নয়াদিল্লি, 23 নভেম্বর: শুধু মেরুপ্রদেশে নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ফেলছে হিমালয় পর্বতমালার উপরেও (Climate Change Affects Himalayas) । জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক পাতের আনাগোনার (Tectonic Plates' Movement) ফলে হিমালয় পর্বতমালা এবং সংলগ্ন এলাকায় হিমবাহের গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানালেন বিজ্ঞানীরা । উপগ্রহ চিত্র (Satellite Images of Himalayas) এবং গুগল আর্থ ইমেজেও এই স্থান পরিবর্তন স্পষ্ট বলে দাবি তাঁদের ।
হিমালয় পর্বতমালা এবং সংলগ্ন এলাকায় হিমবাহের গতিপথ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে গবেষণা করছিলেন দেহরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিয়োলজি-র বিজ্ঞানীরা । সম্প্রতি জিয়োসায়েন্স জার্নাল-এ তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে । তাতে বলা হয়েছে, উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে জেলায় কালি গঙ্গা উপত্যকায় নামহীন একটি হিমবাহের গতিপথ আচমকাই বদলে গিয়েছে ।
যে নামহীন হিমবাহটির গতিপথ বদলের ছবি সামনে এসেছে, সেটি 5 কিলোমিটার দীর্ঘ । কুটি ইয়াংতি উপত্যকার 4 স্কোয়্যার কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত । এর উত্তর-পূর্বের অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ধরে এগোতে শুরু করে । টেকটোনিক পাতের আনাগোনার ফলে সেটি সুমজুরচাঙ্কি হিমবাহের সঙ্গে মিশে যেতে চলেছে ।
আরও পড়ুন: Chandrayaan-2 : চাঁদে জলের কণা ? চন্দ্রযান-2-এর জোগাড় করা তথ্যে মিলল ইঙ্গিত
হিমবাহের গতিপথ বদলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক পাতের আনাগোনার ফলেই হিমবাহের গতিপথ বদল হয়েছে । এর আগে 7 ফেব্রুয়ারি চামোলিতে হিমবাহ ধসে চাপা পড়ে যে 200-বেশি মানুষ মারা যান । পাহারের ঢাল থেকে পাথর সমেত বরফের চাঙড় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে । সেই সময় রন্তি শৃঙ্গের উপর হিমবাহের গতিপথ বদলের ইঙ্গিত মিলেছিল ।
ফেব্রুয়ারি মাসে ওই হিমবাহ ধসের ফলে শক্তিশালী বায়ু বিস্ফোরণ ঘটে, যার প্রভাবে পর্বতশৃঙ্গের নীচে 20 হেক্টর জঙ্গল সমতলে পরিণত হয় । সেই সময় বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দেন, আবহাওয়া উষ্ণ হওয়ায় শৃঙ্গের উপর জমা বরফ গলতে শুরু করে । পাথরের খাঁজে খাঁজে জমতে শুরু করে বরফ গলা জল । তাপমাত্রা কমলে আবার খাঁজের মধ্যেই বরফ হয়ে জমে যায় । তাতে ফাটল ধরতে শুরু করে পাথরে । তুষারপাতের ফলে বরফের ওজন আরও বাড়ে । কিন্তু টেকটোনিক পাতের যাতায়াতে শৃঙ্গের নীচের পাথর আলগা হয়ে আসে । এ সবের ভার বইতে না পেরেই বরফের চাঙড় সমেত পর্বতের একাংশ ভেঙে পড়ে বলে সেই সময় জানান বিজ্ঞানীরা ।
তাতেই নয়া গবেষণায় হিমবাহের গতিপথ বদলের দাবি উঠে আসায় তাই আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে । কারণ বিজ্ঞানীদের দাবি, হিমালয় পর্বতশৃঙ্গ জীবন্ত । কিন্তু টেকটোনিক পাতের আনাগোনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, এই দুইয়ের ফলে শৃঙ্গগুলি ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে । তাতেই যখন তখন বিপর্যয় নেমে আসতে পারে ।
আরও পড়ুন: মঙ্গলের মাটি একসঙ্গে শুকিয়ে যায়নি, দাবি গবেষণায়
বিজ্ঞানীদের এমন আশঙ্কা নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় । তাতে বলা হয়, ‘হিমবাহের এ এক আশ্চর্য আচরণ, আগে যা কখনও চোখে পড়েনি ৷ গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনই সর্বাংশে দায়ী নয়, বরং হিমালায় জীবন্ত পর্বতমালা হওয়ায় টেকটোনিক পাতের আনাগোনাও বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ৷’’