নয়াদিল্লি, 6 নভেম্বর: একমাস পেরোতে চলেছে গাজায় হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের সংঘর্ষ ৷ এই অবস্থায়, ইটিভি ভারতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রদূত আদনান আবু আলহাইজা জানাইছেন, তিনি আশা করেন ভারত এই বিষয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করবে এবং প্যালেস্তাইনের গাজায় যেভাবে শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করা হটচ্ছে তার নিন্দা করবে ৷ পালেস্থাইনের রাষ্ট্রদূতের কথায়, "আমরা এখনও আশা রাখি যে ভারত এই বিষয়ে তার মত জানাবে ও যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়ে এই হত্যার নিন্দা করবে ৷" সোমবার গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইজরায়েলি হানায় গাজায় মৃতের সংখ্যা 10 হাজার ছাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে 4 হাজার 100টি শিশু ও 2 হাজার 640 জন মহিলা আছেন ৷
সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ-
প্রশ্ন: এই যুদ্ধ সম্পর্কে আপনার বর্তমান মূল্যায়ণ কী?
উত্তর: এখন এই সংঘর্য পঞ্চম সপ্তাহে প্রবেশ করেছে ৷ পরিস্থিতি খুব কঠিন ৷ আমার মনে হয় না এই ধরনের পরিস্থিতি আমরা আগে দেখেছি বলে ৷ নাৎসি জমানাতেও লেনিনগার্দের পরিস্থিতি এর থেকে ভালো ছিল বলে মনে হয় ৷ প্রায় 22 লক্ষ মানুষ জল, জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবে দিন কাটাচ্ছেন ৷ মনে হচ্ছে অন্যান্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের যুদ্ধাপরাধকে ধামাচাপা দিতে যাচ্ছে ৷ ইজরায়েলি সেনারা শরনার্থী শিবির ও হাসপাতালের উপর হামলা চালাচ্ছে ৷ এই ভয়াবহ পরিস্থিতেও বলা হচ্ছে ইজরায়েল হামাসের উপর হামলা করছে ৷
প্রশ্ন: আপনি দিল্লির অবস্থানকে কী চোখে দেখছেন ? রাষ্ট্রসংঘের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও ভোট দেয়নি ভারত ৷
উত্তর: আমি আশা করেছিলাম ভারত অন্তত যুদ্ধবিরতির কথা বলবে ৷ ভারত হামাসের নিন্দা করেছে ও রাষ্ট্রসংঘের ওই প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ৷ 10 হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়, হাজার হাজার মানুষ সেখানে আটকে আছেন ধ্বংসস্তুপের নীচে ৷ তাঁদের উদ্ধার করার সামগ্রীও আমাদের কাছে নেই ৷
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আগামিদিনে ভারত শান্তিস্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে?
উত্তর: আশা রাখি ভারত তাই করবে ৷ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমি অনেকবার ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ ভারত যদি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটা ভালো হয় ৷ বর্তমান বিশ্বে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, এত বিপুল জনসংখ্যা এখানে ৷ ভারতে একজন সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন ৷ আমরা আশা রাখি, ভারত এই বিষয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করবে এবং প্যালেস্তাইনের গাজায় যেভাবে শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করা হটচ্ছে তার নিন্দা করবে ৷ ইজরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, তারা প্যালেস্তীয়দের হত্যা করছে ৷ ইজরায়েল কয়েক দশক ধরে এই কাজটিই করে আসছে ৷ আমরা কোনও হামাস জঙ্গিকে এই কদিনে আহত অবস্থায় হাসপাতালে যেতে দেখিনি , সেখানে গিয়েছে শিশু-মহিলা-নিরীহ নাগরিকরা ৷
প্রশ্ন: এই যুদ্ধের কারণ কী?
উত্তর: এর একাধিক কারণ আছে, শুধু 7 অক্টোবরের ঘটনা এর কারণ নয় ৷ গত 75 বছর ধরে প্যালেস্তিনীয়রা ও 56 বছর ধরে গাজা ও ওয়েস্টব্যাঙ্কের মানুষ যে অত্যাচার সহ্য করে এসেছেন এটা তার ফল ৷ আমরা ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলাম ৷ 1993 সালে আমরা অসলো চুক্তিতে সই করি ৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী প্যালেন্তাইন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ৷ কিন্তু ইজরায়েলের বর্তমান সরকারের মাথারা ও চরমপন্থীরা মিলে ওই চুক্তিকারী ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইজহাক রবিনকে খুন করে ৷ তারপর থেকেই অসলো চুক্তি ও দ্বি-দেশীয় তত্ত্ব অগ্রাহ্য করে প্যালেস্তাইনে জবরদখল করে চলেছে ইজরায়েল ৷
আরও পড়ুন: গাজার শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা, সাময়িক যুদ্ধবিরতির ডাককে প্রত্যাখান নেতানিয়াহুর
প্রশ্ন: এই যুদ্ধ কোথায় যাচ্ছে ?
উত্তর: আমার মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল এই যুদ্ধের মূল শরিক ৷ মার্কিন বিদেশ সচিবের আরব দেশগুলিরক সফর আসলে ইজরায়েলের অপরাধকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা ৷ এই যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলিও দায়ী ৷