মুজফ্ফরপুর (বিহার), 16 অগস্ট : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিহারের তিরহাটের নাম ৷ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে এই মাটিতেই আত্মবলিদান দিয়েছেন অসংখ্য বিপ্লবী ৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম ক্ষুদিরাম বসু ৷ মাত্র 19 বছর বয়সে তাঁকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার ৷ শহিদ হয়েছিলেন বাঙালি বিপ্লবী ৷
ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা, ক্ষুদিরামের আপসহীন সংগ্রামে ভয় পেয়েছিল ব্রিটিশরাজ ৷ আর সেই কারণেই ওই বয়সেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম সাজা দেওয়া হয় ৷ ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়েছিল মুজফ্ফরপুরে ৷ তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বহু নিদর্শন এখনও এখানকার আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে রয়েছে ৷ তবে প্রশাসনের উদাসীনতায় তার সবই ক্রমশ মলিন হচ্ছে ৷
বাংলার বীরভূমি মেদিনীপুরে ক্ষুদিরামের জন্ম হয়েছিল 1889 সালের 3 ডিসেম্বর ৷ নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই স্বাধীনতার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ক্ষুদিরাম ৷ ব্রিটিশ সরকারকে সমূলে উৎখাত করতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ৷ 1905 সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাতেও তাঁর প্রতিবাদ ছিল অগ্রগণ্য ৷ দেশের জন্য তাঁর এই আবেগ নড়িয়ে দিয়েছিল ভিনদেশি শাসকের দন্ড ৷ সিংহাসন বাঁচানোর মরিয়া তাগিদেই 1906 সালের 28 ফেব্রুয়ারি ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশের পুলিশ ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 17 বছর ৷ কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে জেল থেকে পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ৷
ক্ষুদিরামকে জেলবন্দি করার হুকুম দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিচারক কিংসফোর্ড ৷ তাঁকে শিক্ষা দিতেই ফিরে আসেন ক্ষুদিরাম ৷ সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকিকে সঙ্গে নিয়ে কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন তিনি ৷ দিনটি ছিল 1908 সালের 30 এপ্রিল ৷ কিন্তু সেই গাড়িতে বিচারক ছিলেন না ৷ তাঁর বদলে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় কেনেডি নামে এক মহিলা ও তাঁর মেয়ের ৷ এই ঘটনার পর থেকেই ব্রিটিশদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল ৷ নিজেকে গুলি করে শহিদ হন প্রফুল্ল চাকি ৷ অন্যদিকে, পুসা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ক্ষুদিরামকে ৷
আরও পড়ুন, একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি...
1908 সালে 11 অগস্ট ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয় ৷ মুজাফ্ফরপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে দেশের নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন মাত্র 19 বছরের এক তরতাজা তরুণ ৷ তার আগে এই কারাগারেই বন্দি রাখা হয়েছিল ক্ষুদিরামকে ৷ জেলের যে কুঠুরিতে জীবনের শেষ ক’টা দিন কাটিয়ে ছিলেন বাংলার দামাল ছেলে, সেটিকে আজও টিকিয়ে রাখা হয়েছে ৷ সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে ফাঁসির সেই মঞ্চ ৷ পরিচয় বদলে গিয়েছে মুজফ্ফরপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেরও ৷ বর্তমানে এর নাম শহিদ ক্ষুদিরাম বসু কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ৷ প্রতি বছর জেলের ভিতরেই শহিদের মৃত্যুদিবস সসম্মানে পালন করা হয় ৷ কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে সাধারণের প্রবেশের অনুমতি নেই ৷
আরও পড়ুন, ক্ষুদিরাম বসুকে বাঁচাতে লড়েছিলেন নরেন্দ্রকুমার
এছাড়াও, যে জায়গায় বিচারক কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা ছুড়েছিলেন ক্ষুদিরাম, যেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছিল, সেই দু’টি জায়গাকেও সংরক্ষণ করা হয়েছে ৷ ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে চলা মামলার যাবতীয় নথিপত্র কলকাতার সংগ্রহশালায় রক্ষিত হয়ে আছে ৷ বেশ কিছু সংগঠন সেই সব নথির প্রতিলিপি তৈরি করা তা মুজফ্ফরপুর আদালতে এনে রাখার চেষ্টা করছে ৷
তবে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়েও ক্ষুদিরামের দেশপ্রেমকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি ব্রিটিশরাজ ৷ বরং তাঁর শহিদ হওয়ার খবরে সেই আবেগ ছড়িয়ে পড়ে আরও হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ ভারতীয়র মননে ৷ দেশকে স্বাধীন করতে ক্ষুদিরামের মতোই প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা ৷ ক্ষুদিরামের ফাঁসির পর দিনের পর দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল স্কুল ৷ এমনকী, ক্ষুদিরামকে সম্মান জানাতেই তাঁর মতো ধুতি পরা শুরু করেছিলেন সেই যুগের বাঙালি তরুণরা ৷