আহমেদাবাদ (গুজরাত), 26 নভেম্বর: প্রথম ধাপের ভোটদান পর্ব যত এগিয়ে আসছে, ততই গুজরাতে প্রচারের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷ আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা ৷ তারপরই গুজরাতে শুরু হয়ে যাবে বিধানসভার মহারণ (Gujarat Assembly Election 2022) ৷ প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ হবে আগামী 1 ডিসেম্বর ৷ ওই দিন সব মিলিয়ে মোট 89টি আসনে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটদাতারা ৷ তার আগে কোমর বেঁধে প্রচারের ময়দানে নেমেছে আপ (AAP), কংগ্রেস (Congress)-সহ অন্যরা ৷ পিছিয়ে নেই শাসক বিজেপি (BJP)-ও ৷
এখনও পর্যন্ত গুজরাতের নির্বাচনী প্রচারে নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক ইস্যুকে বড় হয়ে উঠতে দেখা যায়নি ৷ শাসক গেরুয়া শিবির জোর দিচ্ছে তাদের 'ডাবল ইঞ্জিন সরকার' (Double Engine Government)-এর তত্ত্বে ৷ বিজেপি-এর সাফ কথা, বর্তমানে কেন্দ্রেও তাদের নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে ৷ এই প্রেক্ষাপটে গুজরাতে আবারও একবার বিজেপি যদি সরকার গড়ে, তাহলে রাজ্য়ের উন্নতির গতি কেউ আর ঠেকাতে পারবে না ! অন্যদিকে, বিরোধীদের বক্তব্য হল, বিজেপি মুখে যাই দাবি করুক, গুজরাতের উন্নয়ন আসলে একটা ভাঁওতা ৷ অঞ্চলভিত্তিক কিছু উন্নতিকে শিখণ্ডী করে বিজেপি সরকার আদতে রাজ্যের সামগ্রিক অনুন্নয়ন ও বৈষম্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে ৷ আর এটাই বিজেপি সরকারের সবথেকে বড় 'ব্যর্থতা' ৷
আরও পড়ুন: বরাবর এই আসনের প্রার্থীরা বড় পদ পেয়েছেন সরকারে, হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও
এই মুহূর্তে গুজরাতে বিজেপি-এর অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে এসেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) আম আদমি পার্টি (Aam Aadmi Party) বা আপ (AAP) ৷ তাদের হাতিয়ার দিল্লির উন্নয়ন এবং পঞ্জাবের পালাবদল ৷ আপ-এর প্রতিশ্রুতি হল, তারা যদি গুজরাতের ক্ষমতায় আসে, তাহলে উন্নয়নের সুফল প্রতিটা প্রান্তের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে পৌঁছে যাবে ৷ সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে দিল্লি ও পঞ্জাবে আপ সরকার যে 'মহল্লা ক্লিনিক' তৈরি করেছে, তা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ও সুনাম কুড়িয়েছে ৷ সরকারে এলে আগামী দিনে গুজরাতেও এই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন দলের তারকা প্রচারকরা ৷ দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে ৷ এমনকী তা নিয়ে বিদেশি পত্র-পত্রিকায় লেখালিখিও হয়েছে ৷ যদিও তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি ৷ তা সত্ত্বেও আপ-এর আশ্বাস, গুজরাতে সরকার গঠন করতে পারলে আগামী দিনে পশ্চিমের এই রাজ্য়ের প্রত্যন্ততম প্রান্তগুলিতেও উন্নতমানের সরকারি স্কুল তৈরি করা হবে ৷ এর জবাবে সম্প্রতি গান্ধিনগরে 'স্কুল অফ এক্সিলেন্স' উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ৷
আপ-এর অভিযোগ, গুজরাতে বিদ্য়ুতের ইউনিটপিছু দাম অত্যন্ত বেশি ৷ আর বিজেপি-এর জবাব, সারা দেশের মধ্য়ে দিল্লিতেই সবথেকে বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ খরচ করা হয় ৷ এদিকে, সম্প্রতি গুজরাতে সেতু বিপর্যয়ের জেরে 135 জনের মৃত্যু হয় ৷ নির্বাচনী প্রচারে এই ঘটনা নিয়েও কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে ৷ এছাড়াও সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা গুজরাত সরকারকে বিব্রত করেছে ৷ যদিও রাজ্য সরকারের দাবি, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ ৷
এরইসঙ্গে, ভোটের প্রচারে সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন-সহ রাজ্যের নিরিখে কৃষকদের 'দুরবস্থা' নিয়েও সুর চড়াচ্ছেন আপ ও কংগ্রেস নেতারা ৷ অভিযোগ, পালটা অভিযোগের পালা চলছে দুর্নীতি এবং বিজেপি নেতাদের ক্রমশ বেড়ে চলা সম্পদের খতিয়ান নিয়ে ৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল, এভাবে কি আদৌ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে পারবে বিরোধীরা ? কারণ, তাদের সকলের উদ্দেশ্য গুজরাতের মসনদ থেকে বিজেপি-কে উচ্ছেদ করা হলেও বিরোধীদের মধ্যে সেই অর্থে কোনও ঐক্য নেই ৷ বরং পারস্পরিক দোষারোপের নজির রয়েছে ৷ এই অবস্থায় আদৌ কি বিজেপি-কে তার 'গড়' থেকে টলানো সম্ভব ? প্রশ্ন উঠছেই ৷