সাধারণত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদেরই ভূয়সী প্রশংসা করা হয়, নার্সদের একপাশে সরিয়ে রাখা হয়, যা একেবারেই ঠিক নয় । ডাক্তার নিশ্চয়ই রোগীর চিকিৎসা করেন, কিন্তু নার্সরা রোগীর পাশে চব্বিশ ঘণ্টা থাকেন। তাই তাঁদের সম্মান জানাতে প্রতিবছর 12 মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয় । এই দিনটিই হল ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন ৷ যিনি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত । ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় নার্সদের ম্যানেজারল ও প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন ।
এবছরের থিম হল, ‘আ ভয়েজ টু লিড – আ ভিশন ফর ফিউচার হেলথকেয়ার।’ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস (আইসিএন)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “2021 সালে আমরা দেখাতে চাই যে ভবিষ্যতের নার্সিং কেমন হবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবাও কীভাবে পরিবর্তিত হতে চলেছে ।”
নার্সিং কী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যাখা, "নার্সিংয়ের মধ্যে পড়ে একক বা যৌথভাবে সমস্ত বয়সের ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের যত্ন করা । এর মধ্যে রয়েছে সুস্বাস্থ্যকে উৎসাহিত করা, রোগ প্রতিরোধ এবং অসুস্থ, অক্ষম ও মৃতপ্রায় মানুষের যত্ন । স্বাস্থ্য পরিষেবার নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং আপৎকালীন ক্ষেত্রে প্রায়শই তাঁরা অঘোষিত নায়কের ভূমিকা নেন । প্রায়শই তাঁরা সবার প্রথমে জরুরিভিত্তিক পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করেন এবং রোগ প্রতিরোধ আর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামনের সারিতে থেকে কাজ করেন । বহু দেশে নার্সরাই স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পেশাদারদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যায় থাকেন এবং কীভাবে পরিষেবা প্রয়োগ করা হবে, তার ব্যবস্থাপনা ও সামনের সারিতে থেকে রূপায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।"
কোভিড পরিস্থিতিতে নার্সরা
গোটা বিশ্বে এখন নার্সদের সংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে । আইসিএনের তথ্য অনুযায়ী, গোটা পৃথিবীতে প্রতি 6 জন নার্সদের একজন আগামী দশ বছরে অবসর নেবেন । অর্থ, 4.7 মিলিয়ন নার্সকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে । নার্সের সংখ্যায় ঘাটতি এবং কোভিড পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আইসিএনের অনুমান, বিশ্বজুড়ে ঘাটতি মেটাতে আগামী দিনে 13 মিলিয়ন নার্সের প্রয়োজন হবে ।
আরও পড়ুন, ভারতের আবার উত্থান : চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ
চলতি বছরেও যখন মহামারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে, তখন ডাক্তারদের পাশাপাশি নার্সরাও যথেষ্ট অবদান রাখছেন এবং গোটা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছেন । তাঁরা আক্রান্ত, ক্লান্ত এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও হাল ছাড়েননি । প্রতিদিন নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও দেশের মানুষের সেবায় তাঁরা অটল ।
নার্সদের ছাড়া কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই জেতা কঠিন । সবাইকে অবাক করে নার্সরা একজোট হয়েছেন এবং তাঁরা শুধু তাঁদের নির্দিষ্ট কাজের মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ রাখছেন না । তাঁরা নাচ-গানের মধ্যে দিয়ে রোগীদের মনোবল বাড়াচ্ছেন । অন্ধকার সময়ে হাসপাতালের পরিবেশকে আলোকিত করে তুলছেন ।
তাই আসুন এই যোদ্ধাদের কুর্নিশ জানাই, যাঁরা বেতন না বাড়লেও ওভারটাইমে খাটছেন, পেশার মর্যাদা রাখতে নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন যাতে তাঁদের দেশের মানুষের জীবন বাঁচে । নিজেদের শরীর-মনের যত্নের দিকে না তাকিয়ে তাঁরা দিনরাত খাটছেন কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের লক্ষ্যে । আসুন, আমরা তাঁদের ভালর জন্য প্রার্থনা করি এবং আশা করি, যাতে এই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয় ।