ভুবনেশ্বর, 13 ডিসেম্বর: সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচাল প্লাস্টিকের বোতল আর 100 ওয়াটের আলোর বাল্ব ৷ সদ্যোজাত শিশুটি একটি বোরওয়েলের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল ৷ শীতের কনকনে ঠান্ডার রাতে তার বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব ছিল ৷ কিন্তু কুয়োয় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলগুলি তাকে ধাক্কা লাগা থেকে বাঁচিয়েছে ৷ আর ওই 100 ওয়াটের আলো কুয়োর দেওয়ালের ঠান্ডা থেকে তাকে রক্ষা করেছে ৷
মঙ্গলবার রাতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে ওই সদ্যোজাতকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয় ৷ ঘটনাটি ওড়িশার রেঙ্গালি এলাকার লারিপলি গ্রামের ৷ তবে ওই শিশুর কোনও দাবিদার পাওয়া যায়নি ৷ সে এখন 60 কিমি দূরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৷ তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সে ভালো আছে ৷ গায়ে সামান্য আঁচড় লেগেছে ৷ কিন্তু গুরুতর আঘাত নেই ৷ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এই উদ্ধার অভিযানে জড়িত প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ তিনি ওই সদ্যোজাতের দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন ৷
বোরওয়েল থেকে সদ্যোজাত উদ্ধার: স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বোরওয়েলটি লোহার তৈরি 20 ফুট গভীর একটি পরিত্যক্ত পাইপ ৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ গ্রামবাসীরা সদ্যোজাতের কান্নার শব্দ শুনতে পান ৷ তাঁরা ওই বোরওয়েলের মধ্যে এক সদ্যোজাতকে পড়ে থাকতে দেখেন এবং পুলিশে খবর দেন ৷ শিশুটিকে উদ্ধারে বেশ কয়েকটি এজেন্সি যৌথভাবে কাজ শুরু করে ৷ সে দিন সন্ধ্যায় এলাকার তাপমাত্রা 12 ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল ৷
বুধবার ওই উদ্ধারকারী দলের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভম সিংহ বলেন, "ওই লোহার বোরওয়েলে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের বোতল পড়েছিল ৷ সেগুলি ওই সদ্যোজাতকে দেওয়ালে ধাক্কা লাগা থেকে বাঁচায় ৷ খানিকটা কুশনের মতো কাজ করেছে প্লাস্টিকের বোতলগুলি ৷ সদ্যোজাতকে বাঁচিয়ে রাখতে ওই 20 ফুট গভীর বোরওয়েলে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় ৷ তবে কিছুক্ষণ পরেই শিশুর কান্না থেমে যায় ৷ তখন ওই কুয়োয় 100 ওয়াটের একটি ইলেকট্রিক বাল্ব প্রবেশ করানো হয় ৷ এতে কুয়োয় একদিকে যেমন আলো ছিল, অন্যদিকে তেমন শিশুটির দেহকে গরম রাখতেও সাহায্য করে বাল্বটি ৷"
চিকিৎসক আরও জানান, সদ্যোজাত শিশুর জন্মের পর তাকে নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয় ৷ সেখানে তার শরীর গরম রাখার ব্যবস্থা থাকে ৷ এই বাল্বটি সেই কাজ করেছে ৷
উদ্ধারকারী দলের আরেক সদস্য ডা. সুধাংশু সারঙ্গি ৷ তিনি দমকল বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল ৷ তিনি বলেন, "ওই সদ্যোজাত ঠিক কোথায় আছে, তা জানতে কুয়োর মধ্যে একটি ক্যামেরা নিচু করে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় ৷ ওই ক্যামেরাটি রাজ্য সরকার একটি বিশেষ বিমানে ভুবনেশ্বর থেকে ঝারসুগুড়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিল ৷" উদ্ধারের সময় সদ্যোজাত শিশুটি একটানা কেঁদেই যাচ্ছিল ৷ আর সেই কান্নাই উদ্ধারকারী দলকে তার কাছে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল ৷
সারঙ্গি আরও বলেন, "লোহার পাইপটিকে কাটতে হয়েছিল ৷ আর তা করতে গিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হয়েছে ৷ আমরা গ্যাস কাটার ব্যবহার করতে পারিনি ৷ কারণ তাতে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হত ৷ ওই শিশুটি সহ্য করতে পারত না ৷ আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷"
তবে ওই শিশুটি কীভাবে লোহার পাইপের ভিতর পড়ে গেল, তা স্পষ্ট জানা যায়নি ৷ স্থানীয়রা সন্দেহ করছেন, কেউ হয়তো ওই বোরওয়েলে সদ্যোজাতকে ফেলে দিয়ে গিয়েছে ৷ ইতিমধ্যে পুলিশ ওই শিশুর বাবা-মায়ের সন্ধানে লারিপালি গ্রামে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ৷ সরকারি সূত্রে খবর, গ্রামবাসীরা যদি কিছু জানতে পারে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে ৷ এদিকে অনেকেই জানিয়েছেন, এক মহিলাকে কাছাকাছি একটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে ৷ তবে তিনি লারিপালি গ্রামের কেউ নন ৷ তদন্ত চলছে ৷
আরও পড়ুন: