পটনা, 23 জুন: বাংলা-সহ কেন্দ্র বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকার বনাম রাজভবনের সংঘাত একটা সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার পটনায় 17 বিরোধী দলের বৈঠকে এর বিরুদ্ধেই সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজভবনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, "কেন্দ্র রাজভবনের মাধ্যমে রাজ্যে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করছে।"
প্রসঙ্গত, বিরোধী জোটের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে রাজভবনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করার পরও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জয়েনিং রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে রাজ্যে হইচই ফেলে দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা। কড়া সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়েও ৷ আর এদিন পটনার বৈঠক থেকে রাজ্যপালের ভূমিকাও যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।
সাম্প্রতিক অতীতে বিরোধী শাসিত রাজ্য গুলিতে রাজভবনের সঙ্গে অবিজোপি বিরোধী দলগুলির সংঘাতের চিত্র দেখা গিয়েছে বারবার। কোথাও এই সংঘাত গড়িয়েছে আদালত পর্যন্তও। কখনও দীর্ঘ সময় ধরে বিল রাজভবনে ফেলে রাখা। কোথাও আবার সংঘাতের বিষয় হয়েছে ইচ্ছামত উপাচার্যদের বদলে দেওয়া ৷ এই প্রেক্ষিতই খুব স্বাভাবিকভাবে উঠে এসেছে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যেদিন অভিযোগ করেছেন, "নির্বাচিত সরকারকে হেনস্থা করতে কী না করা হচ্ছে।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নির্বাচিত সরকারকে হেনস্থা করতে রাজভবনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজভবনকে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিকল্প সরকার হিসেবে ব্যবহার করছে। এদিন রাজভবনের সমালোচনা করতে গিয়ে 20 জুন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাদের রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস কবে আমার জানা নেই। কিন্তু ওনারা ওদের মনের মতো করে প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনটুকুও মনে করে না। যা ইচ্ছা তাই করছে।"
প্রসঙ্গত, এই পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজভবনের সংঘাত সর্বজনবিদিত। রাজ্যপালকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মানুষের কাছে এই দিনটি আনন্দ বা উদযাপনের নয়, বরং এই দিনটি বাংলার মানুষের জন্য বেদনার। 20 জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করে আদতে বঙ্গভঙ্গের বেদনাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। যদিও রাজ্যপাল সে পরামর্শতে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু কীভাবে কেন্দ্রের অঙ্গুলি হেলানে রাজ্যের সমান্তরাল সরকার চলছে তা বোঝাতে রাজভবনের এই বিষয়টিকেই এদিন অস্ত্র করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মমতার বক্তব্যে উঠে এসেছে উপাচার্য নিয়ে সংঘাতের বিষয়টিও।
আরও পড়ুন: পটনার বৈঠক থেকেই দেশে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে, চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী মমতা
সাম্প্রতিক অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বারংবার একথা শোনা গিয়েছে রাজভবনের মাধ্যমে রাজ্য চালানোর চেষ্টা করছে দিল্লি। এদিন অর্থাৎ শুক্রবার তারই পুনরাবৃত্তি আবার করলেন মমতা। বললেন রাজভবনের মাধ্যমে সমান্তরাল সরকার চালানো হচ্ছে।