পাটনা (বিহার), 5 জুলাই : সংযুক্ত জনতা দলের (JDU) নেতৃত্বে বিহারে যে সরকার চলছে, তাকে ‘অযোগ্য’ বললেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব (Tejaswi Yadav) ৷ ইটিভি ভারতকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছেন তেজস্বী ৷ বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বীর অভিযোগ, নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা পেয়েছেন ৷
সোমবার ছিল রাষ্ট্রীয় জনতা দল বা আরজেডির (RJD) 25তম প্রতিষ্ঠা দিবস ৷ লালুপ্রসাদ যাদবের তৈরি করা দল এবার পড়ল রজতজয়ন্তী বর্ষে ৷ তার আগে লালু-পুত্র তেজস্বী বললেন, ‘‘নীতীশ বিহারের বিষয় নিয়ে চিন্তিত নন ৷ তিনি তাঁর নিজের জীবনের পরবর্তী অংশ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন ৷ তাঁর অবসরের জন্য আমার শুভেচ্ছা রয়েছে ৷ কিন্তু বিহারের (Bihar) মতো একটা তরুণ রাজ্যের দিকে তাঁর তাকানো উচিত ৷ আজ, মানুষ মৃল্যবৃদ্ধির বোঝা সামলাচ্ছে ৷ পেট্রলের (Petrol) দাম লিটার পিছু 100 টাকা পেরিয়ে গিয়েছে ৷ কৃষকরা হতাশ ৷ আর মধ্যসত্ত্বভোগীরা লাভ করছে ৷ ডাকাতি, ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে ৷’’
আরও পড়ুন : নিজের লোকেরাই বিশ্বাসঘাতক, বাবা রামবিলাসের জন্মদিনে মন্তব্য চিরাগের
যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁদের নীতিশ কুমার আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তেজস্বী যাদব ৷ তাঁর দাবি, ‘‘নীতীশ সংগঠিত দুর্নীতির পিতামহ ভীষ্ম ৷ তাঁর একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ৷ নীতীশের আমলে 70টি দুর্নীতি হয়েছে ৷ আজ পর্যন্ত তার একটাও তদন্ত হয়নি ৷ তাঁর শাসনকালে ভূতেও দুর্নীতি করছে ৷’’ ঘুষ ছাড়া বিহারে কোনও কাজ হয় না বলেই তাঁর দাবি ৷ তেজস্বীর বক্তব্য, তাঁর বাবা লালুপ্রসাদ যাদব যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই পরিস্থিতি ছিল না ৷
তিনি করোনা নিয়ে সংযুক্ত জনতা দল বা জেডিইউকে নিশানা করেছেন ৷ তাঁর অভিযোগ, নীতীশের সরকার করোনা পরিস্থিতি সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে ৷ শ্মশানে জায়গা নেই ৷ গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছে ৷ আর সরকারের কাছে কোনও খবর নেই ৷ প্রশাসনের অবস্থা চরম খারাপ ৷
আরও পড়ুন : Yogi Adityanath : কল্যাণ সিংকে সেরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে যোগীকে ফোন মোদির
একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন (Uttar Pradesh Assembly Election) ও 2024 সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়েও নিজের মত ব্যক্ত করেছেন ৷ উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে (BJP) হারানোর ক্ষমতা একমাত্র অখিলেশ যাদবের (Akhilesh Yadav) সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) আছে বলেই তিনি মনে করেন ৷ তবে তাঁর দল উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন ৷
অন্যদিকে কেন্দ্রে বিজেপিকে একমাত্র কংগ্রেসই (Congress) চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে তাঁর মত ৷ তাঁর ব্যাখ্যা, দেশের অত্যন্ত 200টি আসনে বিজেপি ও কংগ্রেসের মুখোমুখি লড়াই হবে ৷ তবে যে রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন আরজেডির এই তরুণ-তুর্কী ৷ আর এই নিয়ে সব দলকে মুখোমুখি বসে আলোচনা করার পক্ষেই তিনি মতপ্রকাশ করেছেন ৷
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডের সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ ধামির, শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
প্রসঙ্গত, দেশে মোদি জমানা শুরু হওয়ার পর বিহারেই প্রথম মহাজোট দেখা গিয়েছিল ৷ সেই মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ কুমার ৷ পরে নীতীশ জোট ছেড়ে বেরিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েন ৷ গত বছরের অক্টোবরে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন ৷ সেই জোট 125টি আসন পায় ৷ সেই জোটে বিজেপির থেকে কম আসন পেয়েও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন নীতীশ ৷ আর ভোটে সবচেয়ে বড় দল হয়েছে তেজস্বীর নেতৃত্বাধীন আরজেডি ৷ তারা 75টি আসনে জিতলেও তাদের জোট 110টি আসন পেয়েছে ৷ তাই তাদের বিরোধী আসনেই বসতে হচ্ছে ৷
বিহারের ওই বিধানসভা ভোটে বিজেপি-জেডিইউ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল লোক জনশক্তি পার্টিও ৷ দলের নেতা চিরাগ পাসোয়ান এনডিএ থেকে বেরিয়ে এসে একাই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৷ কিন্তু এখন সেই চিরাগ দলে কোণঠাসা ৷ তাঁর সব পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে ৷ দলের নিয়ন্ত্রণ এখন তাঁর কাকা পশুপতি কুমার পারসের হাতে ৷
আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রথমবার একজোট হলেন গুপকারের নেতারা
এই ইস্যুতে চিরাগের পাশে দাঁড়িয়েছেন তেজস্বী ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিরাগের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমবেদনা আছে ৷ আর লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) তাঁর দল ৷ এখন চিরাগকে সিদ্ধান্তকে নিতে হবে যে তিনি কাদের সঙ্গে থাকবেন ৷ যাঁরা সংবিধান ধ্বংস করল, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন নাকি যে মানুষগুলি বিআর আম্বেদকরের নীতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন ৷’’