চেন্নাই, 25 ডিসেম্বর: যুবতীকে তাঁর জন্মদিনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠল ছোটবেলার বন্ধুর বিরুদ্ধে ৷ তাও আবার, তাঁর হাত শিকল দিয়ে বেঁধে ৷ গত 23 ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে চেন্নাইয়ের সিরুসেরিতে ৷ অভিযোগ যুবতীর প্রতি এক তরফা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হওয়া ভেতরি মারান নামে ওই যুবক ৷ পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ৷ ঘটনায় মৃত মাদুরাইয়ের বাসিন্দা নন্দিনীর পরিবারকে পুলিশ খবর দিয়েছে ৷ পরিবারের সদস্যরা চেন্নাই পৌঁছালে ময়নাতদন্ত হবে ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, গত 23 ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের সিরুসেরিতে এক মহিলার চিৎকার শুনতে পান স্থানীয়রা ৷ চিৎকারের আওয়াজ অনুসরণ করে গিয়ে আঁতকে ওঠেন তাঁরা ৷ দেখেন শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় এক যুবতীকে আগুন গ্রাস করেছে ৷ দ্রুত সেই আগুন নিভিয়ে যুবতীকে উদ্ধার করে, স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ যেখানে ওই যুবতীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক ৷
সেখানেই জানা যায়, মৃতের নাম নন্দিনী (27) এবং তিনি সিরুসেরিতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন ৷ তাঁর সঙ্গে এক যুবকও হাসপাতালে এসেছিলেন ৷ পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর পরিচয় ভেতরি মারান (27) ৷ নন্দিনী এবং ভেতরি একই স্কুলে পড়াশোনা করতেন ৷ ভেতরিকে জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পান তদন্তকারীরা ৷ এর পরেই তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ ৷ জিজ্ঞাসাবাদে ভেতরি স্বীকার করেন, তিনিই নন্দিনীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন ৷
কিন্তু, কেন ? যার জবাবে আরও অনেক তথ্য পুলিশের হাতে আসে ৷ সূত্রের খবর, ভেতরি জন্মগতভাবে একজন মেয়ে ছিলেন ৷ আগে তাঁর নাম ছিল ভেতি মারান ৷ বয়ঃসন্ধির পর নিজের লিঙ্গের ফারাক বুঝতে পারেন ভেতি ৷ কিন্তু, তাঁর বাবা-মা ভেতির কথা মেনে নেয়নি ৷ সেই সময় ভেতি বাড়ি ছেড়ে দেন ৷ ছোটবেলার বন্ধু নন্দিনী এবং তাঁর পরিবার ভেতিকে আশ্রয় দেয় ৷ পরবর্তী সময়ে ভেতি লিঙ্গ পরিবর্তন করেন এবং নিজের নাম বদলে ভেতরি মারান রাখেন ৷
ভেতরি বর্তমানে নন্দিনীর সঙ্গে চেন্নাইয়ে থাকছিলেন ৷ সেখানে দু’জন কর্মরত ছিলেন ৷ সাম্প্রতিক সময়ে ভেতরি, নন্দিনীর প্রতি নিজের ভালোবাসা অনুভব করেন ৷ এমনকি তিনি নন্দিনীকে অন্য ছেলেদের সঙ্গে মিশতে দিতেন না ৷ যা নিয়ে দু’জনের মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝামেলাও হয়েছিল ৷ একদিন ভেতরি তাঁর মনের কথা নন্দিনীকে জানান ৷ কিন্তু, তখন থেকেই ভেতরির থেকে দূরত্ব তৈরি করেন নন্দিনী ৷ গত 23 ডিসেম্বর ভেতরি তাঁকে জন্মদিনের সাপ্রাইজ দেবেন বলে জানান ৷
ওই দিন সকালে দু’জনে মন্দিরে যান ৷ সেখান থেকে একটি অনাথ আশ্রমে যান তাঁরা ৷ এর পর বিশেষ উপহারের নামে নন্দিনীকে সিরুসেরির একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান ভেতরি ৷ সেখানে প্রথমে তাঁর চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেন তিনি ৷ এর পর একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে নন্দিনীর হাত শিকল দিয়ে বেঁধে দেন ভেতরি ৷ পুলিশ জানিয়েছে, ছুরি দিয়ে নন্দিনীর হাতে আঘাত করেন ভেতরি ৷ এরপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ৷ আর আশেপাশের লোকজন সেখানে চলে আসায় ভেতরি সকলের সঙ্গে নন্দিনীকে বাঁচানোর নাটক করতে থাকেন ৷
পুলিশকে ভেতরি জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি তিনি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন ৷ তার জন্য আগেই শিকল, ছুরি ও পেট্রল মজুত করে রেখেছিলেন অভিযুক্ত ভেতরি মারান ৷ পুলিশ ভেতরিকে গ্রেফতার করেছে ৷ নন্দিনীর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করবে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: