সন্দেশখালি, 16 নভেম্বর: মিজোরামে (Mizoram) কাজে গিয়ে পাথর খাদানের ধসে মৃত্যু হয়েছে উত্তর 24 পরগনার বাসিন্দা এক যুবকের ৷ মৃত সুব্রত রপতান পরিবারের আর্থিক হাল ফেরাতে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের (Migrant Labor) কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু,পরিবারে সুদিন আসার আগেই সব শেষ !পাথর খাদানের ধসে প্রাণ গেল 24 বছরের তরতাজা তরুণের ৷ মঙ্গলবার সেই মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয় সুব্রতর সন্দেশখালির ঢোলখালি গ্রামের বাড়িতে ৷ বাড়ির একমাত্র ছেলের আকস্মিক প্রয়াণে (Migrant Labor Death) শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার ৷ বুধবারই সুব্রতর কফিনবন্দি দেহ তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ৷ সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, সুব্রত শিক্ষিত ছিলেন ৷ তারপরও যোগ্য চাকরি জোটেনি তাঁর ৷ তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভিনরাজ্য়ের পাথর খাদানে কাজ নিতে হয় তাঁকে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে টাকি গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিলেন সুব্রত ৷ স্নাতক হয়েই চাকরির চেষ্টা শুরু করেন তিনি ৷ কারণ, সুব্রতর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় ৷ বাবা শ্যামল রপতানও পরিযায়ী শ্রমিক ৷ তিনি তামিলনাড়ুতে কাজ করেন ৷ তাতে যেটুকু রোজগার হয়, তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার কোনওমতে চলে ৷ তাই,পরিবারের আর্থিক দুর্দশা কাটাতে স্নাতক সুব্রতও ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে ! প্রথমে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাথর খাদানে শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ পরে সেখান থেকে চলে যান মিজোরামে ৷ সেখানেও একই কাজ করতে হত তাঁকে ৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, পাথর খাদানের ভিতর কাজ চলার সময়েই সেটি ধসে পড়ে (Stone Mine Collapse) ৷ তাতেই প্রাণ যায় 10 শ্রমিকের ৷ নিখোঁজ আরও অনেকে ৷
আরও পড়ুন: মিজোরামের পাথর খাদানে ধস ! মৃত 10, নিখোঁজ 5
সুব্রতর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শেষবার পুজোর সময় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি ৷ দুই দিদির কাছ থেকে ভাইফোঁটাও নিয়েছিলেন ৷ সেটাই যে তাঁদের শেষ দেখা, তা বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা ৷ ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই তাঁর ছবির সামনে অঝোরে কেঁদে চলেছেন দুই দিদি ৷ এদিকে, ছেলে হারানোর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সুব্রতর মা ৷
অন্যদিকে, সুব্রতর মৃতদেহ ফেরাতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷ বিমানে বুধবারই তাঁর দেহ ফেরানোর কথা রয়েছে ৷ পাশাপাশি, এই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র মারফত দাবি করা হচ্ছে ৷ কিন্তু, তারপরও প্রশ্ন উঠছে, দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়েও সুব্রত স্নাতক হয়েছিলেন ৷ তা সত্ত্বেও নিজের রাজ্যে তাঁর একটা ভালো চাকরি জুটল না কেন ? কেন তাঁকে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে যেতে হল ?