নয়াদিল্লি, দান্তেওয়াড়া 26 এপ্রিল: হামলার ঘটনা কমলেও বেড়েছে হত্যার ঘটনা ৷ হ্যাঁ, চলতি মাসের শুরুতে ঠিক এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী বা সিআরপিএফ ৷ পাশাপাশি মাওবাদীরা যে নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করছেন, তাও সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল ৷ তবে কি কেন্দ্রীয় রিপোর্ট দেখেও সজাগ হয়নি রাজ্য পুলিশ ! অন্তত বুধবার দান্তেওয়াড়ায় শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনায় ফের একবার সেই প্রশ্ন উঠে এল ৷ ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় এদিন মাওবাদীদের আইইডি হামলায় অন্তত 10 ডিআরজি (ডিস্টিক্ট রিজার্ভড গার্ড) কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে এই নতুন নয়, ছত্তিশগড়ে কয়েক দশকের ইতিহাসে মাওবাদী হিংসার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে ৷
সাম্প্রতিক ইতিহাসে রাজ্যে বড় মাওবাদী হামলার বিবরণ:
3 এপ্রিল, 2021: ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে নকশাল হামলায় কমপক্ষে 22 জন নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তার আগে 2020 সালের মার্চ মাসে, ছত্তিশগড়ের সুকমায় মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ডিআরজি এবং এসটিএফ-এর মোট 17 জন নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
2018 সালের মার্চ মাসে, ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার কিস্তারাম এলাকায় আইইডি বিস্ফোরণে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) 212 ব্যাটালিয়নের নয়জন কর্মী নিহত হন। একই বছরের অক্টোবরে ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় দুই পুলিশ কর্মী এবং একজন মিডিয়া ব্যক্তিকে হত্যা করে মাওবাদীরা ৷
24 এপ্রিল, 2017: ছত্তিশগড়ের মাওবাদী প্রভাবিত দক্ষিণ বাস্তার এলাকার মাঝখানে বুরকাপাল-চিন্তাগুফা এলাকায় বিশেষ অভিযান চলাকালীন মোট 26 জন সিআরপিএফ কর্মী নিহত এবং আরও আটজন আহত হয়েছিল।
12 মার্চ, 2017: ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় মাওবাদী হামলায় 12 জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হন। জওয়ানদের হত্যার পর, মাওবাদীরা তাঁদের থেকে 10টি অস্ত্র চুরি করে এবং একটি আইইডি বিস্ফোরণও ঘটায়।
11 মার্চ, 2014: সুকমা জেলায় মাওবাদী হামলায় 15 নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়।
28 ফেব্রুয়ারি, 2014: দান্তেওয়াড়া জেলায় মাওবাদী হামলায় ছয় পুলিশ কর্মী নিহত হন।
25 মে, 2013: দরভা উপত্যকায় মাওবাদী হামলায় প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী মহেন্দ্র কর্মা-সহ কংগ্রেস দলের 25 জন নেতা নিহত হন।
29 জুন, 2010: নারায়ণপুর জেলায় মাওবাদীদের অতর্কিত হামলায় 26 জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হন।
8 মে, 2010: বিজাপুর জেলায় সেনার একটি বুলেট-প্রুফ গাড়িতে বিস্ফোরণ চালানোর জেরে আট সিআরপিএফ কর্মী নিহত হয়।
6 এপ্রিল, 2010: মাওবাদীরা দান্তেওয়াড়া জেলায় হামলায় 75 জন সিআরপিএফ কর্মীকে হত্যা করে।
4 সেপ্টেম্বর, 2009: মাওবাদীরা বিজাপুর জেলায় চার গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
জুলাই 27, 2009: দান্তেওয়াড়া জেলায় মাওবাদীদের একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের জেরে ছয়জন নিহত হয়।
জুলাই 18, 2009: বস্তার জেলায় মাওবাদীদের হাতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত।
অন্যদিকে, 2010-এর তুলনায় 2022 সালে এসে ছত্তিশগড়ে মাওবাদী হিংসাত্মক হামলার ঘটনা 77 শতাংশ কমেছে, তবে সিআরপিএফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হামলা কমলেও বাড়ছে হত্যার ঘটনা ৷ গত বছর যেখানে 10 জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিল সেখানে চলতি বছরের 28 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে সিআরপিএফের দাবি, মাওবাদীরা বেশ কিছুক্ষেত্রে তাদের কৌশলগত পরিবর্তন করেছে ৷ পাশাপাশি অতর্কিত হামলায় একসঙ্গে বেশ কয়েকজন পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
আরও পড়ুন: মাওবাদী হামলায় ছত্তিশগড়ে শহিদ 10 জওয়ান
প্রাক্তন সিআরপিএফ ডিজি কুলদীপ সিং জানিয়েছেন, মাওবাদীদের সঙ্গেই আধাসামরিক বাহিনীকেও তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে ৷ তাঁর কথায়, "সিআরপিএফ মাও অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকে অপারেশন চালানোর জেরে হিংসার ঘটনা কমে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মাও এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করে কাজ শুরু করেছে সেটা একদিকে ভালো ৷" কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, কেন্দ্র 2015 সালে মাওবাদীদের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় নীতি ও কর্ম পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করা এবং এলাকার দ্রুত উন্নয়নের কথাও ভাবছে সরকার ৷