নয়াদিল্লি, 11 অক্টোবর: ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত সপ্তাহে চালু হওয়া যুদ্ধের জেরে ভারত ও আরব বিশ্বের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে ৷ কারণ, ভারত এই যুদ্ধে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে ৷ মঙ্গলবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনিক কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ভারত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে ৷ অন্যদিকে সৌদি আরব আবার প্যালেস্টাইনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ৷ তারা প্যালেস্টাইনের জনগণকে তাঁদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার বিষয়ে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে ।
মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু শনিবার গাজা থেকে হামাসের হামলার পর ইজরায়েলের পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদিকে আপডেট করেছেন ৷ এই সংকটে উভয় পক্ষের 1,600 জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন ৷
ওই কথোপকথনের পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স-এ লেখেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তাঁর ফোন কল এবং চলমান পরিস্থিতির আপডেট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই । ভারতের মানুষ এই কঠিন সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে । ভারত দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে ।’’
এদিকে ভারতের বন্ধুদেশ সৌদি আরব ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে বিরোধ অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছে ৷ পাশাপাশি দাবি করেছে যে প্যালেস্টাইনের জনগণকে তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ।
সৌদি বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সৌদি আরব উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে । দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার ফলে, প্যালেস্টাইনের জনগণকে তাঁদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জেরে এবং এর পবিত্রতার বিরুদ্ধে নিয়মিত উস্কানিমূলক কাজের পুনরাবৃত্তির ফলে যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তার বারবার সতর্ক করা হয়েছিল ৷
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নতুন করে আহ্বান জানানো হচ্ছে ৷ যাতে একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৷ আর সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া যায় ৷ এর মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্ব সক্রিয় করে যা এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও শান্তি অর্জন এবং অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য দুই-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে নিয়ে যায় ।
তাহলে, এটা কি দেখায় যে ভারত ও সৌদি আরবের বিরোধের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে ? ইরাক এবং জর্ডানে প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আর দয়াকর, যিনি বিদেশমন্ত্রকের পশ্চিম এশিয়া ডেস্কে কাজ করেছেন, তিনি ইটিভি ভারতকে বলেছেন, "দেখুন, সৌদি আরব প্যালেস্টাইন ইস্যুর বিরুদ্ধে যেতে পারে না ৷ এটি সৌদি বিদেশনীতির জন্য খুবই মৌলিক ।"
দয়াকর উল্লেখ করেছেন যে সৌদি আরব তাদের বিবৃতিতে বিশেষভাবে হামাসের কথা বলেনি ৷ তবে শুধুমাত্র প্যালেস্টাইনের জনগণের অধিকারের কথা বলা হয়েছে । একইভাবে মোদির বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করা হয়েছে ৷ কিন্তু প্যালেস্টাইনের নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি ৷ তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যকে হামলার পর ইজরায়েল যে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে, তার প্রেক্ষাপট থেকে দেখা উচিত ৷ দ্বি-জাতি ফর্মুলা সমর্থন করার ভারতের মৌলিক নীতিতে পরিবর্তন হবে না ।"
প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে 2018 সালে ওয়েস্ট ব্যাংকে রামাল্লায় একটি স্বতন্ত্র সফরের সময় মোদি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলেছিলেন । তার আগের বছর মোদি ইজরায়েলে একই রকম স্বতন্ত্র সফর করেছিলেন ৷ এটিও কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইজরায়েল সফর ছিল । দয়াকর ব্যাখ্যা করেছেন যে বর্তমান সংঘাতের বিষয়ে নয়াদিল্লি বা রিয়াদ-সহ আরবের রাজধানীগুলি যে বিবৃতি দিক না কেন, উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না ।
তিনি আরও বলেন, "ভারতের ঘোষিত বিদেশনীতি হল যে একটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৃতীয় দেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর নির্ভর করবে না ৷" এদিকে বর্তমান সংঘাত নিয়ে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) বৈঠক আহ্বান করেছে সৌদি আরব । এই নিয়ে দয়াকর বলেন, “সৌদিরা প্যালেস্টাইনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ৷ হামাসের পক্ষে নয় । সৌদি আরব প্যালেস্টাইনের প্রতি ওআইসি সমর্থন জোগাড় করার জন্য বৈঠক ডাকছে, হামাসের জন্য নয় ৷”
আরও পড়ুন: মোদিকে ফোন নেতানিয়াহুর, ইজরায়েলের পাশে থাকার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর