আর প্রিন্স জেবাকুমার
ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন ( এআইএমআইএম ) এই নির্বাচনে জোট করেছে টিটিভি দিনাকরণের আম্মা মাক্কাল মুন্নেত্রা কাঝাকাম ( এএমএমকে ) এর সঙ্গে । তারা লড়াই করছে তিনটি অংশে । আসাদুদ্দিন ওয়াইসি কি তামিলনাড়ুতে ফ্যাক্টর হতে পারবেন ? তিনি কী লাভবান হতে পারবেন ? তাঁর সাহায্যে কি এআইএডিএমকে কে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্যে সফল হতে পারবে এএমএমকে ? এর ফলে ভোটে মেরুকরণ হবে কি ? এটাও আরেকটা প্রশ্ন ।
বিহারে যেমন এআইএমআইএম 5 টি অংশে জয়ী হয়েছে, তামিলনাড়ুর 3 টি অংশের কোনও একটিতে এআইএমআইএম এর জয়ের সম্ভাবনা খুব কম । ওয়াসিকে যে বিজেপির বি টিম হিসেবে দেখা হয়, সেই মতবাদ ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করবে তাঁর এই বর্তমান জোট । কারণ, এএমএমকে এবারের নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এআইএডিএমকে এর হারের ফলে এএমএমকে যে জমি তৈরি করেছিল, এবারের নির্বাচনে তা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য পাবে তারা ।
আরও পড়ুন : তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বে বিজেপি
এম ফ্যাক্টর
2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী মুসলিমদের সংখ্যা 42 লক্ষ । 7.21 কোটি জনসংখ্যার মধ্যে এর পরিমাণ 6 শতাংশ । নির্বাচকের অনুপাতে এটা কয়েক হাজারে ভাগ হয় এবং কখনোই কোনও একটি অংশে 1 লক্ষের বেশি হয় না । ফলে সংখ্যালঘু ভোটাররা ভোটের হাওয়া ঘোরাতে পারেন । কিন্তু তাঁদের দ্বারা কোনও একটি সেগমেন্টে একাই জয় সম্ভব নয় । সারা রাজ্যে অতীতে 10 টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল 1 হাজারেরও কম । আর 25 টি আসনে 3 হাজারেরও কম ভোট জয়ের ব্যবধান হিসেবে ছিল । এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই দিনাকরণ মুসলিম দলগুলিকে নিজেদের পক্ষে এনে জয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে । 2016 সালের নির্বাচনে ডিএমকে 2 টি মুসলিম পার্টির সঙ্গে জোট করেছিল । সেগুলি হল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ( আইইউএমএল ) ও মনিতানেয়্যা মাক্কাল কাটচি ( এমএমকে ) । আইএউএমএল 5 টি আসনে লড়াই করে একটিতে জয় পেয়েছিল এবং এমএমকে 3 টি আসনে লড়াই করে একটিতেও খাতা খুলতে পারেনি । মনিতানেয়্যা জনন্যাগা কাটচি ও তামিল মানিলা মুসলিম লিগ, উভয় দলই জোট করেছিল এআইএডিএমকে এর সঙ্গে । তারা একটি করে আসনে লড়াই করেছিল এবং নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল ।
আরও পড়ুন :তামিলনাড়ুুর পথে শশিকলা, ফের গাড়িতে এআইডিএমকে পতাকা
ডিএমকে এর সঙ্গে সংযোগ
ওয়াইসি সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না ডিএমকে । কারণ, তারা ওয়াইসিকে বহিরাগত ও বিজেপির বি টিম বলে মনে করে । এই বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছে এআইএমআইএম এর স্থানীয় শাখা । আসলে তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার জন্য এটা এআইএমআইএম এর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা । তাদের যদি একা লড়াই করতে হত, তাহলে তারা প্রায় ৪০ টি আসনে প্রার্থী দিত । পরে এআইএমআইএম সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ডিএমকে এর সঙ্গে জোট করবে । আর বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রচারে নামবে । এর ফলে তামিলনাড়ুতে তাদের জন্য রাস্তা খুলে যাবে । ডিএমকে এর সঙ্গে জোট করার একাধিক প্রচেষ্টা করা হয় । প্রধান বিরোধী দলের কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পেতে তারা ব্যর্থ হয় । তার পর এআইএমআইএম হাজির হয় এএমএমকে এর দরজায় । আর সেখানে তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা পায় । দুই মাস আগে জানুয়ারির শুরুতে ডিএমকে এর সংখ্যালঘু শাখা একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল । সেই সময় নিজেদের রাজ্যে জোট করার জন্য ওয়াইসিকে জানানো আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয় ডিএমকে । প্রাথমিকভাবে ওয়াইসিকে আমন্ত্রণের বিষয়টি ডিএমকে অস্বীকার করে । কিন্তু ওয়াইসির পক্ষ থেকে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে ওই দাবি নস্যাৎ করা হয় ।
ওয়াইসির জাদু
যে মুসলিম দলগুলির উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি স্থানীয় স্তরে খুবই জনপ্রিয় । আর তারা তাদের কর্মকাণ্ড তামিলনাড়ুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে । এই ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম আইইউএমএল । কংগ্রেস যখন এই রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরে গেল, তার পর থেকে তারা দুই দ্রাবিড়ীয় দলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করছে এই রাজ্যে । ওয়াইসির ক্যারিশমা এবং বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এআইএমআইএম এর ভালো ফল মুসলিমরা শক্তিশালী এমন জায়গায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে । এর ফলে হয়তো এএমএমকে তাদের পক্ষে কয়েক হাজার ভোট টানতে পারবে । আর তা তাদের ভোট শতাংশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে । এই দিকের যে কোনও ধরনের বৃদ্ধি এআইএডিএমকে এর সম্ভাবনাকে আঘাত করবে । ওয়াইসি হয়তো তাঁর জাদু তামিলনাড়ুর গোটা মুসলিম জনসংখ্যার উপর বিস্তার করতে পারবেন না । যদিও তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন । আর ইতিমধ্যেই তাঁর দল মহারাষ্ট্রে এবং গুজরাটের পুর নির্বাচনে খাতা খুলে ফেলেছে ।