লুধিয়ানা (পঞ্জাব), 25 জানুয়ারি: মৃত্যুর পর অনাথ অবস্থায় পড়ে থাকে অনেক দেহ ৷ হয় শনাক্তকরণের অভাবে তাঁদের পরিচয় জানা যায় না ৷ আবার অনেকের দেহ অন্ত্যেষ্টি করার দায়িত্ব নিতে চায় না পরিবার ৷ এমনই সব বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন লুধিয়ানা সমাজকর্মী পুনম পাঠানিয়া (Ludhiana woman cremates unclaimed bodies)৷ এখনও পর্যন্ত এমন শতাধিক মৃতদেহ দাহ করেছেন পুনম ৷ তাঁর জীবনের একটাই ব্রত, মানুষের সেবা করা (Last Rites Messiah)৷
ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময় পুনম (Gym trainer cremates unclaimed bodies in Ludhiana) বলেন যে, বিশেষ কোনও কিছু ভেবে তিনি এই কাজ শুরু করেননি ৷ শুধুমাত্র মানবতার খাতিরেই তাঁর এই উদ্যোগ । পুনম বলেন, "একদিন আমার ছাত্রের বাবা মারা গেলে আমি শ্মশানে গিয়ে দেখি, সেখানে একটি বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে । তখনই আমি সেই মরদেহ দাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । আমি নিজের খরচে সেই দেহ সৎকার করাই । এ জন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে এক টাকাও গ্রহণ করি না । আমার ছাত্র এবং পরিবারও আমাকে এই মহৎ কাজে সাহায্য করে ৷"
পুনম আরও বলেছেন, "দেহের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর যখন সেই দেহ দাবি করার কেউ থাকে না, তখন ওই এলাকার পুলিশ আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি লাশ দাহ করতে চাই কি না । তখন আমি সেই দেহের দায়িত্ব নিয়ে শেষকৃত্য করি । মৃতরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পান ৷" এই উদ্যোগ নিতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয় পুনমকে ৷
তিনি জানিয়েছেন, "একজন মহিলা হওয়ায় এই কাজ আমার জন্য কঠিন ছিল ৷ কারণ আমার আত্মীয়-সহ অনেকেই আমাকে বলেছিলেন যে, আমার শ্মশানের কাজে যুক্ত হওয়া উচিত নয় । অনেক মহিলাকে শ্মশানের কাছেও যেতে অনুমতি দেওয়া হয় না । এমনকী আমার পরিবারও মৃতদেহ দাহ করার এই কাজ করায় আপত্তি করেছিল ৷ কিন্তু এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে, সমাজে পরিবর্তন আনতে কারওকে এগিয়ে আসতে হবে ৷" তার পরিবার তাকে এখন আলোর দিশারী হিসেবেই দেখে বলে জানালেন পুনম ৷
আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে বয়ফ্রেন্ড থাকা বাধ্যতামূলক, বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্কে কলেজ
পুনম তাঁর এলাকায় একজন অনুপ্রেরণামূলক জিম প্রশিক্ষক । তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও একটি সাহসিকতার গল্প রয়েছে ৷ তিনি পাথরের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং নিজের ও তার চারপাশের অনেককেই নতুন জীবন দান করেন ৷ পুনম জানান, "আমি 2019 সালে একটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ি । ডাক্তাররা আমাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টের পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ সেই কারণে আমি হতাশ হয়ে পড়ি । কিন্তু আমি আশা হারাইনি । ক্রমাগত ব্যায়াম এবং সঠিক খাবারের মাধ্যমে আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করি এবং আজ আমি এখানে আছি, আমার জিমের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি ৷"
তাঁর কথায়, "আমি অল্পবয়সি ছেলে ও মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিই যাতে তাঁরা মাদক থেকে দূরে থাকে ৷ কারণ পঞ্জাবে মাদকের আসক্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে । আমি মেয়েদের আত্মরক্ষার টেকনিকও শেখাই, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷" জিম চালানো ছাড়াও, পুনম বিভিন্ন স্কুলে আত্মরক্ষা শিবিরেরও আয়োজন করেন । এ ছাড়াও সমাজকর্মী হিসেবে সমাজের নানা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন পুনম ৷ আয়োজন করেন রক্তদান শিবিরের ।