ETV Bharat / bharat

যদি মমতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী আর শাহের কী হবে ?

author img

By

Published : Apr 13, 2021, 7:56 PM IST

উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নির্বাচন কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি কমিশন ৷ শুধু তৃণমূলনেত্রী নয়, ভোট প্রচারে উস্কানিমূলক, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে আরও অনেকের বিরুদ্ধে ৷ বাদ যান না দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ প্রশ্ন উঠছে তাঁদের এমন বিতর্কিত মন্তব্যের ক্ষেত্রে কী ভাবনা কমিশনের ? বিশ্লেষণ করেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা ৷

নির্বাচনী প্রচারে নিষেধাজ্ঞা তৃণমূলনেত্রী মমতার বিরুদ্ধে
নির্বাচনী প্রচারে নিষেধাজ্ঞা তৃণমূলনেত্রী মমতার বিরুদ্ধে

1962 সালে একজন তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভারতের তৃতীয় লোকসভা নির্বাচনে আমার প্রথম অংশগ্রহণ, তার পর 1967-এ, তখন কালেক্টর ছিলাম ৷ এর পরে 1984 সাল থেকে একজন নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা আর লোকসভা, দুটো নির্বাচনেই সরাসরি যুক্ত হই ৷ দেশে ভোট জালিয়াতি, হিংসাত্মক ঘটনার জন্য বিখ্যাত বিহার আর ঝাড়খণ্ড, এই দুই রাজ্য থেকে আমার সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট পরিচালনা ৷

বিগত দশ বছর ধরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছেন ৷ এটা তো স্বাভাবিক যে, তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি রাজ্যবাসীর সমর্থন চাইবেন ৷ বাম আর কংগ্রেস দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপিকে জায়গা করে দিয়েছে, আজ তারাই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গত নির্বাচনে তারা মাত্র তিনটে আসন পেয়েছিল, কিন্তু মাঝের পাঁচটা বছরে তারা তাদের বিশাল টাকা আর গায়ের জোর কাজে লাগিয়ে (অথবা অপব্যবহার) করে বাংলায় আসল বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ৷ আর সবক্ষেত্রে যেমন হয়, তারা এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনটাকে একটা যুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে ৷ ভারতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার, যার অবস্থান নিরপেক্ষ হওয়া উচিত ৷ নির্বাচন কমিশনের এই শর্ত বিঘ্নিত হলে কোনো ভাবেই আর নির্বাচন মুক্ত, স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ হবে না ৷ দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থাগুলির মতো আজ কমিশনও তার সক্রিয়তা হারিয়েছে ৷ সংবিধানে কমিশনের যে গুরুত্ব, তা আজ আর নেই ৷ 24 ঘণ্টার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো নির্বোধ পদক্ষেপের পর তো এই সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷

কমিশনের ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন ঘটনা ৷ তিনি তাঁর উচ্চারিত শব্দ, কথার জন্য শাস্তি পেয়েছেন ৷ আমি সে নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না ৷ প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার থেকে তৃণমূলনেত্রীর কথা অনেক কম প্ররোচনামূলক ৷ আমি এ বিষয়ে সচেতন যে, কোনো সম্প্রদায়, জাত, ধর্ম অথবা অঞ্চলের নাম করে ভোট চাওয়া উচিত নয় ৷ কিন্তু ভোটের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী বাংলাদেশে গিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মন্দির, দেবতা দেখে ভারতে ফিরে আসেন ৷ এখানে সেই সম্প্রদায়ের মানুষকে খোলাখুলি বাংলাদেশে তার শোষণের কথা বলেন ? তিনিও কি খোলাখুলি আর নির্লজ্জ ভাবে জাতপাতের ভিত্তিতেই তাদের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? বিজেপির ভোটের মিছিলে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিয়ে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে প্রভাবিত করা হয় না ? সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাখুলি তৃণমূলের লোকজনকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন ৷ এ ভাবে নির্দেশ দিয়ে তাঁরা বেশির ভাগ মানুষের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ অন্য সব বিজেপি নেতাদের রোড-শোতে বহু মানুষ হিন্দু দেব-দেবী সাজেন ৷ সেখানে কি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নামে ভোট চাওয়া হচ্ছে না ? নাকি, এই মানুষগুলো এতটাই শক্তিশালী যে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না ?

আরও পড়ুন: পঞ্চম দফায় 20% প্রার্থী কোটিপতি, কোন দলের সম্পদ বেশি ?

দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচার চালিয়ে যাওয়ার সুবিধের জন্যই কি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন আট দফায় করার সিদ্ধান্ত ? এখন লাইভ খবরের যুগ, দ্রুত ছড়িয়ে যায় সর্বত্র ৷ ভোটের দিনেও প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে ? এটা বন্ধ হচ্ছে না কেন ? নন্দীগ্রামে ভোটের দিন প্রধানমন্ত্রী বাংলার অন্য কোথাও গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচার করছিলেন যে, তিনি ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামে নির্বাচন হেরে গিয়েছেন ৷ একাধিক সংবাদমাধ্যমের চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে তিনি কি ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছিলেন না সেই সময় ? এরকম আরও অনেক উদাহরণেই দেখানো যায় যে, নির্বাচন কমিশন ভীষণ ভীষণ রকম বাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছে ৷ তারা শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আর বিরোধী দলের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ৷ পরিচ্ছন্ন আম্পায়ার নয় তারা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর এই নিষেধাজ্ঞা কমিশনের ইতিহাসে একটা কালো দিন হিসেবে থেকে যাবে ৷ এমনকি এটা দেশের গণতন্ত্রেও একটা কালো দাগ ৷

একজন আম্পায়ারকে শুধুমাত্র স্বচ্ছ হলেই হবে না, তিনি যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, তা যেন পরিষ্কার বোঝা যায় ৷ এ বিষয়ে এবার কমিশন ব্যর্থ হয়েছে ৷ এর আগে, কোচবিহারে সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মমতাকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি ৷ কমিশন কী মনে করে ? ব্যাপারটা কি এরকম যে, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসনের সব বিষয়ে আইনি হস্তক্ষেপ করতে পারে না ৷ যেমন কোনো জায়গায় চুরি বা ডাকাতি হলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে, কিন্তু সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তো নয়, এমনকি সরকারও কিছু করতে পারবে না ? এমন ক্ষমতা নির্বাচন কমিশন কোথা থেকে পাচ্ছে ? সংবিধান তো নয়, তা হলে নিছক সর্পিল পথে ওপরে উঠে ?

রাজ্যের জন্য যেমন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের শাসনের উল্লেখ আছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য তেমন কোনো বিশেষ নিয়মের কথা নেই সংবিধানে ৷ এমনকি আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর তাদের ক্ষমতা কেবল জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অর্থাৎ ডিএম বা জেলাশাসকের অধিকার পর্যন্ত, অথবা যাঁরা সরাসরি নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের ক্ষমতা অবধি প্রসারিত ৷ নির্বাচন কমিশনের এই পুরো প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে নেওয়াটা সাংবিধানিক ব্যবস্থার অপমান ৷ এই ব্যবস্থায় পরিচ্ছন্নতা আনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি আর সংসদ তার সমস্ত চিন্তাভাবনা নিয়োজিত করেছে, আর এটাই যথার্থ সময় ৷

যশবন্ত সিনহা, প্রাক্তন বিজেপি নেতা, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী (1998-2002), বিদেশমন্ত্রী (2002-2004)

1962 সালে একজন তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভারতের তৃতীয় লোকসভা নির্বাচনে আমার প্রথম অংশগ্রহণ, তার পর 1967-এ, তখন কালেক্টর ছিলাম ৷ এর পরে 1984 সাল থেকে একজন নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা আর লোকসভা, দুটো নির্বাচনেই সরাসরি যুক্ত হই ৷ দেশে ভোট জালিয়াতি, হিংসাত্মক ঘটনার জন্য বিখ্যাত বিহার আর ঝাড়খণ্ড, এই দুই রাজ্য থেকে আমার সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট পরিচালনা ৷

বিগত দশ বছর ধরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছেন ৷ এটা তো স্বাভাবিক যে, তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি রাজ্যবাসীর সমর্থন চাইবেন ৷ বাম আর কংগ্রেস দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপিকে জায়গা করে দিয়েছে, আজ তারাই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গত নির্বাচনে তারা মাত্র তিনটে আসন পেয়েছিল, কিন্তু মাঝের পাঁচটা বছরে তারা তাদের বিশাল টাকা আর গায়ের জোর কাজে লাগিয়ে (অথবা অপব্যবহার) করে বাংলায় আসল বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ৷ আর সবক্ষেত্রে যেমন হয়, তারা এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনটাকে একটা যুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে ৷ ভারতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার, যার অবস্থান নিরপেক্ষ হওয়া উচিত ৷ নির্বাচন কমিশনের এই শর্ত বিঘ্নিত হলে কোনো ভাবেই আর নির্বাচন মুক্ত, স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ হবে না ৷ দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থাগুলির মতো আজ কমিশনও তার সক্রিয়তা হারিয়েছে ৷ সংবিধানে কমিশনের যে গুরুত্ব, তা আজ আর নেই ৷ 24 ঘণ্টার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো নির্বোধ পদক্ষেপের পর তো এই সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷

কমিশনের ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন ঘটনা ৷ তিনি তাঁর উচ্চারিত শব্দ, কথার জন্য শাস্তি পেয়েছেন ৷ আমি সে নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না ৷ প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার থেকে তৃণমূলনেত্রীর কথা অনেক কম প্ররোচনামূলক ৷ আমি এ বিষয়ে সচেতন যে, কোনো সম্প্রদায়, জাত, ধর্ম অথবা অঞ্চলের নাম করে ভোট চাওয়া উচিত নয় ৷ কিন্তু ভোটের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী বাংলাদেশে গিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মন্দির, দেবতা দেখে ভারতে ফিরে আসেন ৷ এখানে সেই সম্প্রদায়ের মানুষকে খোলাখুলি বাংলাদেশে তার শোষণের কথা বলেন ? তিনিও কি খোলাখুলি আর নির্লজ্জ ভাবে জাতপাতের ভিত্তিতেই তাদের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? বিজেপির ভোটের মিছিলে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিয়ে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে প্রভাবিত করা হয় না ? সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাখুলি তৃণমূলের লোকজনকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন ৷ এ ভাবে নির্দেশ দিয়ে তাঁরা বেশির ভাগ মানুষের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ অন্য সব বিজেপি নেতাদের রোড-শোতে বহু মানুষ হিন্দু দেব-দেবী সাজেন ৷ সেখানে কি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নামে ভোট চাওয়া হচ্ছে না ? নাকি, এই মানুষগুলো এতটাই শক্তিশালী যে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না ?

আরও পড়ুন: পঞ্চম দফায় 20% প্রার্থী কোটিপতি, কোন দলের সম্পদ বেশি ?

দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচার চালিয়ে যাওয়ার সুবিধের জন্যই কি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন আট দফায় করার সিদ্ধান্ত ? এখন লাইভ খবরের যুগ, দ্রুত ছড়িয়ে যায় সর্বত্র ৷ ভোটের দিনেও প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে ? এটা বন্ধ হচ্ছে না কেন ? নন্দীগ্রামে ভোটের দিন প্রধানমন্ত্রী বাংলার অন্য কোথাও গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচার করছিলেন যে, তিনি ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামে নির্বাচন হেরে গিয়েছেন ৷ একাধিক সংবাদমাধ্যমের চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে তিনি কি ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছিলেন না সেই সময় ? এরকম আরও অনেক উদাহরণেই দেখানো যায় যে, নির্বাচন কমিশন ভীষণ ভীষণ রকম বাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছে ৷ তারা শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আর বিরোধী দলের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ৷ পরিচ্ছন্ন আম্পায়ার নয় তারা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর এই নিষেধাজ্ঞা কমিশনের ইতিহাসে একটা কালো দিন হিসেবে থেকে যাবে ৷ এমনকি এটা দেশের গণতন্ত্রেও একটা কালো দাগ ৷

একজন আম্পায়ারকে শুধুমাত্র স্বচ্ছ হলেই হবে না, তিনি যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, তা যেন পরিষ্কার বোঝা যায় ৷ এ বিষয়ে এবার কমিশন ব্যর্থ হয়েছে ৷ এর আগে, কোচবিহারে সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মমতাকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি ৷ কমিশন কী মনে করে ? ব্যাপারটা কি এরকম যে, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসনের সব বিষয়ে আইনি হস্তক্ষেপ করতে পারে না ৷ যেমন কোনো জায়গায় চুরি বা ডাকাতি হলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে, কিন্তু সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তো নয়, এমনকি সরকারও কিছু করতে পারবে না ? এমন ক্ষমতা নির্বাচন কমিশন কোথা থেকে পাচ্ছে ? সংবিধান তো নয়, তা হলে নিছক সর্পিল পথে ওপরে উঠে ?

রাজ্যের জন্য যেমন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের শাসনের উল্লেখ আছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য তেমন কোনো বিশেষ নিয়মের কথা নেই সংবিধানে ৷ এমনকি আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর তাদের ক্ষমতা কেবল জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অর্থাৎ ডিএম বা জেলাশাসকের অধিকার পর্যন্ত, অথবা যাঁরা সরাসরি নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের ক্ষমতা অবধি প্রসারিত ৷ নির্বাচন কমিশনের এই পুরো প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে নেওয়াটা সাংবিধানিক ব্যবস্থার অপমান ৷ এই ব্যবস্থায় পরিচ্ছন্নতা আনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি আর সংসদ তার সমস্ত চিন্তাভাবনা নিয়োজিত করেছে, আর এটাই যথার্থ সময় ৷

যশবন্ত সিনহা, প্রাক্তন বিজেপি নেতা, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী (1998-2002), বিদেশমন্ত্রী (2002-2004)

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.