নয়াদিল্লি, 6 জুলাই: রাহুল গান্ধি লোকসভার সদস্যপদ কি ফিরে পাবেন ? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরে ৷ কংগ্রেস যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে তাও দলের শীর্ষ নেতাদের আচরণ থেকেই স্পষ্ট ৷ ওয়াইনাড থেকে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ কিন্তু মোদি পদবি মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের পর গত 24 মার্চ রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হয় ৷ গত 23 মার্চ সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মোদি উপাধি সংক্রান্ত 2019-এর ফৌজদারি মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল ৷ একই সঙ্গে, তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ডেরও নির্দেশ দেয়। এরপরই রাহুলের সাংসদ পদ নিয়ে কড়া অবস্থান নেন লোকসভার অধ্যক্ষ ৷
সাংসদ পদ হারানোর কয়েক দিনের মধ্যে রাহুল গান্ধিকে লোকসভা হাউজিং কমিটির তরফ থেকেও নোটিশ পাঠানো হয় ৷ 2004 সাল থেকে তাঁর বরাদ্দে থাকা 12, তুঘলক লেনের অফিসিয়াল বাংলোটি খালি করতেও বলা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির কারাদণ্ডের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ এরপরই দলের নেতারা আশা করছেন, তাঁর লোকসভার সদস্যপদ ফের ফেরৎ দেওয়া উচিত ৷ যাতে রাহুল আগামী সপ্তাহে অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে অংশ নিতে পারেন ৷ সেই মর্মে লোকসভার অধ্যক্ষকে চিঠিও দেবেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী ৷ তবে রাজনৈতিক কারণে রাহুলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে আরও কিছুটা বিলম্বিত করা হতে পারে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷
কংগ্রেস নেতাদের মতে, কিছু বিশেষজ্ঞ বা আইন মন্ত্রকের মতামত চাওয়ার অজুহাতে বিলম্ব করানো হতে পারে ৷ কারণ বিজেপি ইতিমধ্য়েই বলেছে, যে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ চূড়ান্ত ছিল না ৷ কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “আদালত ও ন্যায়বিচারের প্রতি যেমন আমাদের আস্থা আছে, তেমনি গণতন্ত্রেও আমাদের আস্থা আছে। সেই আশা আর ভরসা রেখেই আমরা আরও কয়েকদিন ধরে দেখবো কী হয়। শেষ পর্যন্ত, যদি এটিকে প্রতারিত করা হয় এবং বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, তবে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের একমাত্র বিকল্প বিচার ব্যবস্থা ৷ বিচার ব্য়বস্থার উপর বিশ্বাস রাখা, আইন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে, আমাদের আবার আদালতে যেতে হবে ৷” প্রযুক্তিগতভাবে, রাহুলের সদস্যপদ পুনরুদ্ধার করতে হবে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকেই ৷ কিন্তু বিজেপির মতো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া তা যে হবে না, সেটাই কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: 'দুর্নীতি-পরিবারবাদ ইন্ডিয়া ছাড়ো', ঘুরপথে বিরোধীদের তোপ মোদির
আইসিসি সাধারণ সম্পাদক রজনী পাটিল বলেন, “রাহুলজির অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কের সময় লোকসভায় থাকা উচিৎ ৷ কিন্তু আমি জানি না, তা হবে কি না। সদস্যপদ পুনরুদ্ধার নিয়ম অনুসারে দ্রুত হওয়া উচিৎ ৷ তবে বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গিতে তা আদৌ কতটা সম্ভব তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে ৷ ওরা অনেক নিয়ম দেখাবে এখন ৷” লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মতে, রাহুলের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং দুই বছরের সাজা, যা তাঁর সংসদের সদস্যপদ কেড়ে নিয়েছে ৷ আদানি প্রসঙ্গে রাহুল লোকসভায় সরব হওয়ার পরই তাঁর এই পরিণতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অধীর চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "আমরা সংসদে আমাদের প্রিয় নেতার অভাব অনুভব করছিলাম। আমরা চাই তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদে ফিরে আসুক। আমরা চাই তিনি আগামী সপ্তাহে অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কের সময় কথা বলুন। সোমবার তাঁর সদস্যপদ পুনরুদ্ধার করা উচিত। আর একবার বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, তিনি ফের একটি সরকারী বাংলো-সহ অন্যান্য অধিকার ফিরে পাবেন ৷”
বহরমপুরের সাংসদ বলেন, “রাহুল বিরোধী জোটের নেতা হিসাবে উঠে এসেছেন ৷ যিনি সংসদে জনগণের সমস্যা তুলে ধরেন। সরকারকে প্রশ্ন করায় বিজেপি চিন্তিত কিন্তু আমাদের নেতা নির্ভীক। প্রধানমন্ত্রী মণিপুর সংকট নিয়ে কিছু বলছেন না বলে আমাদের অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সেখানে শান্তির আবেদন রাখা উঠিত ছিল। পরিবর্তে রাহুলজিকে তা করতে হয়েছিল ৷”