গুয়াহাটি, 4 এপ্রিল: অসমের গুয়াহাটির কামাখ্যায় বাংলার এক মহিলাকে নরবলি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল প্রায় 4 বছর আগে ৷ সেই ঘটনায় 5 অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে গুয়াহাটি পুলিশ ৷ শহরের পুলিশ প্রধান দিগন্ত বোরা মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে এই কথা জানিয়েছেন ৷ 2019 সালের 18 জুন ঘটনাটি ঘটে ৷ অম্বুবাচীর মাত্র 2 দিন আগে কামাখ্যার ওই ঘটনায় সেই সময়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল ৷
কামাখ্যা মন্দিরের রাস্তাতেই শিরচ্ছেদ অবস্থায় কম্বলে মোড়ানো এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয় সেদিন ৷ ঘটনায় জালুকবাড়ি পুলিশ স্টেশনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ৷ 2 জনকে গ্রেফতারও করা হয় ৷ তবে ঘটনার দিন বা তার বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত মৃত ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি ৷ ঘটনার প্রায় 10 দিন পর 28 জুন, পশ্চিমবঙ্গের হুগলির যুবক সুরেশ সাউ জালুকবাড়ি থানায় গিয়ে জানায় তাঁর মা অম্বুবাচী উপলক্ষে এক সাধুর সঙ্গে কামাখ্যায় এসেছিল, কিন্তু তারপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ নেই ৷
এরপরেই ওই মহিলার মৃত দেহ দেখে তাঁকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন ওই যুবক ৷ মহিলার নাম শান্তি সাউ ৷ তবে মাঝে এই ঘটনার তদন্ত কিছুটা থমকে যায় ৷ দিগন্ত বোরা শহরের পুলিশ কমিশনার পদে আসার পর ফাইলটি ফের খোলা হয় ৷ একমাস আগে ফের সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত শুরু হয় ৷ সেই সূত্র ধরেই মেলে সাফল্য ৷
এই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আগে থেকেই ছিল কৈলাশ বর্মন নামে এক ব্যক্তি ৷ কোচবিহারে ওই ব্যক্তির বাড়ি হানা দিয়ে পুলিশ একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার করে শান্তির মোবাইল, আধার কার্ড ও জামা-কাপড় ৷ এরপর পুলিশি জেরায় কৈলাশ নামে ওই ব্যক্তি জানায় 2019 সালে মাতাপ্রসাদ পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তি এসে তার বাড়িতে ওই ব্যাগটি রেখে যায় ৷ 8 বছর ধরে সে ওই ব্যক্তিকে চেনে বলেও জানায় কৈলাশ ৷ এই প্রমাণ জোগাড়ের পরেই পুলিশ ওই নরবলির ঘটনায় 5 জনকে গ্রেফতার করে ৷
ধৃতরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা ৷ গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের নাম ও পরিচয় হল, মাতাপ্রসাদ পাণ্ডে (মধ্যপ্রদেশ), সুরেশ পাসওয়ান (গুয়াহাটি), প্রদীপ পাঠক ওরফে রাজু (মথুরা), কানু আচার্য ওরফে কানু তান্ত্রিক (গুয়াহাটি) ও ভায়ারাম মৌর্য ওরফে রাজু বাবা ৷ ঘটনায় অভিযুক্ত আরও 7 জন এখনও অধরা ৷
জানা গিয়েছে, 2019-এর 18 জুন কামাখ্যা মন্দিরের কাছে ভূতনাথ শ্মশানে কালীপুজো করে মাতাপ্রসাদ নামে ওই ব্যক্তি ৷ কম করে 12 জন সেই পুজোর সময় সেখানে উপস্থিত ছিল ৷ গেরুয়া শাড়ি পড়ে ওই মহিলাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৷ জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, সেখানে জোর করে ওই মহিলাকে মদ ও মাংস খাওয়ানো হয় ৷ এরপর তারা বগলা মন্দিরের কাছে আরও একটি শ্মশানে যায় ৷ সেখানেও পুজো করা হয় ৷ এরপর কাছেই একটি দুর্গা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় ওই মহিলাকে ৷ সেখানে একটি কম্বলের উপর ওই মহিলাকে শুইয়ে তাঁর বলি দেওয়া হয় ৷ এরপর তাঁর মাথা ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলে দেওয়া হয়, আর শরীরের বাকি অংশ ফেলে রাখা হয় কামাখ্যা মন্দিরের রাস্তায় ৷
আরও পড়ুন: সিকিমে তুষারধস! মৃত 7, নিখোঁজ বহু পর্যটক
গুয়াহাটি পুলিশ জানিয়েছে, প্রদীপ পাঠক নামে ধৃত অপর ব্যক্তিই গোটা ঘটনার পরিকল্পনা করে ৷ এরজন্য বাকি অভিযুক্তদের প্রত্যেককে সে 10 হাজার টাকা করে দেয় ৷ উত্তরপ্রদেশের মথুরার বাসিন্দা প্রদীপ সরকারি কর্মী বলেও জানা গিয়েছে ৷ তার মোবাইল থেকে 60-70 জন তান্ত্রিকের নম্বর উদ্ধার হয়েছে ৷ তদন্ত এখনও চলছে, বাকি অভিযুক্তদেরও শীঘ্রই ধরা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পুলিশ ৷