নয়াদিল্লি, 10 অগস্ট: লোকসভায় 'অসংযত' আচরণের জন্য লোকসভার বিরোধী নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সাসপেন্ড করলেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ৷ বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে একাধিক উপমা ব্যবহার করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী ৷ কখনও ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা টেনে 'অন্ধ রাজা', কখনও আবার 'নীরব মোদি' বলে কটাক্ষ করেন অধীর ৷ যা নিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী ৷ এমনকী সংসদে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের বিরুদ্ধে পয়েন্ট অফ অর্ডার এনে তাঁকে সংসদে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি করেন সংসদীয় মন্ত্রী ৷ প্রাথমিকভাবে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ দিয়ে দেন স্পিকার ৷
তবে বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি ৷ অনাস্থা প্রস্তাবের উপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই ফের সংসদীয় মন্ত্রী অধ্যক্ষের উদ্দেশে জানান, যে বক্তব্য এদিন অধীর চৌধুরী রেখেছেন তা অসংসদীয় তো বটেই, একইসঙ্গে অনৈতিকও ৷ এরপরই অধীরের বিরুদ্ধে রেজোলিউশন মোশন আনেন সংসদীয় মন্ত্রী ৷ প্রহ্লাদ যোশী বলেন, "একবার নয়, বিরোধী দলনেতা সংসদে অধিকাংশ সময়েই এমন অনৈতিক কথা বলে থাকেন ৷ এমনকী তাঁর অধিকাংশ কথারই কোনও মূল্য নেই ৷ তথ্য, প্রমাণ এবং নথি ছাড়াই সদনে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলনেতা ৷" সংসদীয় মন্ত্রী বলেন, "অধীর রঞ্জন চৌধুরী ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বারবার চেয়ারকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে অসদাচরণ করেছেন ৷ তাঁর অসদাচরণের বিষয়টি তদন্তের জন্য সংসদের প্রিভিলেজ কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এবং কমিটি রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত হাউস থেকে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে বরখাস্ত করা হোক।" এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে আনা রেজলিউশন প্রিভিলেজ কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব রাখেন সংসদীয় মন্ত্রী ৷ একইসঙ্গে, তিনি অধ্যক্ষের উদ্দেশে জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিভিলেজ কমিটির তরফে কোনও সিদ্ধান্ত না-নেওয়া হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হোক অধীর চৌধুরীকে ৷
আরও পড়ুন: দেশের মানুষ আগেই কংগ্রেসের উপর অনাস্থা দেখিয়েছেন, আক্রমণ মোদির
সংসদীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের পরই প্রস্তাব নিয়ে ধ্বনি ভোটের আহ্বান করেন স্পিকার ওম বিড়লা ৷ সেখানেই এই প্রস্তাব এদিন পাশ হয় ৷ আর প্রস্তাব পাশ হতেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, প্রাথমিকভাবে অধীর চৌধুরীর বিষয়টি প্রিভিলেজ কমিটির সিদ্ধান্ত না-আসা পর্যন্ত আপাতত সাসপেন্ড থাকবেন বহরমপুরের সাংসদ ৷ যদিও অধীর চৌধুরী বলেন, "আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অপমান করিনি। মোদিজি সব বিষয়ে কথা বলেন কিন্তু মণিপুর ইস্যুতে তিনি বসে আছেন 'নীরব' হয়ে ৷ যার অর্থ চুপ করে বসে আছেন। 'নীরব' মানে চুপ থাকা। আমার উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অপমান করা ছিল না ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি মনে করেননি যে তিনি অপমানিত হয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁর দরবারীরা তাই অনুভব করেছেন এবং আমার বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। আমি জানতে পেরেছি যে বিষয়টি প্রিভিলেজ কমিটির কাছে রেফার করা হয়েছে এবং আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।"
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় কংগ্রেসের ওয়াক আউট প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, "আমাদের ওয়াকআউট করতে হয়েছিল কারণ আজও প্রধানমন্ত্রী মণিপুর ইস্যুতে নীরব ছিলেন। তাই ভাবলাম নতুন 'নীরব মোদী'কে দেখে লাভ কী ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন গোটা দেশ তাঁর সঙ্গে আছে, তাহলে তিনি কংগ্রেসকে ভয় পান কেন?"