হায়দরাবাদ, 8 ডিসেম্বর: ছিল নিজেকে নিজের ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই ৷ যে মোদি ক্যারিশমায় ভর করে এতদিন একের পর এক রাজ্য জয় করেছে বিজেপি, এবারের গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনে নিজের নামের সেই মিথকেই কার্যত বিশ্বাসে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন তিনি ৷ 2022 গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের ফল বলছে সেই চ্যালেঞ্জ হেলায় জিতেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েছেন গুজরাতবাসী ৷ রেকর্ড সংখ্যক আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি ৷ প্রাপ্ত আসন সংখ্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছে 2002 সালের সাফল্যকেও (Gujarat Assembly polls) ৷
গুজরাতে এবারের ভোট প্রচার ও সর্বাধিক আসন জেতার বিষয়টিকে পাখির চোখ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মোদি ৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে বিজেপির পক্ষে রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি ৷ নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে এবারের মোট প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকেরও বেশি পেয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ বিরোধীদের কার্যত দুরমুশ করে গুজরাত বিধানসভায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করেছে বিজেপি ৷ ভোটের এই ফলই বলে দিচ্ছে দলিত ইস্যু, বিলকিস বানো গণধর্ষণকাণ্ড, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের কোনও অস্ত্রই কাজ দেয়নি ৷ ফলে আগামী পাঁচ বছর গুজরাত বিধানসভায় বিরোধী স্বর নিচু লয়েই শোনা যাবে ৷
বিধানসভা ভোটের প্রচার এবার বিজেপি নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখেই করেছিল ৷ নীচতলার প্রচারে ভোটারদের বলা হয়েছিল দল কাজ না-করে থাকলে মুখ ঘুরিয়ে নিতে ৷ পাশাপাশি যদিও এও বলা হয়েছিল ঘরের ছেলে মোদির পক্ষে ভোট দিতে ৷ দেখা যাচ্ছে ঘরের ছেলে নরেন্দ্র মোদিকেই ঝাঁপি উজাড় করে ভোট দিয়েছে তাঁর রাজ্য (Gujarat Election 2022) ৷
আরও পড়ুন: হিমাচলে মোদি-যোগীর প্রচার করা আসনগুলিতে খারাপ ফল বিজেপির
গুজরাতে এবার বিজেপি, কংগ্রেস ও আপের মধ্যে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হলেও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম ও প্রার্থী দিয়েছিল ৷ ভোটের ফল বলছে ভোট কাটাকাটি করে বিরোধী দলগুলি নিজেদেরই ক্ষতি করেছে ৷ বহু কেন্দ্রে মুসলিম প্রার্থীরা যা ভোট পেয়েছেন, তাতে বিরোধী ভোট জমাট বাধার বদলে তাদের পরস্পরের ক্ষতি বেশি হয়েছে ৷ এমনকি লাভবান হতে পারেনি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম ও ৷
বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা আরও বেশ কয়েকটি দিন ইঙ্গিত করছে ৷ সম্প্রতি সুরাত পৌরনিগমের ভোটে ভালো ফল করেছিল আম আদমি পার্টি (আপ) ৷ জিতেছিল 27 আসনে ৷ আপের এই উত্থানকে মাথায় রেখেই নিজেদের ভোট পরিকল্পনা সাজিয়েছিল বিজেপি ৷ যা ফল দিয়েছে ৷ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির ধারাবাহিক গুজরাত সফরও পদ্ম শিবিরের নজরে ছিল ৷ সৌরাষ্ট্রতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক জোর অন্যতম মাথাব্যাথার কারণ ছিল বিজেপির ৷ এইসব কিছু মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের প্রচার কৌশল ৷ কংগ্রেস প্রভাবিত আসনগুলিতে নিজে প্রচারে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ আগের যেসব আসনে কংগ্রেস ভালো ফল করেছিল সেখানে প্রচারে গিয়ে হাত শিবিরকে তীব্র কটাক্ষে বিদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সৌরাষ্ট্রতে 2017 এর নির্বাচনে সর্বাধিক আসন পেয়েছিল কংগ্রেস ৷ সেখান থেকেই আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি আর বার্তা দিয়েছেন গোটা রাজ্যে ৷
আরও পড়ুন: জনতার রায়ে এগিয়ে থেকেও বিজেপির 'ঘোড়া কেনাবেচা'র আশংকা ভাবাচ্ছে কংগ্রেসকে
2017 তে সৌরাষ্ট্রের 48টি আসনের মধ্যে 28টি পেয়েছিল কংগ্রেস ৷ বিজেপি জেতে 19 আসনে ৷ উত্তর গুজরাতের 53 আসনের মধ্যে সেবার কংগ্রেস পায় 24 আসন ৷ এমনকি ভাদনগর, উঞ্ঝার মতো আসন যা মোদির ঘর বলে পরিচিত সেখানেও গতবার 19 হাজার ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেসের কাছে হেরেছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা ৷
পাশাপাশি, এবার বিজেপির হিন্দুত্বের প্রচার তাদের সমর্থকদের পাশাপাশি সমাজের মূল স্তরেও প্রভাব ফেলেছে ৷ হিন্দুত্বের পক্ষে গেরুয়া শিবিরের এই প্রচার বিরোধীদের খারাপ ফলের অন্যতম কারণ ৷
তবে গুজরাতের এই ফলের সমীকরণ হিমাচলে বিজেপির পক্ষে কাজ করেনি ৷ এখানে খারাপ ফল করেছে বিজেপি, এমনকি ক্ষমতায় ফিরতে প্রয়োজনীয় আসন জোগাড় করতেও ব্যর্থ হয়েছে তারা ৷ এই পাহাড়ি রাজ্যে তাদের হিন্দুত্বের প্রচার কাজ দেয়নি ৷ সম্ভবত সরকারি কর্মীরা এই ফলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ৷ কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে পুরনো পেনশন স্কিম ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ৷ সেটাই কাজ দিয়েছে (Himachal Pradesh Assembly Election 2022) ৷
গুজরাতে যখন এদিন যখন গৈরিকীকরণ আরও গাঢ় হয়েছে, তখন তা ফিকে হয়েছে হিমাচলে (Himachal Pradesh Assembly Polls)৷ গুজরাতে টানা ষষ্ঠবারের জন্য সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি ৷ আর হিমাচলে বিজেপিকে সরিয়ে সরকার গড়ার পথে কংগ্রেস ৷ প্রতি 5 বছর অন্তর এই পাহাড়ি রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের যা রেওয়াজ, তা এবারও বজায় থাকল ৷ তবে 2023 এ একাধিক রাজ্যে যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, তার আগে গুজরাতের পর বিজেপিকে উদ্বুদ্ধ করবে বলা যায় ৷ নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাল বিজেপি, তা বলা যায় ৷