হায়দরাবাদ, 13 জুন : জিনগত বিরল রোগ বাসা বাঁধে 3 বছরের এক শিশুর শরীরে ৷ সেই একরত্তি ছেলের প্রাণ বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল 16 কোটি টাকা দামের একটি ইঞ্জেকশন ৷ নিরুপায় বাবা-মা অনলাইনে নেটিজেনদের কাছে অর্থসাহায্য চান ৷ প্রবল অনিশ্চয়তায় কেটেছে প্রায় আড়াই বছর ৷ অবশেষে হয়েছে অসাধ্য সাধন ৷ শিশুটিকে বাঁচাতে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন হাজার হাজার মানুষ ৷ আর বিন্দু বিন্দু করেই তৈরি হয়েছে সিন্ধু ৷ 62,450 মানুষের সহায়তায় জোগাড় হয়েছে প্রায় 15 কোটি টাকা ৷
হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানার আয়াংশ গুপ্তাকে দেওয়া হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধ (Worlds Most Expensive Medicine) জোলগেনস্মা ৷ শিরার মধ্যে প্রবেশ করাতে হয় এই ওষুধের একটি ডোজ ৷ বুধবার হায়দরাবাদের রেইনবো হাসপাতালে তাকে এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় ৷ বুকের ভেতর থেকে যেন একটা পাথর নামে আয়াংশের বাবা-মায়ের ৷ ক্রাউড-ফান্ডিং করে তাঁরা সংগ্রহ করেছেন 14.84 কোটি টাকা ৷
আরও পড়ুন : ঘর ওয়াপসির পরই সক্রিয় মুকুল, ফোন একাধিক বিজেপি বিধায়ককে
আয়াংশ, যোগেশ গুপ্তা ও রূপাল গুপ্তার ছেলে ৷ জন্মের কিছুদিন পরই সে বিরল স্নায়ু ও পেশিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, যার পোশাকি নাম স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি ৷ যার জেরে একরত্তি শিশুর হাত ও পা খুবই দুর্বল হতে থাকে ৷ সে কারও সাহায্য ছাড়া বসতে বা দাঁড়াতে পারে না ৷ ডাক্তাররা জানান, এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন ৷ মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে দম্পতির ৷ টানা দু‘বছর অপেক্ষা করার পর ক্রাউড ফান্ডিং-এর চিন্তা মাথায় আসে যোগেশ ও রূপালের ৷ এ ছাড়া ছেলেকে বাঁচানোর আর কোনও উপায় তাঁদের হাতে ছিল না ৷ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইমপ্যাক্টগুরুরর মাধ্যমে 14.84 কোটি টাকা সংগৃহীত হয় ৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের 62,450 জন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ৷
দাতাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে যোগেশ বলেছেন, "অনেক ধন্যবাদ ৷ প্রায় 65,000 মানুষ দান করে আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ ৷ যে ওষুধের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম, সেটা যে অবশেষে পেয়েছি, সে জন্য আমরা দারুণ খুশি ৷ এ বার আয়াংশের জীবনটা বদলাতে পারে ৷"
আরও পড়ুন: ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাহায্যের জন্য জি-7 দেশগুলিকে ধন্যবাদ মোদির
এই রোগ হলে ব্যক্তি শিরদাঁড়া ও মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ হারাতে শুরু করে ৷ ফলে তাঁর পেশির গতিবিধির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না ৷ জিন থেরাপির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা হয়, তবে সেই চিকিৎসা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ৷ আয়াংশের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডা. রমেশ কোনানকির কথায়, "প্রায় 800-900 মানুষের শরীরে এই ডিসঅর্ডার দেখা গিয়েছে ৷ শিশুদের ক্ষেত্রে 3 থেকে 4 বার এই রোগ 2 বছর বয়স না-হতেই কেড়ে নিয়েছে প্রাণ ৷ আয়াংশের ক্ষেত্রে আমরা ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি, এ জন্য আমরা খুবই খুশি ৷"
মুম্বইয়ে চার মাস বয়সের একটি শিশুও একই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ৷ তার চিকিৎসার জন্যও গত মাসে এই একই পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছিল ইমপ্যাক্টগুরু ৷