নয়াদিল্লি, 9 জানুয়ারি: টানা চতুর্থবার এবং সবমিলিয়ে পঞ্চমবার পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন । বিশেষজ্ঞদের আশা, 2024 সাল অবশ্যই নয়াদিল্লি এবং ঢাকার সম্পর্ককে আরও উন্নীত করবে ৷ কারণ শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার সবসময়ই ভারতীয় সমস্যাগুলির প্রতি সংবেদনশীল ।
ইটিভি ভারতের সঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, "আওয়ামী লীগের জয় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়তে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা রাখবে । দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা বিজয় বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে অনিবার্য ছিল ।"
এই জয় বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতিও সচল রাখবে বলে তাঁর অভিমত । ফাহাদের কথায়, "যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই আওয়ামী লীগের এই বিপুল বিজয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে । শেখ হাসিনার এই জয় প্রতিটি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অগ্রগতিকে সুদূরপ্রসারী ভিত্তি দেবে ।"
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে 4,100 কিলোমিটার সীমান্ত এবং গভীর ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে । ভারতের স্বার্থেই প্রয়োজন বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং বন্ধুতা ৷ মজার বিষয় হল, ওপার বাংলায় দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনে ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে । বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিল ৷ শেখ হাসিনা সেই দাবিকে স্বীকৃতি না-দেওয়ার কারণে ভোটের হার কম । বিএনপি অবশ্য নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।
1996-2001 এবং তারপর 2009 সাল থেকে শেখ হাসিনার শাসনকালে নয়াদিল্লির নিরাপত্তা সংস্থা বাংলাদেশি সংস্থাগুলির কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছে এবং সেই দেশে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ দমন করার জন্য প্রকৃত প্রচেষ্টা করা হয়েছে ।
অধ্যাপক ফাহাদ আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ বা ভারত কেউই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকি নিতে পারে না, কারণ উভয় দেশের সীমান্ত, সংস্কৃতি, ইতিহাস ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত । ফাহাদের কথায়, "প্রতিটি দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে । আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ছিটমহল বিনিময় এবং গঙ্গা নদীর জল বণ্টনের মতো, সীমান্ত হত্যা, চোরাচালান এবং নদীর জল বণ্টন-সহ প্রতিটি দ্বিপাক্ষিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ উপায়ে সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে ৷"
বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে এমন অবস্থানে রয়েছে, যা চিন এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ ঐতিহ্যগতভাবে যাদের সঙ্গে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে ৷ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লির নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তাশীল । তারা এটা জানে যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করার মতো কিছু ঘটছে, ততক্ষণ তারা চিনের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে ।
অন্যদিকে, ভারত সবসময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সম্মান করে আসছে। বিদেশমন্ত্রক বারবার বলেছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন । বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অংশীদার হিসাবে, ভারত বলেছে যে, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে এবং স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জাতির দেশটির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে ।
এ দিকে, ব্যাপক জয়ের পর রবিবার বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন এবং ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান । এর আগে, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের দারুণ বন্ধু এবং দুই প্রতিবেশী বহু সমস্যার দ্বিপক্ষিকভাবে সমাধান করেছে । তিনি বলেন, "তারা 1971 সালে এবং 1975 সালেও আমাদের সমর্থন করেছে । তারা আমাকে এবং আমার বোনদের এবং আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আশ্রয় দিয়েছে ৷" হাসিনা আরও উল্লেখ করেন যে, আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সরকারের প্রধান ফোকাস হবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে ৷
আরও পড়ুন: