কলকাতা, 23 জুলাই: মণিপুরে দুই মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনায় এবার মুখ খুললেন সমাজকর্মী ইরম শর্মিলা চানু ৷ গোটা ঘটনাকে অমানবিক ও অত্যন্ত বিচলিত করার মতো বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত এই সমাজকর্মী ৷ আয়রন লেডি হিসেবে পরিচিত ইরম শর্মিলা মণিপুর সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন ৷ মণিপুরের মেয়ে তিনি ৷ শনিবার এক সাক্ষাৎকারে তাঁর রাজ্যের এই অবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকেও একহাত নিয়েছেন এই সমাজকর্মী ৷ ব্যর্থতা স্বীকার করে রাজ্যের মানুষের কাছে ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী, এই দাবিও জানিয়েছেন শর্মিলা চানু ৷
মণিপুর পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ সে রাজ্যের বিজেপি সরকার, এই অভিযোগ আগেই করেছে বিরোধীরা ৷ মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-এর পদত্যাগের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে দেশজুড়ে ৷ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ইরম শর্মিলাও ৷ তাঁর কথায়,"এটা পরিষ্কার যে মণিপুর সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ ৷ যখন একটি রাজ্য পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না, তখন প্রধানমন্ত্রী চুপ করে আছেন কেন ? তাঁর উচিত মণিপুরের বাসিন্দাদের রক্ষা করা ৷ মণিপুরবাসীর যন্ত্রণা বিষয়ে তিনি যদি চিন্তিত হন, তাহলে অবিলম্বে তাঁর হস্তক্ষেপ করা উচিত ৷ গুজরাতের মতো মণিপুরেও তাঁর নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়োজন ৷"
আরও পড়ুন: 'মণিপুর ইস্যুতে আলোচনায় বসুন', হাত জোর করে অনুরোধ অনুরাগের
সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চানু জানান, দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ওই ভিডিয়ো দেখে তিনি চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি ৷ বর্তমানে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে থাকেন ইরম শর্মিলা ৷ সেখান থেকেই তিনি গোটা ঘটনায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "এটা অমানবিক ও বিচলিত করার মতো ঘটনা ৷ ওই ভিডিয়ো দেখার পর আমি নিজের কান্না আটকাতে পারিনি ৷ আমি ব্যথিত এবং স্তম্ভিত ৷"
আরও পড়ুন: 'মোদেনহাইমার'! ওপেনহাইমারের পোস্টারে মোদির ছবি সেঁটে কটাক্ষ মহুয়ার
ইরম শর্মিলা মনে করেন, সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত বিরোধ সরিয়ে রেখে 60 জন বিধায়কের সঙ্গে কথা বলা ৷ বিধায়কদের মত জানতে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে এন বীরেন সিংয়ের কথা বলা উচিত বলেও জানিয়েছেন এই সমাজকর্মী ৷ কুকি ও মেইতেই এই দুই সম্প্রদায়ের পরস্পরের বিরুদ্ধে থাকা ক্ষোভ প্রশমন এই মুহূর্তে সবার আগে প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি ৷ মণিপুরের পরিস্থিতি সামলাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপ নিতে হয়েছে সে রাজ্যের সরকারকে ৷ কিন্তু এই পদক্ষেপে লাভ বিশেষ কিছু হবে না বলেই মনে করেন ইরম শর্মিলা চানু ৷ তাঁর কথায়,"আমার মনে হয় হয় না ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রেখে মণিপুরে হিংসার সমস্যার সমাধান করা যাবে ৷" তাঁর মতে ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকলে ওই দুই নির্যাতিতা আরও আগে ন্যায় বিচার পেতেন ৷
উল্লেখ্য, দুই মহিলার উপর ওই অত্যাচারের ঘটনা গত 8 মে'র হলেও, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় তা এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি ৷ সম্প্রতি তা প্রকাশ পায় ৷ এরপরেই দেশজুড়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে ৷ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে 6 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ মেইতেই ও কুকি সংঘর্ষে দীর্ঘ প্রায় তিন মাস ধরে অশান্ত মণিপুর ৷ প্রাণ হারিয়েছেন 160 জনেরও বেশি মানুষ ৷