দিল্লি, 12 নভেম্বর : দেশজুড়ে বাড়তে থাকা কোরোনার সংক্রমণে লাগাম টানতে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র । গোটা দেশে টানা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল । থমকে গেছিল দেশের অর্থনীতি । তবে লকডাউনের ধাক্কা সামাল দিয়ে ভালো ভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশীয় অর্থনীতি । আজ সাংবাদিক বৈঠকে এমনই জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ।
ম্যাক্রো-ইকোনমিক সূচকগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে । আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "বেশ কয়েকটি সূচক থেকে স্পষ্ট, অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে । একটানা সংস্কারের ভিত্তিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে চলেছে সরকার ।" দেশের অর্থনীতিকে উদ্ধারের জন্য একগুচ্ছ নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ।
যখন কোরোনার জেরে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য আরও উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা, ঠিক সেই সময়ই আজ সাংবাদিক বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । মে মাসেই সরকার আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজে 21 লাখ কোটি ডলারের আর্থিক বরাদ্দ ঘোষণা করেছিল । অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, এই প্যাকেজ লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে আজ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আত্মনির্ভর প্যাকেজ 3.0 ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান ও আরও বেশি করে কর্মীনিয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
আত্মনির্ভর প্যাকেজ 3.0 : নজরে কর্মসংস্থান ও আবাসন
এম্প্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজ়েশনের (EPFO) আওতাভুক্ত কোনও সংস্থা যদি EPFO-র আওতাভুক্ত ছিলেন না এমন কোনও নতুন কর্মীকে নিয়োগ করে অথবা 1 মার্চ থেকে 30 সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন, এমন কোনও কর্মীকে নিয়োগ করে, তবে সেই সংস্থাগুলি আত্মনির্ভর রোজগার যোজনার সুবিধা পাবে । এই প্রকল্প 1 অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে, আগামী বছরের 30 জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে । তবে সেক্ষেত্রে কর্মীদের বেতন 15 হাজার টাকার কম হতে হবে ।
ছোটো সংস্থাগুলি যাদের মোট কর্মীসংখ্যা 50 জনের কম, তাদের কমপক্ষে 2 জন এমন কর্মীকে নিয়োগ করতে হবে । আর যেসব সংস্থার কর্মীসংখ্যা 50 জনের বেশি, তাদের কমপক্ষে 5 জন নতুন কর্মীকে নিয়োগ করতে হবে ।
সংস্থাগুলির উপর থেকে আর্থিক চাপ কমাতেও উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র । যে সংস্থাগুলিতে সর্বোচ্চ 1 হাজার জন কর্মী রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য যে 12 শতাংশ কর্মীদের দিতে হয় এবং যে 12 শতাংশ সংস্থাকে দিতে হয় সেই 24 শতাংশ গোটাটাই দেবে কেন্দ্র । যে সংস্থাগুলিতে 1 হাজার জনের বেশি কর্মী আছে, তাদের ক্ষেত্রে শুধু কর্মীদের 12 শতাংশের ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র । দুই বছর পর্যন্ত এই বিশেষ সুবিধা দেবে কেন্দ্র ।
পাশাপাশি যাঁরা প্রথমবার বাড়ি কিনছেন তাঁদের জন্যও আয়করে বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । আয়কর আইন অনুযায়ী, সার্কেল রেট এবং এগ্রিমেন্ট ভ্যালুর মধ্যে 10 শতাংশ পার্থক্য ছিল । এবার তা বাড়িয়ে 20 শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি । আয়কর আইনে এই সংক্রান্ত সংশোধনও করা হবে । তবে এক্ষেত্রে বাড়ির দাম হতে হবে সর্বোচ্চ 2 কোটি টাকা । এর ফলে দেশের মধ্যবিত্তরা অনেকটা লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি । আয়কর আইনের 56 (2) (x) ধারা অনুযায়ী, এই ক্ষেত্রে বাড়ির ক্রেতারা আয়করে সর্বোচ্চ 20 শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন । 2021 সালের 30 জুন পর্যন্ত এই ছাড় দেওয়া হবে ।
আর কী কী উঠে এল নির্মলা সীতারমনের সাংবাদিক বৈঠকে ?
- কোরোনা সুরক্ষা মিশনের গবেষণার জন্য ও ভ্যাকসিন তৈরির কাজের জন্য বায়োটেকনোলজি দপ্তরকে 900 কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ।
- 3 হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে EXIM ব্যাঙ্ককে ।
- গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনায় চলতি আর্থিক বছরে অতিরিক্ত 10 হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে ।
- ভর্তুকিযুক্ত সারের জন্য 65 হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে । এর মাধ্যমে 140 মিলিয়ন কৃষক উপকৃত হবেন ।
- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় চলতি আর্থিক বছরে অতিরিক্ত 18 হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্রা শহরাঞ্চলগুলির জন্য ।