নয়াদিল্লি, 8 সেপ্টেম্বর: সপ্তাহান্তে বহুল প্রত্যাশিত জি20 শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতের রাজধানীতে আসছেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই ৷ এই শীর্ষ সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক সমাবেশ, যেখানে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং খাদ্য ও শক্তির দামের উদ্বেগজনক ঊর্ধ্বগতি-সহ বহু বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে ৷ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অন্যান্য বিভিন্ন দেশের নেতারা ৷ বিশ্বব্যাপী কূটনীতি ও সহযোগিতার ক্ষেত্র হতে চলেছে এই জি20 ৷
নিশ্চিত যাঁরা অংশগ্রহণ করবেন: মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন জি20 শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন । তিনি একটি শক্তিশালী এজেন্ডা নিয়ে নয়াদিল্লিতে আসছেন ৷ ইউক্রেনের যুদ্ধের সামাজিক প্রতিক্রিয়া, পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে অপরিহার্য রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সক্ষমতাকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা করবেন তিনি ৷
মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের পাশাপাশি জি20 শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ৷ যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় আসার পর ভারতে তাঁর প্রথম সরকারি সফর করছেন । তাঁর উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, পারস্পরিক সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয় ভারত-ব্রিটেন, আর তাদের ভাগ করা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বর্তমানে জি7-এর চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকার নিন্দা করে আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন ৷ এই দৃঢ় অবস্থান শীর্ষ সম্মেলনের একটি প্রধান হাইলাইট হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইন্দোনেশিয়া সফরে থাকলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি জি20 শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন ৷ এতেই বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রতি কানাডাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ৷
আরও পড়ুন: জি20 শীর্ষ সম্মেলনে 15টির বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শুধু এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না, পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও অংশ নেবেন, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এশিয়া-প্যাসিফিক সহযোগিতার তাৎপর্যের উপর জোর দিয়ে ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্স-সহ তিন দেশের সফরের অংশ হবেন ।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ তাঁর প্রথম বড় আন্তর্জাতিক উপস্থিতিতে রাশিয়া এবং চিনের অনুপস্থিতিতেও জি20 শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন ৷
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি এবং ক্ষেপণাস্ত্র উস্কানিমূলক আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়ে সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে ।
এ ছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসা এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শীর্ষ সম্মেলনে তাঁদের দেশের প্রতিনিধিত্বকারী নেতাদের মধ্যে থাকবেন ।
যে উল্লেখযোগ্য নেতারা অনুপস্থিত থাকবেন: এই বছরের জি20 শীর্ষ সম্মেলনে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি সবার নজরে থাকবে । তাঁর পরিবর্তে, দ্য স্টেট কাউন্সিলের চিনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন । 2008 সালে জি20 শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোনও চিনা রাষ্ট্রপতি এই সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকছেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে ৷
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুপস্থিতিও লক্ষণীয় ৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) তাঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ৷ যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেমলিন ৷ এই আইনি পদক্ষেপের কারণে পুতিনের বিদেশ ভ্রমণে গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি । সেই কারণেই পুতিন দিল্লিতে আসছেন না বলে মনে করা হচ্ছে ৷ রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ নয়াদিল্লিতে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করবেন ।
আরও পড়ুন: কোভিড সংক্রমণ! জি20 শীর্ষ সম্মেলনে আসছেন না স্পেনের প্রেসিডেন্ট
স্পেনের রাষ্ট্রপতি পেদ্রো সানচেজ সম্প্রতি কোভিড-19-এর আক্রান্ত হয়েছেন ৷ মহামারী দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলির কারণে তিনি জি20 শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন না।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর এই বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
জি20-র সদস্য না হয়েও শীর্ষ সম্মেলনে যারা যোগ দিচ্ছে: বৃহত্তর আলোচনা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, ভারত জিG20-এর সদস্য নয় এমন দেশগুলির একাধিক নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, মিশর, মরিশাস, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী । শীর্ষ সম্মেলনে তাদের উপস্থিতি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলবে ৷
এ ছাড়াও রাষ্ট্রসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সক্রিয়ভাবে এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন ৷ বর্তমান বিশ্বের জটিল সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতামূলক পদ্ধতির উপর জোর দেবেন ।