কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: বিনিয়োগের জন্য কেন আদর্শ বাংলা ? প্রত্যেক শিল্প সম্মেলনে এমনটাই বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চকে তিনি বেছে নিলেন বিরোধীদের জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে ৷ একইসঙ্গে জানালেন, কেন তিনি বারবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন করেন। বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য এই সম্মেলন অত্যন্ত জরুরি বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
প্রত্যেক বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হলেই বিরোধীরা কাঠগড়ায় তোলে রাজ্য সরকারকে ৷ বিনিয়োগের খতিয়ান নিয়ে কটাক্ষ করতে ও ছাড়ে না মমতা সরকারকে ৷ বুধবার দু'দিনের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই সব কিছুরই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের সামনেই গত বাণিজ্য সম্মেলনগুলিতে বাংলায় যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, তার হিসেবও দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন করাতে আমাদের কি ভুল আছে ? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও কর্মসংস্থান জরুরি। তার জন্যই চায় বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান ছাড়া নতুন প্রজন্ম বাঁচতে পারে না। আর সেই লক্ষ্যেই এই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন।" মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশ রয়েছে ৷ বাংলার জিডিপি জাতীয় জিডিপি-র থেকেও বেশি। এখানে বিনিয়োগ করলে শিল্পপতিদের কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। আসুন বাংলায় বিনিয়োগ করুন।
গত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনগুলিতে যে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, তার পরিসংখ্যানও তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত 19.5 লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাবের বিনিয়োগ এসেছে ৷ যার মধ্যে 12 লক্ষ কোটি ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে গিয়েছে ৷ বাকি পাইপ লাইনে রয়েছে। এরপরই বিরোধীদের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি একমাত্র সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু যারা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে রাজনীতি করছে, তাদের জবাবদিহি করতে রাজি নই।"
এদিন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলায় ধর্মঘট হয় না। এখানে কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে। নারীর ক্ষমতায়নে শীর্ষে বাংলা ৷ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পেও এক নম্বরে। পথ দেখাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, শিক্ষাশ্রী। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কী হবে এই সম্মেলন করে ? কিন্তু আমাদের দেখাদেখি অন্য সব রাজ্যও এমন ধরনের সম্মেলন করছে। কারণ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সম্মেলন জরুরি।"
বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলেনের প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন, তার মধ্যে রয়েছে ওয়ান-স্টপ সিনার্জি কমিটি। শিল্পের যে কোন প্রস্তাব দ্রুত রূপায়ন করতে যে কমিটি সমস্ত দফতরকে নিয়ে কাজ করবে ৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই কমিটির মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব। এছাড়াও থাকবেন অন্যান্য দফতরের সচিব ও বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থার প্রতিনিধিরা ৷ এদিন এই মঞ্চ থেকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল ব্লক দেউচা পাঁচামি নিয়েও এদিন বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামিকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকেই সেখানে উত্তোলন শুরু হচ্ছে ৷ এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই 35 হাজার কোটির বিনিয়োগ হয়েছে ৷ একই সঙ্গে কর্মসংস্থান হবে প্রায় 2 লক্ষ লোকের। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, দেউচা পাঁচামিতে প্রায় 1240 মিলিয়ন টন কয়লা এবং 1600 মিলিয়ন টন ব্যাসাল্ট রয়েছে ৷ এক্ষেত্রে কেউ এই বিনিয়োগে অংশীদার হতে চাইলে স্বাগত। একইসঙ্গে স্থানীয় মানুষকে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না বলেও জানান তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "আমাদের সবকিছু রেডি আছে ৷ জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ থেকে শুরু করে সবটাই হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, আগামী 100 বছরেও বিদ্যুতের কোন অসুবিধা থাকবে না। এদিন বাণিজ্যমঞ্চ থেকেই 6টি ইকোনমিক করিডরের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে রঘুনাথপুর-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম, ডানকুনি-কোচবিহার, খড়গপুর-মোরগ্রাম, গুরুডি-কলকাতা ইকোনমিক করিডোর। এই প্রকল্পগুলি বাস্তবে রূপদান করলে রাজ্যের চেহারা আমূল বদলে যাবে বলেও মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, নারী ক্ষমতায়নে এ রাজ্যে যে কাজ হয়েছে, তা আর কোথাও হয়নি। সারা দেশের রাজনীতিকরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে এসেছে সংসদে। কিন্তু নির্বাচনী ক্ষেত্রে তাকে রূপদান করেছে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই মুহূর্তে দেশে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সাংসদের সংখ্যা 39 শতাংশ। রাজ্য সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাধ্যমে শুধু মহিলাদের হাতে টাকাই দেয়নি, তাঁদের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে ৷