তেলাঙ্গানা, 6 মে : তফশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত মালা গোষ্ঠীর দলিত যুবক বিয়ে করেছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুণীকে ৷ তার ফলেই বুধবার রাতে প্রাণ খুইয়েছেন হায়দরাবাদের বাসিন্দা ওই যুবক ৷ বিল্লিপুরম নাগারাজু (25)-কে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদ সারুরনগর পুলিশ নাগারাজুর স্ত্রীর দাদা সৈয়দ মোবিন আহমেদ এবং মহম্মদ মাসুদ আহমেদকে গ্রেফতার করেছে (Hyderabad Saroornagar police arrests two relatives of Ashrin Sulthana over Billipuram Nagaraju Murder) ৷
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ এদিনই তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে পেশ করা হয় ৷ দোষীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায় এবং তদন্তে গতি আনতে দুই অভিযুক্তকে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পেশ করবে পুলিশ ৷ এলবি নগরের ডিসিপি আশ্বস্ত করে বললেন, "মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য় ও চাকরি দেওয়া হবে ৷"
বুধবার রাতে কী ভাবে খুন হলেন নাগারাজু :
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে বিল্লিপুরম নাগারাজু ও তাঁর স্ত্রী আসরিন সুলতানা (Ashrin Sulthana) বাইকে করে যাচ্ছিলেন ৷ 9টা নাগাদ আসরিনের দাদা সৈয়দ মোবিন আহমেদ ও মাসুদ আহমেদ তাঁদের বাইক থামিয়ে নাগারাজুকে ধাক্কা মেরে বাইক থেকে ফেলে দেয় ৷ এরপর দু'জনে নাগারাজুর মাথায় লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে ৷ এতেই শেষ হয়নি ৷ মোবিন একটি ছুরি বের করে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে বোন আসরিনের স্বামীকে ৷ নাগারাজু মারা গিয়েছে নিশ্চিত করে অভিযুক্ত মোবিন ও মাসুদ পালিয়ে যায় ৷
আসরিনের বয়ান :
নাগারাজু যখন খুন হন, সে সময় সৈয়দ মোবিনের সঙ্গে আরও পাঁচজন লোক ছিল ৷ আমি শুধু দাদাকে চিনতে পেরেছিলাম ৷ বাকিদের বুঝতে পারিনি ৷ আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি, তখন নাগারাজু আমার সহপাঠী ছিল ৷ আমি ওকে খুব পছন্দ করতাম ৷ আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি ৷ আমার স্বামী ধর্ম বদলে ফেলার কথাও জানিয়েছিলেন আমার মাকে ৷ কিন্তু মা তাতেও রাজি হয়নি ৷ নাগারাজুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক 11 বছরের ৷ এবছর 30 জানুয়ারি আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই ৷ পরের দিন বিয়ে হয় আমাদের ৷
তবে দলিত নাগারাজুর সঙ্গে বিয়েতে একেবারেই মত ছিল না আসরিনের পরিবারের ৷ সেই হিংসা থেকেই এই খুন বলে জানা গিয়েছে ৷
আসরিনের অভিযোগ, "নাগারাজুকে সিগন্যালে দাঁড় করিয়ে পাঁচজন মিলে মারছিল ৷ আমি ওদের কাছে হাতজোড় করে বললাম, 'আমাদের যেতে দাও' ৷ এখন মানুষ এসে কী লাভ ? ওকে সবার সামনে খুন করা হল ৷ তখন দুনিয়ার লোক দেখতে পায়নি ? সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম ৷ আমি মরলে দুঃখ হত না ৷ ওকে জড়িয়ে ধরে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলাম ৷ পাঁচজন মিলে আমায় ঠেলে ফেলে দিল ৷ বাকিরা ওকে মারধর করতে থাকল ৷"
নাগারাজুর মাথায় হেলমেট ছিল, তাও মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল বলে জানা যাচ্ছে ৷ ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সৈয়দ মোবিন এবং মাসুদ আহমেদকে গ্রেফতার করে এলবি নগরের এসিপি ৷ পুলিশ খুনে ব্যবহৃত রড আর ছুরিও বাজেয়াপ্ত করেছে ৷
আরও পড়ুন : Honor Killing in Hyderabad: হায়দরাবাদে অনারকিলিং, প্রকাশ্য রাস্তায় বোনের স্বামীকে নৃশংস খুন যুবকের
এরকম একটি খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হবে, এটাই স্বাভাবিক ৷ তেলাঙ্গানা বিজেপি সভাপতি তথা লোকসভার সাংসদ বান্দি সঞ্জয় কুমার (Bandi Sanjay Kumar) বলেন, "নাগারাজু একজন মুসলিমকে বিয়ে করেছিলেন ৷ তাই তাঁকে নিশানা করা হয়েছিল ৷ এটা 'ধর্মীয় খুনের' ঘটনা ৷" তিনি দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন ৷ এছাড়া এই ঘটনার পিছনে যে গোষ্ঠী কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে আনা হোক, জানিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতা ৷
বিজেপি নেতার প্রশ্ন, এই মর্মান্তিক এবং নৃশংস খুনের ঘটনা নিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি কোনও উচ্চবাচ্য করল না কেন ? অথচ সঞ্জয় কুমারের দলকেই সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেওয়া হয় ৷ বিজেপি নেতা অন্য দলগুলিকে 'সিউডো সেকুলারিস্ট' অর্থাৎ ভেকধারী ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে উল্লেখ করেন ৷ তিনি বলেন, "এই খুনটা কী ধরনের ? তা ওই ভেকধারী দলগুলি মানুষকে জানাক ৷"
কট্টর হিন্দু চিন্তাধারার জন্য খ্যাত সঞ্জয় কুমার অবশ্য জানিয়েছেন, হিন্দু সমাজের এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত ৷