নয়াদিল্লি, 1 জুন : শেষ রক্ষা আর হল না ৷ বাবাকে বাঁচাতে সাইকেলে 1200 কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল বিহারের কিশোরী ৷ সেবার বাবাকে মৃত্য়ুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও, সেই ঘটনার প্রায় এক বছর পর পিতৃহীন হতে হল জ্যোতি কুমারীকে ৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল তার বাবার ৷
গত বছর মার্চ মাসের ঘটনা ৷ করোনার দাপটে রাশ টানতে দেশজুড়ে সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার ৷ সেই সময় গুরুগ্রামে থাকতেন আদতে বিহারের বাসিন্দা মোহন পাসওয়ান ৷ পেশায় ই-রিকশার চালক মোহন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন ৷ চিকিৎসক তাঁকে বাড়িতেই বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন ৷ অনটনের সংসারে যা অভিশাপের থেকে কম কিছু নয় ৷ এরই মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কোভিড ভাইরাস ৷ সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে শুরু হয় লকডাউন ৷
এদিকে, অসুস্থ বাবাকে দেখতে তার আগেই গুরুগ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল 15 বছরের জ্যোতি ৷ সে বুঝতে পারে বাবাকে সুস্থ করতে হলে বাড়ি ফেরাটা জরুরি ৷ কিন্তু লকডাউনে গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ ৷ পকেটের এমন জোরও নেই যে বাড়তি কড়ি গুণে কোনও ব্যবস্থা করা যাবে ৷ এই অবস্থায় সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় বছর পনেরোর কিশোরী ৷ অসুস্থ বাবাকে পিছনে বসিয়ে সাইকেলেই গুরুগ্রাম থেকে বিহারের দ্বারভাঙা ফেরে সে ৷ অক্লান্ত পরিশ্রমে পেরিয়ে যায় 1200 কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ ! তার এই হার না মানা মনোভাব নজর কাড়ে গোটা দেশের ৷ সকলেই জ্যোতির সাহস আর প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানান ৷ লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশার প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠে বিহারের এক অখ্যাত নাবালিকা ৷
আরও পড়ুন : সাইকেলে 1200 কিলোমিটার পথ পাড়ি, জ্যোতি কুমারীকে ট্রায়ালের জন্য ডাকল CFI
এই ঘটনার পর জ্যোতিকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল্য পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ তাকে বিনামূল্যে টিউশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন Super 30-খ্যাত আনন্দ কুমার ৷ বিহারের লোক জনশক্তি পার্টি এবং উত্তরপ্রদেশের সমাজাবাদী পার্টির তরফেও জ্যোতির পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৷ মেয়ের এই কৃতিত্বে সেদিন গর্বে বুক ভরে উঠেছিল হতদরিদ্র মোহনের ৷ তাঁর আশা ছিল, জ্যোতি বড় হলে হয়তো সংসারে অনটন ঘুচবে ৷ বাবার সেই স্বপ্ন জ্যোতি হয়তো পূরণও করবে একদিন ৷ কিন্তু সেদিন তার সাফল্যে শরিক হওয়ার জন্য বাবাকে আর পাশে পাবে না সে ৷