ভুবনেশ্বর: যুগ যুগ ধরে, সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায় পোকামাকড়কে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে । তেমনই ওডিশার ময়ূরভঞ্জ অঞ্চলের উপজাতীয় গোষ্ঠী লাল তাঁতি পিঁপড়ে (Red Weaver Ant) দিয়ে এক ধরনের চাটনি তৈরি করে ৷ স্থানীয় ভাষায় এটি কাই চাটনি নামে জনপ্রিয় ৷ চিকিৎসাক্ষেত্র ও পুষ্টিগুণে এই চাটনি এলাকায় জনপ্রিয় । 2 জানুয়ারি, 2024-এ এই অনন্য সুস্বাদু চাটনি জিআই ট্যাগ পেয়েছে ৷
লাল তাঁতি পিঁপড়ের বৈশিষ্ট্য :
লাল তাঁতি পিঁপড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Oecophylla Smaragdina ৷ এর কামড়ের ফলে ত্বকে ফোস্কা পড়তে পারে । এই পিঁপড়েরা সাধারণত ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের কাঠের মধ্যে, বিশেষ করে সিমলিপাল অরণ্যে থাকে ৷ যা এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জীববৈচিত্র্য তৈরি করেছে ।
এই তাঁতি পিঁপড়েরা গাছে বাস করে ৷ সুন্দর বাসা তৈরির জন্য এরা বিশেষভাবে পরিচিত ৷ নিজেদের লার্ভা সিল্ক ব্যবহার করে একসঙ্গে পাতার পর পাতা বুনে বাসা তৈরি করে এই পিঁপড়েরা । সেই কারণে এরা তাঁতি পিঁপড়ে হিসেবে পরিচিত ৷
কয়েকবছর ধরে এই লাল পিঁপড়ের চাটনিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে । এই উপজাতীয় প্রধান খাবারটি বিভিন্ন ভারতীয় রেস্তোরাঁর মেনুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৷ 2018 সালে, ব্রিটিশ শেফ গর্ডন রামসে এটিকে সুস্বাদু বলে মনে করেছিলেন এবং এটিকে তার মেনুতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ।
এই চাটনি খাওয়ার উপকারিতা :
একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই চাটনি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি-12 এর একটি চমৎকার উৎস । স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করতে এই চাটনির অবদান রয়েছে ৷ এছাড়াও হতাশা, ক্লান্তি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো অসুস্থতার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে এই কাই চাটনি ।
চাটনি তৈরির পদ্ধতি :
পিঁপড়েগুলিকে প্রথমে তাদের বাসা থেকে সরানো হয় ৷ এরপর পিঁপড়ে ও ডিমগুলিকে পরিষ্কার করে তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয় । তারপর আদা, রসুন, লঙ্কা এবং নুন একসঙ্গে মিশিয়ে চাটনি তৈরি করা হয় । ওড়িশা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়ের মতো অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের লাল পিঁপড়ের চাটনি খাওয়ার চল রয়েছে ।
এটিকে স্বাস্থ্যকর খাবার বলে মনে করা হয় ৷ করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করেছে এই কাই চাটনি ৷ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকেদের কাছে এই লাল তাঁতি পিঁপড়ে কাই 'পিম্পুদি' নামেও পরিচিত ৷ এর কাছাকাছি অবস্থিত সিমিলিপাল বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের শাল গাছ থেকে এই পিঁপড়ে সংগ্রহ করে তা চাটনি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় । তবে পিঁপড়ে সংগ্রহের পদ্ধতিটি কঠিন ৷ কারণ এর কামড় মারাত্মক ৷ পুরুষ পিঁপড়েগুলি বেশ আক্রমণাত্মক । তবে ভোরের আগে এই পিঁপড়েরা কম সক্রিয় থাকে ৷ সেই জন্য এই সময়েই বেশিরভাগ মানুষ পিঁপড়ে সংগ্রহ করে থাকে ।
আরও পড়ুন: