পটনা, 22 জুন: পটনায় পা দিয়েই জাতীয় স্তরে একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের নীতিতে সওয়াল মমতার। একই সঙ্গে অবিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠকের আগেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেছেন, বৈঠকের পরে যে নীতি তৈরি হবে সবার জন্যই তা এক। এমনকী সকলে এক পরিবারের হয়ে লড়াই করবে এমনটাই আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি ৷ লক্ষ্য চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে যেখানে সমস্ত বিরোধীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসাই এখন বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের নীতি যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পটনা পৌঁছেই সরাসরি লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়ি পৌঁছে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে লালুপ্রসাদ ছাড়াও তেজস্বী যাদবের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা-অভিষেক ৷ এরপর এদিন সন্ধ্যায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি ৷ আর লালুপ্রসাদের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধীদের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, সেখানেই একের বিরুদ্ধে এক লড়াই নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি ৷ এদিন তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা বলেন, "আমরা এখনই আগামিকালের বৈঠক নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমরা বলেছিলাম আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ব। তাই এখানে এসেছি।"
এরপরই অবশ্য নিজের মনোভাব বৈঠকের আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "একের বিরুদ্ধে একের লড়াই হবে। সবাইকে নিয়ে একটা বৃহত্তর পরিবারের মতো বিষয়টা। সেখান থেকে আমরা এই নিয়ে এখন মন্তব্য করতে পারি না। দেখা যাক বৈঠকে কী হয়। তারপরই এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে।" একইসঙ্গে এদিন তাঁকে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে জোটে যাওয়া নিয়ে তাঁর অবস্থান কী হবে জানতে চাওয়া হলে, জবাবে মমতা মমতা বলেন, "আমি আগেই বলেছি বৈঠকে যা পরিণাম আসবে তারপর এই বিষয়গুলি বলা যাবে। যে নীতি তৈরি হবে তা সকলের জন্যই এক হবে।"
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক মহল বলছে এই মুহূর্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নিজেদের মধ্যে যেখানে আভ্যন্তরীণ লড়াই স্পষ্ট। এই রাজ্যেই যেখানে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই রয়েছে, সেখানে আদেও কতটা একের বিরুদ্ধে এক লড়াই করা সম্ভব। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে সর্বত্র বিরোধীরা যেখানে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেখানে দাঁড়িয়ে আদেও কতটা বাস্তবসম্মত এই এক এর বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের। এক্ষেত্রে একটা কঠিন সমীকরণের কথাই বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কারণ একের বিরুদ্ধে এক লড়াই করতে গেলে রাজ্যের বাধ্যবাধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে ওয়ান পয়েন্ট অ্যাজেন্ডাতেই লড়তে হবে বিরোধীদের। প্রশ্ন উঠছে সেটা কি আদৌ সম্ভব?
এদিন এই বিষয় নিয়েই প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছিল অন্যান রাজনৈতিক দলগুলির তরফ থেকে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "আজকে তো উনি একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের কথা বলছেন, তবে উনি তো সুযোগ পেলে বিজেপিতে চলে যাবেন। কাজেই ওঁর কথাতে চালিত হয়ে একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে মমতাকে সংযুক্ত করার অর্থ হলো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি বিজেপির সঙ্গে আগেও ঘর করেছেন। বিজেপিকে সবসময় সুবিধা করে দিচ্ছেন। কাজেই ওর কথায় প্রভাবিত হওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।"
আরও পড়ুন: বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখনও প্রাসঙ্গিক লালুপ্রসাদ, মন্তব্য মমতার
এদিকে এই নিয়ে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো কাসুন্দির কোনও জবাব দেব না। তিনি এক কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। আগামিকাল আগে মিটিং হোক। সেখান থেকে কী বের হয় সেটা দেখা যাক। তার আগেই এসব কথার কোনও অর্থ নেই।" অতএব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাই বলুন, তার তোলা একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের তত্ত্বে বৈঠকের আগেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিপিএমও।