নয়াদিল্লি : তিহার জেলের প্রাক্তন কর্তা সুনীল গুপ্ত বলেছিলেন, " 2020 সালে যখন করোনার প্রকোপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে, তখন জেলে বন্দির সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিক । জেলটিতে যত পরিমান বন্দি থাকতে পারে তার দেড় গুণ বেশি বন্দি সে সময় জেলের ভিতর ছিল । এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তিহার জেল থেকে প্রায় 6500 জনকে ধীরে ধীরে প্যারোলে বা অন্তবর্তী জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল । এর মধ্যে আবার 1184 জনকে তিহার জেল এবং দিল্লি পুলিশ জরুরি প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে । এই সময় বিচারাধীন 5556 জনকে সুপ্রিম কোর্ট আন্তবর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দিয়েছে । গত ডিসেম্বরের পর যখন কোভিড 19 -এর প্রভাব দিল্লিতে কমতে শুরু করেছিল, তখন বন্দিদের আত্মসমর্পন করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু, মাত্র 50 শতাংশ আপরাধী ফিরে এসেছে, বাকিরা কেউ ফেরেনি ।
সমস্ত বন্দিরা কোথায় গিয়েছিল ?
তিহার জেলার প্রাক্তন আইন কর্তা সুনীল গুপ্তের মতে, কারগার থেকে সকল বন্দিকে অন্তবর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল । এর মধ্যে ছোটখাটো চুরি থেকে শুরু করে খুনের অপরাধ যুক্তরাও ছিল । যাদের 45 দিনের অন্তবর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল । করোনা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি না হওয়ায় এই সময় বেশ কয়েক বার বাড়ানো হয়েছিল । তিনি আরও বলেন, সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তার থেকে স্পষ্ট বিপুল সংখ্যক বন্দি এখনও ফিরে আসেনি । এর তিনটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে । কয়েক জন বন্দি মুক্তি পেয়েছে বা জামিন পেয়েছে । কারও জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে । আবার কেউ এই জামিনের সুযোগে পালিয়েও যেতে পারে ।
এদের ধরা যেমন সহজ নয়, তেমন অপরাধ কমানোও কঠিন
দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন এসপি বেদ ভূষণ বলছেন, 3400 জন বন্দি যারা জেলে ফিরে আসেনি, তারা ফের অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে । কারাগারে আত্মসমর্পন না করা দেখেই বোঝা যায়, দিল্লি বা অন্য কোথাও অপরাধ মূলক কাজ করার জন্যই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বা পালিয়ে গিয়েছে । 2020 সালে যখন বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সে সময় চুরি, ছিনতাই লুটপাট ইত্যাদি ঘটনা গুলি বেশ কিছুটা কম ছিল । কিন্তু, এখন এই সব অপরাধী জেলে না ফেরার ফলে আবার দিল্লির রাস্তায় অপরাধের পরিমাণ বাড়বে । এর পাশাপাশি এদের ধরতে পারাও পুলিশের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ । রাজধানীতে করোনা সংক্রামণ ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে । সাম্প্রতিক সময় তিনশো পুলিশ কর্মী সংক্রমিত হয়েছেন । এই পরিস্থিতিতে তিন হাজারের বেশি বন্দিকে খুঁজে বের করা দিল্লি পুলিশের কাছে খুবই চ্যালেঞ্জের ।
আরও পড়ুন : হাওয়ায় সার্স-কোভ-2 সংক্রমণের 10টি প্রমাণ ল্যানসেটের বিশেষজ্ঞদের
তিহার জেলের ডিজি সন্দীপ গোয়েল জানিয়েছেন, তিহার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা বেশির ভাগই ফিরে এসেছে ৷ যারা ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের অনেকে এখনও ফিরে আসেনি ৷ তাদের মধ্যে অনেকে আবার আদালত থেকে অন্তবর্তী জামিনও পেয়েছে ৷ এদের সবার বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে দিল্লি পুলিশের কাছে জানানো হয়েছে ৷ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ৷
যারা এখনও জেলে ফেরত আসেনি, তারা জেলে না ফেরত এসে কতটা অপরাধ করল তার থেকেও বড় কথা এদের কেউ নিয়ম মানল না ৷ দিল্লিতে প্রতিনিয়ত অপরাধে সংখ্যা বাড়ছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে তিন হাজার কর্মীর অনুপস্থিত ৷ আর বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ কেন কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ করছে না, সে বিষয়টিও স্পষ্ট হচ্ছে না ৷
বন্দিদের বিষয়ে তিহার জেলের থেকে প্রকাশিত তথ্য
1)জরুরি প্যারোলে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দি - 1185
2)সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা জরুরি প্যরোল থেকে ফিরেছে --1073
3)সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা জরুরি প্যরোল থেকে পালিয়েছে --112
4)অন্তবর্তীকালীন জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত বিচারাধীন বন্দি --5556
5)বিচারাধীন বন্দিরা অন্তবর্তীকালীন জামিন থেকে কারাগারে ফিরেছে ― 2200
6)বিচারাধীন বন্দিরা অন্তবর্তীকালীন জামিন থেকে পালিয়েছে – 3356 (15 এপ্রিল পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে )
7)গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তরা অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছে – 2318
8)ক্ষুদ্র অপরাধে অভিযুক্তরা অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছে – 2907
9)হাইকোর্ট অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে-- 356 (20 অক্টোবর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে )
প্যরোল কী ভাবে পাওয়া যায়
যে কোনও কারাগারের বন্দি কারা প্রশাসনের কাছে প্যারোলের আবেদন করতে পারে ৷ আবেদনের সঙ্গে তাদের প্যারোলের কারণও জানাতে হবে ৷ বন্দিরা সাধারণত বিয়ে বা চিকিৎসার মতো কারণ দেখিয়ে প্যারোলের আবেদন জানিয়ে থাকে ৷ বন্দিদের আচরণের কথা মাথায় রেখে সেই আবেদন দিল্লি সরকারের কাছে পাঠায় জেল প্রশাসন ৷ যদি সরকার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে বন্দির আবেদন গ্রাহ্য হয় না ৷
জরুরিকালীন প্যারোল কী ?
তিহার জেলে জরুরিকালীন প্যারোলের বিধান আছে ৷ কোভিড 19 এর মতো জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে এই ধরনের প্যারেলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৷ জেল থেকে বাইরে থাকার সময়টা সাজা প্রাপ্তির সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয় ৷ সাধারণত, জরুরি প্যারোলের মেয়াদ 45 দিন হয়ে থাকে ৷ যদিও পরিস্থিতি বিচার করে এর সময়কাল বাড়ানো যেতে পারে ৷
কী ভাবে অন্তবর্তীকালীন জামিন পাওয়া যায়
অন্তবর্তীকালীন জামিন পাওয়ার জন্য যে কোনও বন্দিকে আদালতে আবেদন করতে হয় ৷ কেন অন্তবর্তীকালীন জামিনের আবেদন করছে সে, সে কথা আদালতের কাছে বিস্তারিত ভাবে জানাতে হয় ৷ আবেদনের শুননি শেষে আদালন সিদ্ধান্ত নেয় অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জর করা হবে কি না ৷
কারা বন্দিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ?
তিহার জেলের প্রাক্তন আইন কর্তা সুনীল গুপ্ত ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, তিহার জেলের নিখোঁজ বন্দিদের বিষয়ে দিল্লি পুলিশকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে ৷ দিল্লি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ৷ শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে ৷ গ্রেফতারের পর তাদের আদালতে হাজির কারানো হবে ৷ তার পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হবে ৷ বন্দিদের কঠোর শাস্তিও হতে পারে ৷ ভবিষ্যতে এই সকল বন্দিদের প্যারোলের কোনও আবেদন মানা হবে না, তা যে কোনও কারণেই হোক না কেন ৷