পূর্ব গোদাবরী (অন্ধ্রপ্রদেশ), 27 ডিসেম্বর: মেয়ে প্রথম জন্ম দেয় কন্যার ৷ তা মেনে নিতে পারেনি মেয়ের মা ৷ তাই মেয়েকে বুঝিয়ে দিদা ওই সদ্যোজাত কন্যাকে বাড়ির পাশে থাকা একটি কুয়োয় জীবন্ত অবস্থায় ফেলে দেয়। এরপর শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার ৷ এই ঘটনায় শিশুটির মা ও তার দিদাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড-সহ জরিমানা করে আদালত ৷ মঙ্গলবার রাজামহেন্দ্রভার পারিবারিক আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালত ও নবম অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক এম মাধুরী এই রায় দেন ৷
ঘটনাক্রমে জানা যায়, সীতানগরম মণ্ডলের চিনকোন্দেপুডির শহরতলির বাসিন্দা কোথুরের খোনা সরুজানা (21) একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। সরুজানার মেয়ে হোক তা চায়নি মা গণ্ডম কানাকারত্নম। সরুজানার দিদারও আপত্তি ছিল এই বিষয়ে। সেও দুধের শিশুটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় যোগ দেয়। তদন্তকারীদের দাবি, 2020 সালের 19 জুন এই তিনজন 15 দিন বয়সি কন্যাসন্তানটিকে বাড়ির পাশের কুয়োয় ফেলে দেয়। পরে এই তিনজন থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তাদের দাবি ছিল, কিছু আততায়ী ভোরে সবার আড়ালে শিশুটিকে অপহরণ করেছে। পুলিশ আধিকারিক পবনকুমার রেড্ডি এবং এসএসআই শুভশেখরের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়।
কুয়োর আশপাশে পুলিশ টহল দিলে শিশুকন্যার লাশ উদ্ধার হয়। তদন্ত আরও এগোনোর পর বাড়ির এই তিন মহিলার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তদন্তকারীদের মনে। তাদের কথায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। স্বভাবতই এই তিনজনের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। একটা সময় পুলিশ বুঝতে পারে শিশুকন্যাকে অপহরণ করাই হয়নি, খুন করা হয়েছে। নিজের দিদা ও মায়ের সাহায্য নিয়ে শিশুকে নির্মমভাবে খুন করেছে মা।
আরও পরে জানা যায়, বাড়ির পুরুষরা ঘুমিয়ে পড়ার পর মধ্যরাতে তিনজনে মিলে শিশুটিকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিল। এরপর সকাল থেকেই তারা দাবি করতে থাকে ভোরে কেউ শিশুকে অপহরণ করেছে। এ কথা বিশ্বাস করেই পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। পরে পরিবারের সদস্যদেরই গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পরে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। মামলার তদন্ত চলাকালীন সরুজানার দিদার মৃত্যু হয়। শেষমেশ বিচারক মাধুরী শিশুটির মা সরুজানা ও তার মা মল্লিরেড্ডি মহালক্ষ্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অপরাধ গোপনের জন্য অতিরিক্ত এক বছরের কারাদণ্ড-সহ 18 হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আরও পড়ুন: