জব্বলপুর, 9 নভেম্বর: সন্তান চান তাই জেলে থাকা স্বামীকে মুক্তি দিতে হবে ৷ এমনই আর্জি নিয়ে আদালতে দ্বারস্থ স্ত্রী ৷ জব্বলপুরের খাণ্ডোয়ারের বছর চল্লিশের মহিলা মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের আবেদন করেছেন, তাঁর ইন্দোর জেলে বন্দি থাকা স্বামীকে মুক্তি দিতে হবে ৷ তিনি মা হতে চান ৷ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় এখন জেলবন্দি ৷ মহিলা জানান, স্বামী জেলে থাকায় তিনি মাতৃত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৷
- সন্তানের জন্য বন্দি স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য আবেদন: মহিলার পক্ষ থেকে আইনজীবী বসন্ত ড্যানিয়েল আদালতে জানান, ভারতীয় সংবিধানের 21 নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে প্রতিটি পুরুষ ও মহিলা বাবা-মা হওয়ার অধিকার রয়েছে ৷ বংশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অধিকার সকলেরই আছে। মহিলার স্বামী গত 7 বছর ধরে জেলে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 351 এবং 302 ধারায় মামলা করা হয়েছে। তাই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে তার পক্ষে জেল থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় ৷ এভাবে মা হওয়ার অধিকার থেকে মহিলা বঞ্চিত হচ্ছেন ৷ অথচ সংবিধানের 21 নম্বর অনুচ্ছেদ সন্তান ধারণের অধিকার দিয়েছে ৷ পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁকে যেন সন্তান সুখের অধিকার থেকে বঞ্চিত না-করা হয় ৷ তিনি মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান ৷ কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবী সন্তোষ কাথার বলেন, এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর দাবি মেনে নেওয়া যায় না ৷ কারণ এমনিনেই মহিলার বয়স হয়ে গিয়েছে ৷ তাঁর পক্ষে এখন মা হওয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ ৷
- মেডিকেল পরীক্ষার আদেশ: বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল পুরো মামলার ঘটনা শোনার পর নির্দেশ দেন, ওই মহিলার মা হওয়ার ক্ষমতা আছে কি না, তা জানার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে। জব্বলপুরের সুভাষ চন্দ্র বসু মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ চিকিৎসকের একটি দলকে মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই মেডিক্যাল কলেজের ডিনকে এই চিকিৎসক দলে তিনজন গাইনোকোলজিস্ট, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এবং একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টকে রাখতে হবে। সাধারণত 40 থেকে 45 বছর বয়সি মহিলাদের মেনোপজ হয়, এমন পরিস্থিতিতে মহিলারা মা হতে পারেন না। তাই আবেদনকারী মহিলার মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে 22 নভেম্বর।
- সম্পর্ক শুধুমাত্র সন্তানের জন্য: আইনজীবী বসন্ত ড্যানিয়েল জানান, মেডিক্যাল রিপোর্ট আসার পর আদালত তাঁর মক্কেলের পক্ষে রায় দিতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, 21 নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যেক পুরুষ বা মহিলাকে সন্তান ধারণের অধিকার দেয়। এর জন্য দম্পতি শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে এই ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কী হবে।
- রাজস্থান হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের উদাহরণ: বসন্ত ড্যানিয়েল জানান, এখনও পর্যন্ত এমন কিছু মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে দেখা গিয়েছে। সেখানে 21 নম্বর ধারায় বন্দির সন্তান ধারণের অধিকার নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল নির্দেশ দেওয়ার সময় রাজস্থান হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের একটি সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন ৷ সেখানে নন্দলাল বনাম স্বরাষ্ট্র দফতরে মামলায় এই ধরনের আবেদনকে গুরুত্ব দিয়েছে। আদালত এই মামলায় আবেদনকারী মহিলাকে অনুমতি দেয়, জেলে থাকা হাজার হাজার বন্দি তাদের পরিবারকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এখন দেখতে হবে 22শে নভেম্বর আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয়।