঙ্গত, জুলাই নাগাদ একটি সংবাদসংস্থা সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষের শেষ কোয়ার্টারে আর্থিক দিক দিয়ে ভালো ফল করেছে তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলি ৷ ফলে এবার দেশে জ্বালানির দাম কমলেও কমতে পারে ৷
আরও পড়ুন: বছর-শেষে বহু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ! কমতে পারে পেট্রল-ডিজেলের দাম